তাবলিগের বিবাদ মীমাংসা নিয়ে যা বললেন আল্লামা আরশাদ মাদানী
তাবলিগ জামাতের অন্যতম পরিচিত মুখ ও প্রসিদ্ধ আলেম মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্য ও অবস্থানকে ঘিরে বিভক্তি দেখা দেয় দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকা তাবলিগ জামাতের মাঝে। বিভক্তির পর তাবলিগ জামাতের দুটি পক্ষ পৃথক হয়ে তাবলিগের কাজ করছেন। বিভিন্ন সময় পক্ষ দুটিকে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে দেখা গেছে। এরই প্রেক্ষিতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি ‘আমিরুল হিন্দ’ আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী বলেছেন, তাবলিগ জামাতের বিবদমান উভয়পক্ষই সত্যের ওপর রয়েছে।
তিনি বলেছেন, তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের, উভয়পক্ষই সত্যের ওপর রয়েছেন। আমাদের উচিত কারো সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ না করা।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের খতমে বুখারি অনুষ্ঠানে আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী এসব কথা বলেন।
সায়্যিদ আরশাদ মাদানী বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি কাউকে ভ্রান্ত বলে অভিশাপ দেয়, তার ব্যাপারে আল্লাহর নবীর বক্তব্য হলো- ‘ওই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে পথভ্রষ্ট না হলে বা অভিশাপের উপযুক্ত না হলে অভিশাপদাতার ওপরেই তা পতিত হয়।’
অতএব কেউ কাউকে কাফের বা ফাসেক বলে নিজের ইমান ও আখেরাতকে ধ্বংস করতে যাবেন না। যারা এতদিন এসব করেছেন তারা তওবা করুন। সবাই মুসলমান, সবাই নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন, মুমিন-মুত্তাকি।
আরও পড়ুন
তাবলিগের উভয়পক্ষের সঙ্গে দেওবন্দের সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাবলিগের দুইপক্ষই আমাদের কাছে আসে, কথা বলে, আমরা শুনি। আমাদের দাওয়াত করে, আমরা যাই, তাদেরও আমরা দাওয়াত করি। আমাদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। দুপক্ষ একই মেহনত করে। দুপক্ষের জামাতই আল্লাহর রাস্তায় বের হয়। তাই আমরা বলি, কোনো একপক্ষকে ভালোবাসার কারণে অপরপক্ষকে কাফের বলা, পথভ্রষ্ট বলা ভয়াবহ গুনাহ। এতে করে অন্যপক্ষ কাফের হবে না বরং আপনার ইমানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মাওলানা মাদানি আরও বলেন, যে ভুলভ্রান্তি হয়েছে সে ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে ফতোয়া চাওয়া হয়েছিল। আমরা ফতোয়া দিয়ে দিয়েছি। তিনি (মাওলানা সাদ) নিজের যেসব ভুল বা যে বিষয়গুলোকে সঠিক মনে করতেন অথচ বাস্তবে সেগুলো সঠিক ছিল না- এসব বিষয়ে তিনি (মাওলানা সাদ) যখন বক্তব্যগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তখন সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।
উভয়পক্ষকে দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিস বলেন, কেউ দুনিয়ার স্বার্থে আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না। অত্যন্ত আফসোসের সঙ্গে বলতে হচ্ছে- তাবলিগের বর্তমান পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে একপক্ষকে কাফের বলা, খুন-খারাবি করা নিজেদের ধ্বংস ছাড়া আর কোনো পরিণতি বয়ে আনবে না।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, এমন মতবিরোধ দারুল উলুম দেওবন্দেও হয়েছে। ফলে আরেকটি দেওবন্দ সৃষ্টি হয়েছে। মাজাহিরুল উলুমেও হয়েছে। এমনিভাবে অনেক মাদরাসায় মতবিরোধের কারণে নতুন নতুন মাদরাসা সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় একটিকে সঠিক ধরে নিয়ে অন্যগুলোকে কাফের-পথভ্রষ্ট বলা নিছক মূর্খতা ছাড়া আর কিছু না।
এদিকে আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাবলিগের উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা চলছে। অনেকে এই বক্তব্যের সমর্থন ও সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, তিনি সঠিক কথাই বলেছেন, মুসলিমদের পতন ঠেকাতে অনতিবিলম্বে সবাইকে এক হতে হবে। কেউ বলছেন- শীর্ষস্থানীয় আলেমরা সবসময় এক হওয়ার তাগিদ দিয়ে আসছেন, কিন্তু এদেশের আলেমরা তাতে কর্ণপাত করে না। আবার কেউ বলছেন- এই বক্তব্য হকের দলিল নয়, এতে সাদ সাহেবের ভুলগুলো সঠিক প্রমাণিত হয় না। এরকম নানা মন্তব্য, আলাপ-আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, আল্লামা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানির ছেলে ও সাইয়্যেদ আসআদ মাদানির ভাই । বর্তমানে তাকে ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী আলেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে তার অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রয়েছে।
২০২০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও ২০২১ সালে তিনি পঞ্চম ‘আমিরুল হিন্দ’ নির্বাচিত হন।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ পুরোনো প্লাটফর্ম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে এ সংগঠনটির জন্ম। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দলটির ব্যাপক অবদান রয়েছে।