প্রতীকী ছবি

আল্লাহর তায়ালার আদেশ পেয়ে প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে মক্কার মুশরিকদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করলেন। এ সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যে অল্প কিছু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের ওপর কুরাইশরা নির্যাতন শুরু করল।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেলায়, মসলিসে, বাজারে, বৈঠকখানায় এক কথায়, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তাওহীদের সৌন্দর্য বোঝাতে লাগলেন এবং মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করলেন। তিনি তাদেরকে ব্যভিচার, জুয়া, মিথ্যা কথা, বিশ্বাসভঙ্গ, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি প্রভৃতি অনাচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান করলেন।

কুরাইশরা ছিল ভীষণ দাম্ভিক প্রকৃতির। তাদের বাপদাদার ধর্ম ও আচার-আচরণের নিন্দা শুনে যাওয়া তাদের পক্ষে মোটেও সহজ ব্যাপার ছিল না। তাদের মধ্যে মনিব ও গোলামের পার্থক্য বা ভেদাভেদ ছিল। ইসলাম মনিব ও গোলামের এ পার্থক্যকে মিটিয়ে দিয়ে একই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করলো সবাইকে। ইসলামের এ সাম্য কুরাইশদের মনঃপূত ছিল না।  কুরাইশের বড় বড় সর্দারেরা এসব কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিল না।

তাই আল্লাহর রাসূল প্রকাশ্যে সবাইকে ইসলামের পথে আহ্বান শুরু করার পর তারা শত্রুতা শুরু করলো এবং ইসলাম ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মূলোৎপাটন করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠলো। নবুওয়তের চতুর্থ বছরে কুফর ও ইসলামের প্রকাশ্য সংঘাত জোরেশোরে শুরু হলো।

মক্কার মুশরিকরা একদিন মক্কার একটি পাহাড়ে একদল মুসলিমকে নামাজ আদায় করতে দেখার পর তাদের ওপর হামলা করে। মুসলিমরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে সংঘাত সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় মুসলিমদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।

সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিচেনা করে দ্বীনি শিক্ষা ও নামাজ আদায়ের স্থান হিসেবে আরকাম ইবনে আবিল আরকাম রাদিয়াল্রাহু তায়ালা আনহুর বাড়িকে নির্ধারণ করেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। 

এই বাড়িটিকে ইসলামের দরসগাহ বা শিক্ষাগাররূপে ব্যবহার করতে শুরু করেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।। নবদীক্ষিতরা এ বাড়িতে এসে ইসলামের শিক্ষা, তালিম নিতেন। এ বাড়িতে সবসময় মুসলমানদের ভিড় লেগে থাকতো। ইসলামের ইতিহাসে এটিই প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র, যা ‘দারুল আরকাম’ নামে খ্যাত। 

নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে বসেই সবাইকে ইসলামের শিক্ষা দিতেন এবং এখানেই সবাই মিলে নামাজ আদায় করতেন। দারুল আরকামে প্রধানত কোরআন ও ঈমানের পাঠদান করা হতো, আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ উপস্থিত সাহাবিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো। এ ছাড়া তাদের আধ্যাত্মিকতা, চরিত্র, সমাজ, রাজনীতি ও দাওয়াতের কর্মকৌশল শেখানো হতো। 

নবুওয়তের ষষ্ঠ বছর পর্যন্ত পুরো তিন বছর এই দারুল আরকামই ছিল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থানস্থল এবং ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। এই তিন বছর যারাই ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাদেরকে আদি পর্যায়ের মুসলমানের মর্যাদা দেওয়া হয়।

দারুল আরকামে ইসলাম গ্রহণকারীদের তালিকায় হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নামই সর্বশেষ নাম। কারণ, তার ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মুসলমানরা দারুল আরকাম থেকে বেরিয়ে মুক্তাঙ্গনে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। 

(ইসলামের ইতিহাস, ৯৫, আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যা, ৯৯, মুসনাদে হাকিম, হাদিস,৬১৩০)

এনটি