প্রিয়নবী সা.-এর পারিবারিক জীবন যেমন ছিল
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিগত জীবন যেমন সাদামাটা ছিল , তেমনি তার পারিবারিক জীবনও ছিল একদম সাদাসিধে।
আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘর নিজেই পরিষ্কার করতেন। বকরির দুধ দোহন করাসহ নিজের সব কাজ নিজেই আঞ্জাম দিতেন।’ অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জুতা ও কাপড় সাধারণ মানুষের মতো নিজেই সেলাই করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস, ২৫৩৮০)।
বিজ্ঞাপন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক মাধুর্য সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম সব মানুষের চেয়ে বেশি নম্র-ভদ্র ছিলেন এবং সর্বদা হাসিখুশি থাকতেন।’ আবু হুরায়রা রাদিযাল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো খাবারে ভুল ধরতেন না। যদি ভালো লাগত, খেতেন; অন্যথায় রেখে দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস, ৫১৯৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৩৩৮২)।
আরও পড়ুন
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সব স্ত্রীর খোঁজ নিতেন এবং সবার সঙ্গে সময় কাটাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, ‘ফজরের নামাজের পর নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত লোকেরাও তার চারপাশে বসে থাকত। এরপর তিনি তার প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে যেতেন, তাদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন আর যার দিন থাকত তার কাছে গিয়ে বসতেন।’ (তিবরানি, হাদিস, ৮৭৬৪)
স্ত্রীদের মানসিক প্রশান্তির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুক করতেন। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সূত্রে বর্ণিত আছে; এক সফরে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলেন। তখন তিনি কিশোরী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদের বললেন, ‘তোমরা এগিয়ে যাও।’ অতঃপর তিনিআয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বললেন, ‘এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি।’ আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে তার চেয়ে এগিয়ে গেলাম।’ (আস সুনানুল কোবরা লিন নাসায়ি, হাদিস, ৮৯৪৫)।
স্ত্রীরা কখনো অভিমান করলে বা মন খারাপ করলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতেন। এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগিয়ে যান এবং সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পিছিয়ে পড়েন। এতে তিনি কেঁদে ফেলেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন নিজ হাতে তার চোখ মুছে দেন এবং কাঁদতে নিষেধ করেন।’ (সুনানে কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস, ৯১৬২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পরিবারে আদর্শ শ্রেষ্ঠ গৃহকর্তা হওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম, যে তার পরিবার-পরিজনের কাছে অতি উত্তম। আর আমি আমার পরিবারে সবচেয়ে আচরণের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৯৭৭, তিরমিজি, হাদিস, ৩৮৯)।
এনটি