প্রতীকী ছবি

হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ১২ পুত্র ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল লাইয়্যা বিনতে লাইয়্যান। ১২ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ১০ জন এই স্ত্রীর গর্ভে জন্মলাভ করেছেন। তার মৃত্যুর পর ইয়াকুব আলাইহিস সালাম লাইয়্যার বোন রাহিলকে বিবাহ করেন। 

ইয়াকুব আ.-এর সন্তান

দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন ইউসুফ আলাইহিস সালাম ও বিনইয়ামিন। বিনইয়ামিনের জন্মের পর পরই তার মা মৃত্যুবরণ করেন। পরে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তার স্ত্রীর অন্য এক বোন লায়লাকে বিবাহ করেন।

ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইদের মধ্যে বিনইয়ামিন ছাড়া বাকিরা ছিলেন বৈমাত্রেয় ভাই। ছোট হিসেবে সন্তান হিসেবে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ইউসুফ আলাইহিস সালাম ও তার আপন ভাই বিনইয়ামিনকে খুব স্নেহ করতেন। এটা বৈমাত্রেয় ভাইদের ভালো লাগত না। তারা ক্রমেই ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠে।

ইউসুফ আ.- এর প্রতি ভাইদের হিংসার কারণে

এটা মানুষের স্বভাবগত রীতি যে বিমাতা বা সৎ ভাইয়েরা সাধারণত পরস্পরের বিদ্বেষী হয়ে থাকে। সম্ভবত এই বিদ্বেষ যাতে মাথাচাড়া না দেয়, সে উদ্দেশ্যেই ইয়াকুব আলাইহিস সালাম একই শ্বশুরের পরপর তিন মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। 

তার শ্বশুর ছিলেন আপন মামা। তাই তারা ছিলেন পরস্পরে রক্ত সম্পর্কীয় ও নিকটাত্মীয়। এর পাশাপাশি নবী পরিবারে সার্বক্ষণিক দ্বীনি পরিবেশ ও নৈতিক প্রশিক্ষণ ছিল। তা সত্ত্বেও বৈমাত্রেয় হিংসার কবল থেকে ইয়াকুব আলাইহিস সালামের দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা রক্ষা পাননি। 

তাই বলা চলে, ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রতি তার সত্ভাইদের হিংসার প্রথম কারণ ছিল বৈমাত্রেয় বিদ্বেষ। 

দ্বিতীয়ত, সদ্য মাতৃহীন শিশু হওয়ার কারণে তাদের দুই ভাইয়ের প্রতি পিতার স্বভাবগত স্নেহের আধিক্য ছিল। বিষয়টি বড় ভাইয়েরা মেনে নিতে পারেননি। 

তৃতীয়ত, ইউসুফ আলাইহিস সালামের ছিল অতুলনীয় রূপ-লাবণ্য, অনিন্দ্যসুন্দর দেহসৌষ্ঠব, আকর্ষণীয় ব্যবহার-মাধুর্য। এটিও ছিল ভাইদের হিংসার কারণ। 

চতুর্থত, ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নবৃত্তান্তের কথা যেকোনোভাবে তাদের কানে পৌঁছে যায়। এই কারণটিই তাদের হিংসার আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। 

পঞ্চমত, ইউসুফ আলাইহিস সালাম ভবিষ্যতে নবী হবেন—এ বিষয়টি পিতা ইয়াকুব আলাইহিস সালাম বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি তার প্রতি অধিক স্নেহশীল ছিলেন। এ কারণে সৎ ভাইয়েরা তার প্রতি অধিক হিংসাপরায়ণ ছিলেন। আসলে এই হিংসাত্মক আচরণের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভবিষ্যৎ উন্নতির সোপান।

এ কারণে হিংসাপরায়ণ হয়ে ইউসুফ আলাইহিস সালামের ভাইয়েরা বলেছিল, ‘অবশ্যই ইউসুফ ও তার ভাই (বিনইয়ামিন) আমাদের পিতার কাছে আমাদের চেয়ে অধিক প্রিয়, অথচ আমরা একটি সংহত দল (তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী)। আমাদের পিতা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই আছেন। (সূরা ইউসুফ, আয়াত, ৮)

ইউসুফ আ.-এর ভাইদের পরামর্শ

ছোট ভাইয়ের প্রতি বাবার অধিক ভালোবাসার বিষয়টি বড় ভাইয়েরা মেনে নিতে পারেনি। তাই তাদের কেউ কেউ মত প্রকাশ করল যে, ইউসুফকে হত্যা করা হোক। কেউ বললম তাকে কোন অন্ধকূপের গভীরে নিক্ষেপ করা হোক- যাতে মাঝখান থেকে এ কন্টক দূর হয়ে যায় এবং বাবার মনোযোগ তোমাদের প্রতিই নিবদ্ধ হয়ে যায়।

বড় ভাইদের সবার কথাবার্তা শুনে এক ভাই বলল, ইউসুফকে হত্যা করো না। যদি কিছু করতেই হয় তবে, কুপের গভীরে এমন জায়গায় নিক্ষেপ কর, যেখানে সে জীবিত থাকবে এবং কোনো পথিক কূপে পানি নিতে এসে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। এভাবে একদিকে তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাবে এবং অপরদিকে তাকে নিয়ে তোমাদেরকে কোন দূরদেশে যেতে হবে না। কোন কাফেলা কূপ থেকে উঠিয়ে তাকে সাথে করে দূর-দূরান্তে পৌঁছে দেবে। 

ইউসুফ আ.-কে কূপে নিক্ষেপ

ভাইয়েরা পরামর্শ করে ইয়াকুব আলাইহিস সালামের কাছে খেলার কথা বলে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে দূরে নিয়ে গেল এবং সেখাকে তাকে কূপে ফেলে দিল। এসময় আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে শান্ত্বনা দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, 

فَلَمَّا ذَهَبُوۡا بِهٖ وَ اَجۡمَعُوۡۤا اَنۡ یَّجۡعَلُوۡهُ فِیۡ غَیٰبَتِ الۡجُبِّ ۚ وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡهِ لَتُنَبِّئَنَّهُمۡ بِاَمۡرِهِمۡ هٰذَا وَ هُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ

অতঃপর যখন তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে গভীর কূপে নিক্ষেপ করতে একমত হল। এমতাবস্থায় আমি তাকে (ইউসুফকে) জানিয়ে দিলাম, ‘তুমি তাদেরকে তাদের এই কর্মের কথা অবশ্যই বলে দেবে; যখন তারা তোমাকে চিনবে না।’ (সূরা ইউসুফ, (১২), আয়াত, ১৫)

এনটি