প্রতীকী ছবি

সূরা ফাজর পবিত্র কোরআনের ৮৯ নম্বর সূরা। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ ও কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত। এর আয়াত সংখ্যা ৩০। এই সূরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা পাঁচটি জিনিসের শপথ গ্রহণ করেছেন। এরপর আল্লাহর সঙ্গে আদ, সামুদ জাতি ও ফেরাউনের অবাধ্যতা ও তার পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এরপর মানুষের স্বভাবের একটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 

আল্লাহ তায়ালা যখন কাউকে জীবনোপকরণে সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য, ধন-সম্পদ ও সুস্বাস্থ্য দান করেন, তখন শয়তান তাকে বিভিন্ন ভাবে ভ্রান্ত ধারণায় লিপ্ত করে- সে মনে করতে থাকে যে, এটা আমার ব্যক্তিগত প্রতিভা, গুণ-গরিমা ও কর্ম প্রচেষ্টারই অবশ্যম্ভাবী। ফলশ্রুতি, যা আমার লাভ করাই সঙ্গত। আমি এর যোগ্য পাত্ৰ। 

সে আরও মনে করে যে, আমি আল্লাহর কাছেও প্রিয় পাত্র। যদি প্রত্যাখ্যাত হতাম, তবে তিনি আমাকে এসব নেয়ামত দান করতেন না।

আর যখন আল্লাহ তাকে (রুযী-রোযগারের) সংকীর্ণতায় ফেলে পরীক্ষা করেন, তখন সে তাঁর ব্যাপারে কুধারণা প্রকাশ করে থাকে।

মানুষের এমন ধারণা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ব্যাপারটি এমন নয়, যেমন লোকেরা ধারণা করে থাকে। আল্লাহ তায়ালা মাল-ধন নিজ প্রিয় বান্দাদেরকে দান করে থাকেন এবং অপ্রিয় বান্দাদেরকেও। আবার তাদের উভয়কে সংকীর্ণতাতেও ফেলে থাকেন। উভয় অবস্থাতেই আল্লাহর আনুগত্য জরুরি। অতএব বান্দার উচিত, তিনি মাল-ধন দান করলে তার কৃতজ্ঞতা করা এবং সংকীর্ণতা দিলে ধৈর্য ধারণ করা।

এরপর কাফের ও তাদের অনুসারী ফাসিকদের কয়েকটি মন্দ অভ্যাস সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে। প্রথমেই বলা হয়েছে যে, তারা এতিমকে সম্মান করে না। এখানে আসলে বলার উদ্দেশ্য এই যে, তারা এতিমদের প্রাপ্য আদায় করে না এবং তাদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জান্নাতে আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধানকারী এভাবে থাকবে, এটা বলে তিনি তার মধ্যমা ও তর্জনী আংগুল দুটি একসাথ করে দেখালেন। (বুখারি, হাদিস, ৬০০৫)

তাদের দ্বিতীয় মন্দ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা নিজেরা তো গরীব-মিসকীনকে খাবার দেয় না, পরন্তু অপরকেও এ কাজে উৎসাহিত করে না।

এখানে তাদের তৃতীয় মন্দ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা হালাল ও সব রকম ওয়ারিশী সম্পত্তি একত্রিত করে খেয়ে ফেলে। চতুর্থ মন্দ অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা ধন-সম্পদকে অত্যাধিক ভালবাসে।

কাফেরদের মন্দ অভ্যাসসমূহ বৰ্ণনার পর আবার আখেরাতের আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, যখন ভূকম্পনের মত হয় সবকিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে; তখন কার কি অবস্থা হবে একটু চিন্তা করা দরকার।

এরপর হাশরের মাঠে বিচার ফয়সালা করার জন্য আল্লাহর আগমনের বিষয়ে বলা হয়েছে। কিয়ামতের দিন ফিরিশতাগণ আসমান হতে নিচে অবতরণ করবেন, তখন প্রত্যেক আসমানের ফিরিশতাদের আলাদা আলাদা কাতার বা সারি হবে। এমন সাতটি কাতার হবে যারা সারা পৃথিবীকে বেষ্টন করে নেবে।

সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে বা সামনে উপস্থিত করা হবে। হাদিসে এসেছে, জাহান্নামকে ফেরেশতারা টেনে নিয়ে আসবে, সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম হবে, প্রতি লাগামে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে। (মুসলিম, হাদিস, ২৮৪২, তিরমিজি, হাদিস, ২৫৭৩)

সেদিন মানুষ আফসোস করে বলবে, ‘হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রিম পাঠাতাম!’ কিন্তু এই আফসোস ও আক্ষেপ লজ্জা ও লাঞ্ছনারই অংশবিশেষ। সেদিন তা কোন উপকারে আসবে না।

সেদিন সব ইচ্ছা ও এখতিয়ার শুধুমাত্র আল্লাহরই হাতে হবে। অন্য কারো তার সামনে কিছু করবার ক্ষমতা থাকবে না। তার অনুমতি ছাড়া কেউ কারো সুপারিশ পর্যন্তও করতে পারবে না। এই অবস্থায় কাফেরদের যে আজাব হবে এবং যেভাবে তারা আল্লাহর বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে, তার কল্পনাও করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়; তা অনুমান করা তো দূরের কথা। এ অবস্থা জালেম ও অপরাধীদের হবে। পক্ষান্তরে ঈমানদার এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাগণের অবস্থা হবে এর সম্পূর্ণ বিপরীত।

আল্লাহর অনুগত বান্দাদের বলা হবে, আল্লাহর পুরস্কার ও ওই সুখ-সামগ্রীর নিকট ফিরে এস; যা তিনি নিজ (নেক) বান্দার জন্য জান্নাতে প্রস্তুত করে রেখেছেন। এবং প্রশান্ত আত্মাকে সম্বোধন করে বলা হবে, আমার বিশেষ বান্দাদের কাতারভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্ৰবেশ কর।

এনটি