প্রতীকী ছবি

ইসলাম পূর্ব সময়ে আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষেরা মক্কায় এসে তাদের নিয়মে হজ পালন করতেন। হজ পালনে মক্কায় আসা কাফেলার লোকদের কাছে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতেন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি তাদের মূর্তিপূজার অসারতা বর্ণনা করতেন। বোঝাতেন এবং তাওহীদ ও আল্লাহ্‌র একত্ববাদের দিকে তাদেরকে আহবান জানাতেন।

আবু জাহেল, আবূ লাহাবরা তার পিছু পিছু গিয়ে বহিরাগতদেরকে তার কথায় কর্ণপাত করতে মানা করতো। দুষ্টদের এ দুষ্টামী থেকে বাঁচবার জন্য জরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় রাতের অন্ধকারে দুই তিন মাইল পায়ে হেটে বহিরাগতদের তাবুতে গিয়ে পৌছতেন। তিনি তাদের কাছে বসতেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিতেন।

নবুওয়তের একাদশ বছরে মদিনা থেকে খাযরাজ বংশের কিছু লোক হজ করতে এলেন মক্কায়। একবার রাতের আধারে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে বের হলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মক্কার কয়েক মাইল দূরে আকাবা নামক জায়গায় অন্ধকারের ভেতর কয়েকজন তীর্থযাত্রীকে কথা বলতে শুনতে পেলেন তিনি। তিনি তাদের কাছে গেলেন। খেয়াল করে দেখলেন সেখানে ৬ জন মানুষ কথা বলছেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পেলেন, তারা ইয়াসরিব থেকে হজ করতে এসেছেন এবং তারা  সবাই খাযরাজ বংশের লোক ৷ 

ইসলামপূর্ব যুগে মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। ইয়াসরিবে বসবাসকারীরা তখন প্রধানত দু'ভাগে বিভক্ত ছিল। এক ভাগ ছিল ইয়াহুদী, অন্যভাগে মূর্তিপূজারী মুশরিকরা। মুশরিকদের মধ্যে আওস ও খাযরাজ নামের দুটি গোত্র ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রসিদ্ধ ৷

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাযরাজ গোত্রের এই ৬ জনকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। কোরআন শরিফের আয়াত তিলাওয়াত করে শোনালেন। তারা পরস্পরে মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করলেন এবং তৎক্ষণাৎ ঈমান আনয়ন করলেন। 

মদিনায় বসবাসকারী খাযরাজ গোত্রের লোকেরা সেখানকার ইয়াহুদীদের মুখে অনেক আগে থেকেই ইসলামের কথা শুনে আসছিল। তারা ইহুদিদেরকে বলতে শুনতো যে, একজন মহা নবীর আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। তিনি মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করবেন এবং সবার ওপর বিজয়ী হবেন। কথাগুলো যেহেতু তারা আগে থেকেই  শুনে আসছিলেন তাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ইসলামের আহ্বান শোনর পর তারা তাকে নবী হিসেবে গ্রহণ করতে আর দেরি করলেন না। মদিনায় বসবাসকারী অন্যদের আগে তারাই ইসলাম গ্রহণ করলেন।

মদিনার ইসলাম গ্রহণকারী এই ৬ সাহাবির নাম হলো-

১. আবূ উমামা আসআদ ইব্নে যুরারা- (তিনি ছিলেন বনী নাজ্জারের লোক, একইসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়ও ছিলেন তিনি। ৬ জনের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন ।)
২. আওফ ইবনে হারিস।
৩. রাফি ইবনে মালিক।
৪. কুতবা ইবনে আমির।
৫.জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ।
৬. উকবা ইবনে আমির ইবনে নাবী।

এই ৬ জনের মধ্যে রাফি ইবনে মালিককে ওই সময় পর্যন্ত অবতীর্ণ কোরআনের আয়াতগুলোর একটি লিখিত কপি দিয়েছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওই ছোট কাফেলাটি সেখান থেকে মুসলমান হয়ে মদিনায় ফিরলেন। যাবার সময় তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মদিনায় ফিরে তারা নিজ গোত্রের লোকদের ইসলামের দাওয়াত দেবেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারে কাজ করবেন।

মদিনায় ফিরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন তারা। নিজ গোত্রের লোকদের কাছে পৌঁছে দিলেন ইসলামের বার্তা। এভাবে ধীরে ধীরে ইসলামের আলোচনায় মুখর হয়ে উঠলো মদিনার অলি-গলি। এখান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো ইসলামের বাণী।

(ইসলামের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা, ১১৮)

এনটি