প্রতীকী ছবি

সূরা বুরুজ পবিত্র কোরআনের ৮৫ নম্বর সূরা। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও পবিত্র কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত। এর আয়াত সংখ্যা ২২।

সূরা বুরুজ

وَالسَّمَآءِ ذَاتِ الۡبُرُوۡجِ ۙ ١ وَالۡیَوۡمِ الۡمَوۡعُوۡدِ ۙ ٢ وَشَاہِدٍ وَّمَشۡہُوۡدٍ ؕ ٣ قُتِلَ اَصۡحٰبُ الۡاُخۡدُوۡدِ ۙ ٤ النَّارِ ذَاتِ الۡوَقُوۡدِ ۙ ٥ اِذۡ ہُمۡ عَلَیۡہَا قُعُوۡدٌ ۙ ٦ وَّہُمۡ عَلٰی مَا یَفۡعَلُوۡنَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ شُہُوۡدٌ ؕ ٧ وَمَا نَقَمُوۡا مِنۡہُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡا بِاللّٰہِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ۙ ٨ الَّذِیۡ لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ  وَاللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ ؕ ٩ اِنَّ الَّذِیۡنَ فَتَنُوا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَتُوۡبُوۡا فَلَہُمۡ عَذَابُ جَہَنَّمَ وَلَہُمۡ عَذَابُ الۡحَرِیۡقِ ؕ ١۰ اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَہُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۬ؕؑ  ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡکَبِیۡرُ ؕ ١١ اِنَّ بَطۡشَ رَبِّکَ لَشَدِیۡدٌ ؕ ١٢ اِنَّہٗ ہُوَ یُبۡدِئُ وَیُعِیۡدُ ۚ ١٣ وَہُوَ الۡغَفُوۡرُ الۡوَدُوۡدُ ۙ ١٤ ذُو الۡعَرۡشِ الۡمَجِیۡدُ ۙ ١٥ فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیۡدُ ؕ ١٦ ہَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ الۡجُنُوۡدِ ۙ ١٧ فِرۡعَوۡنَ وَثَمُوۡدَ ؕ ١٨ بَلِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِیۡ تَکۡذِیۡبٍ ۙ ١٩ وَّاللّٰہُ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ مُّحِیۡطٌ ۚ ٢۰ بَلۡ ہُوَ قُرۡاٰنٌ مَّجِیۡدٌ ۙ ٢١ فِیۡ لَوۡحٍ مَّحۡفُوۡظٍ ٪ ٢٢

সূরা বুরুজ বাংলা অর্থ : 

শপথ গ্রহ-নক্ষত্র শোভিত আকাশের। এবং সেই দিনের, যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এবং যে উপস্থিত হয় তার এবং যার নিকট উপস্থিত হয় তার। ধ্বংস করা হয়েছিল গর্ত-ওয়ালাদেরকে। ইন্ধনপূর্ণ আগুন-ওয়ালাদেরকে। যখন তারা তার পাশে বসা ছিল। এবং মুমিনদের সাথে তারা যা করছিল, তা প্রত্যক্ষ করছিল। আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এ কারণে যে, তারা ঈমান এনেছিল পরাক্রমশালী ও প্রশংসার যোগ্য আল্লাহর উপর। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব যার মুঠোয় এবং আল্লাহ সমস্ত কিছু দেখছেন।

নিশ্চয়ই যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে নির্যাতন করেছে, তারপর তাওবাও করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি এবং তাদেরকে আগুনে জ্বলার শাস্তি দেওয়া হবে। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য আছে এমন উদ্যান, যার নিচে নহর প্রবাহিত। এটাই মহা সাফল্য। প্রকৃতপক্ষে তোমার প্রতিপালকের ধরা বড়ই কঠিন।

তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন এবং তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি প্রেমময়। আরশের মালিক, সম্মানিত। যা-কিছু ইচ্ছা করেন, তা করে ফেলেন। তোমার কাছে কি পৌঁছেছে সেই বাহিনীর সংবাদ। ফিরাউন ও ছামুদ (-এর বাহিনী)-এর? তা সত্ত্বেও কাফেরগণ সত্য প্রত্যাখ্যানে রত। অথচ আল্লাহ তাদেরকে তাদের পেছনে থেকে বেষ্টন করে রেখেছেন। (তাদের প্রত্যাখ্যানে কোরআনের কোন ক্ষতি হয় না) বরং এটা অতি সম্মানিত কোরআন। যা লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ।

