সাহায্যপ্রার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয় যে কারণে
সমাজের উচ্চবিত্ত ও ধনী মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে আসেন গরিব ও অসহায় মানুষেরা। সামর্থ্য অনুয়াযী তাদের দান-সদকা করা ও তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কোরআন ও হাদিসে সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য ও দান সদকা করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে সহায়তা করবে দান-সদকা। সাহায্য করা ও দান করা ভালো তবে দান করে খোঁটা দেওয়া ঠিক নয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, দানের কথা প্রচার করো না এবং কষ্ট দিয়ে (খোঁটা দিয়ে) তোমাদের দান ওই ব্যক্তির মতো ব্যর্থ করো না, যে নিজের ধন সম্পদ কেবল লোক দেখানোর জন্যই ব্যয় করে..।’ (সুরা বাকারা, আয়াত, ২৬৪)
বিজ্ঞাপন
অন্যকে দান করে বা সাহয্য করে বড়াই করা উচিত নয়। প্রয়োজন সাপেক্ষে কাউকে উৎসাহিত করতে দেখিয়ে দান করার কথা রয়েছে হাদিসে, তবে গোপন দানকেই বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না, আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তার আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হলো ওই ব্যক্তি, যে এতো গোপনে দান করত যে, তার ডান হাতের দান বাম হাতও টের পেত না। (বুখারি, হাদিস, ৬৬০, মুসলিম, হাদিস, ১০৩১)
হাদিসে গোপন দানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং একে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই কখনো কেউ সাহায্য বা ভিক্ষা চাইলে এলে যতটুকু সম্ভব তাকে দান করা। কোনো কারণে সাহায্য করতে না পারলে তার সঙ্গে মন্দ আচরণ করা মোটেও ঠিক নয়। সাহায্যপ্রার্থীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে ভিক্ষুককে ধমক দিতে বারণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ভিক্ষুককে ধমক দেবে না।’ (সুরা আদ-দুহা, আয়াত, ১০)
অনেক সময় দান-সদকা করতে গেলে দানগ্রহীতারা এমন আচরণ করে বসে, যা বিরক্তিকর। সে সময় অনেকেই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা দান-সদকার সঙ্গে সঙ্গে রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমাশীলতার কথা একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, তাই দাতাদের উচিত দান-সদকা করার সময় রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমাশীলতা প্রতিও যত্নবান হওয়া।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৩৩-১৩৪)
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে প্রার্থনা করে তাকে আশ্রয় দাও, যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু চায় তাকে দিয়ে দাও, যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে আত্মরক্ষা প্রার্থনা করে তাকে সুরক্ষা দাও। আর যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর ইহসান করে (দান-সদাচরণ) তার প্রতিদান দিয়ে দাও। অগত্যা যদি দিতে না পারো তাহলে তার জন্য দোয়া করো যে পর্যন্ত না তোমরা মনে করে যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছো। (নাসাঈ, হাদিস, ২৫৬৮)
আরেক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বীয় মুনিবের কাছে এসে তার কাছে থাকা কোনো জিনিস চায়, কিন্তু সে তাকে তা না দেয়। কিয়ামতের দিন তার জন্য একটি বিরাট সাপ ডাকা হবে যা তার না দেওয়া সেই বস্তু চাটতে থাকবে। (নাসাঈ, হাদিস, ২৫৬৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, তোমরা ভিক্ষুককে কিছু দিয়ে দাও যদিও তা খুবই তুচ্ছ হোক না কেন। (নাসাঈ, ২৫৬৬)
আরও পড়ুন
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রুষা করোনি। বান্দা বলবে, হে আমার রব। আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কিভাবে আমি আপনার শুশ্রুষা করব? তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তুমি তার সেবা করোনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার শুশ্রুষা করতে তবে তার কাছেই আমাকে পেতে।
হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি। বান্দা বলবে, হে আমার রব, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কিভাবে আপনাকে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, তুমি কি জানো না, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানো না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে আজ তা পেতে?
হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রভু, আপনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক, কিভাবে আপনাকে পান করাব? তিনি বলবেন, তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তবে নিশ্চয়ই আজ তা পেতে (মুসলিম, হাদিস, ৬৭২১)।
এনটি