ভুল সংশোধনের ইসলামি পদ্ধতি
চলাফেরা-উঠাবসা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের ভুল হয়ে যায়। অনেকে ভুল বুঝতে পারেন, আবার কেউ কেউ ভুল বুঝতে পারেন না। যিনি ভুল বুঝতে পারেন না, তাকে সুন্দর ও উত্তম পন্থায় ভুল বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। এতে করে তিনি নিজের ভুল সহজেই বুঝতে পারবেন এবং নিজেকে সংশোধনে আগ্রহী হবেন। হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভুল সংশোধন করে দেওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে।
এক হাদিসে হজরত মুআবিয়া ইবনে হাকাম আস-সুলামি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি হাঁচি দেয়। আমি তার উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলি। তখন উপস্থিত লোকজন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে থাকলে আমি বললাম, ধুর! তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? তখন মানুষজন (বিস্মিত হয়ে) তাদের উরুতে চাপড়াতে শুরু করে। আমি বুঝতে পারি যে, তারা আমাকে চুপ করতে বলছে। আমি চুপ হয়ে যাই।
বিজ্ঞাপন
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করে আমাকে ডাকলেন। তিনি (নামাজে আমার অবাঞ্ছিত কথাবার্তার জন্য) আমাকে তিরস্কারও করলেন না এবং কটু কথাও বললেন না। আমি তার আগে ও পরে তার চেয়ে উত্তম কোনো শিক্ষক দেখিনি। তিনি শুধু বললেন, ‘আমাদের জন্য নামাজে কথা বলা সমীচীন নয়। নামাজ হলো তাসবিহ, তাকবির এবং কুরআন তেলাওয়াতের সমষ্টি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৫৩৭)
আরও পড়ুন
অপর হাদিসে আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ এক বেদুইন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল, তা দেখে সাহাবারা থামো থামো বলে তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিলেন। তখন রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা তাকে বাধা দিয়ো না, বরং তাকে ছেড়ে দাও। লোকেরা তাকে ছেড়ে দিল, সে প্রস্রাব সেরে নিল। তখন রাসুল (সা.) তাকে কাছে ডেকে বলেন, এটা হলো মসজিদ। এখানে প্রস্রাব করা কিংবা ময়লা-আবর্জনা ফেলা যায় না। বরং এটা হলো আল্লাহর জিকির, নামাজ আদায় এবং কোরআন তিলাওয়াত করার স্থান। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ২৮৫)
ভুল শুধরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে রাগ করার কথা বলা হয়েছে হাদিসে। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যাতে ছবি ছিল। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই ছবিটি দেখলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভেতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা অপছন্দ করেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করছি এবং তার রাসূলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি?
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই বালিশ কিসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য কিনে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ছবি নির্মাতাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি প্রদান করা হবে এবং বলা হবে, তুমি যা সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরও বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৫১৮১)
এনটি