সূরা বুরুজে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

এই সূরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা প্রথমে চারটি বস্তুর শপথ করেছেন। ১. বুরুজবিশিষ্ট আকাশের; ২. কেয়ামত দিবসের; ৩. আরাফার দিনের এবং ৪. শুক্রবারের। এসব শপথের সম্পর্ক এই যে, এগুলো আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ শক্তি, কিয়ামতের হিসাব-নিকাশ এবং শাস্তি ও প্রতিদানের দলীল। শুক্রবার ও আরাফার দিন মুসলিমদের জন্যে আখেরাতের পুঁজি সংগ্রহের পবিত্ৰ দিন।

এরপর আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী যুগের একটি জাতির কথা তুলে ধরেছেন, যারা বড় বড় গর্তের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে ঈমানদারদেরকে তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল এবং তাদের জ্বলে পুড়ে মরার বীভৎস দৃশ্য নিজেদের চোখে দেখেছিল তাদেরকে এখানে গর্তওয়ালা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের ওপর আল্লাহর লানত পড়েছিল এবং তারা আল্লাহর আযাবের অধিকারী হয়েছিল।

এই ঈমানদার মানুষদেরকে তারা শুধু এই কারণেই আগুনে নিক্ষেপ করে মেরেছিল যে, তারা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছিল। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ঘটনা সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

মুমিনদের আগুনে নিক্ষেপ করা অত্যাচারী কাফেরদের শাস্তি বর্ণিত হয়েছে, যারা মুমিনদেরকে কেবল ঈমানের কারণে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। শাস্তি প্রসঙ্গে দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে— ১. তাদের জন্যে আখেরাতে জাহান্নামের আযাব রয়েছে, ২. তাদের জন্যে দহন যন্ত্রণা রয়েছে।

কাফেরদের শাস্তির বর্ণনার পর মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলকে মিথ্যা ভেবেছিল এবং তার আদেশ লঙ্ঘন করেছিল, যখন আল্লাহ এই সমস্ত শত্রুদেরকে পাকড়াও করলেন তখন তার পাকড়াও হতে কেউ পরিত্রাণ পেল না।

এরপর আল্লাহর গুণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে, তিনিই নিজ পূর্ণ শক্তি ও কুদরত দ্বারা প্রথমবার সৃষ্টি করেন এবং কিয়ামতের দিন পুনর্বার ঠিক সেভাবেই সৃষ্টি করবেন যেভাবে তিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, প্রেমময়। বলা হয়েছে, আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টি হতে সুমহান এবং সুউচ্চ। ‘আরশ’ যা সব থেকে উচ্চে অবস্থিত, যার উপরে আল্লাহ আছেন। তিনি যা চান তা বাস্তবে করে থাকেন। তার আদেশ ও চাহিদাকে রুখার সাধ্য কারো নেই। আর না কেউ তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার ক্ষমতা রাখে।

নিজের গুণ বর্ণনার পর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তাদের উপর যখন আল্লাহর আজাব এলো এবং তাদেরকে আল্লাহ নিজের কবলে করে নিলেন; তখন তা কেউ টলাতে পারেনি। ফিরাউন ও সামূদ জাতির কথা তুলে ধরেছেন। বলেছেন এতোসব কিছুর পরও কাফেরেরা মিথ্যারোপ করে অথচ আল্লাহ তাদেরকে সবদিক থেকে বেষ্টন করে রেখেছেন।

বলা হয়েছে, কাফিররা অমান্য করলেও এ কোরআনের কোনই ক্ষতি হবে না। তা লাউহে মাহ্ফূযে লিপিবদ্ধ আছে। যেখানে ফিরিশতাগণ তার সংরক্ষণের জন্য নিযুক্ত আছেন। আল্লাহ তায়ালা প্রয়োজন ও চাহিদানুযায়ী তা অবতীর্ণ করেছেন।

এনটি