প্রতীকী ছবি

মশা, মাছি তাড়ানোর প্রাচীন প্রাকৃতিক পদ্ধতি ধূপ ব্যবহার। প্রাকৃতিক হওয়ায় শরীরের ক্ষতি করে না। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ধূপ-গাছ জন্মে। গাছের কাণ্ড থেকে যে নির্যাস বা আঠা পড়ে, তা দিয়েই তৈরি হয় ধূপ। বাসায় প্রতিদিন ধূপ দিলে মশার উপদ্রব কমে যায়।

তবে কিছু কিছু ধর্মে ধর্মীয় উপাসনার জন্য ধূপ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। ধূপ জ্বালানো ছাড়া উপাসনা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। ধূপ জ্বালানোকে দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপায় হিসেবে দেখা যায়। অমুসলিমদের অনেকে বিশ্বাস করেন যে ধূপকাঠি জ্বালানো ঘরবাড়িতে মঙ্গল আগমনের কারণ। 

অনেকে আবার মনে করেন ধূপ জ্বালানোর কারণে নেতিবাচক প্রভাব দূর হয়, সুখ এবং মানসিক শান্তি আসে, দেবতারা ধূপ পছন্দ করেন, এতে তারা খুশি হন। মানসিক চাপ বা টেনশনও দূর হয়ে যায় বলে মনে করা হয়।

এসব কারণে অনেক মুসলমানের মনে প্রশ্ন জাগে ধূপ জ্বালিয়ে মশা দূর করা যাবে কিনা? এ বিষয়ে ইসলামি আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেন,

ঘরে ধূপ ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত বৈধ কাজের হলে তা বৈধ। অন্যথায় নয়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন,

 

إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى

‘আমলসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ১)

কাজেই কেউ যদি মশা দূর করার নিয়তে :ধূপ ব্যবহার করে তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কেউ যদি ভ্রান্ত আকীদা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জ্বালানো হয় তাহলে তা বৈধ হবে না।

আরও পড়ুন

মশা দূর করা বা মারার জন্য অনেকে ইলেক্ট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেন। এ বিষয়ে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারা জায়েজ নেই। কারণ, ইলেক্ট্রিক ব্যাট দিয়ে মশা মারলে মশা আগুনে পুড়ে যায় এবং এতে মশাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। আর ছোট-বড় কোনো প্রাণীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা জায়েজ নেই।

কারণ, আগুন দিয়ে শাস্তি  দেবেন শুধু তায়ালাই,৷ এটা আল্লাহ তায়ালার জন্যই সুনির্ধারিত। সুতরাং যেহেতু ব্যাট দিয়ে মশা-মাছি পুড়ে যায়, তাই এই জাতীয় ব্যাট বা যন্ত্র ব্যবহার করে মশা-মাছি মারা জায়েজ হবে না। (বুখারি, হাদিস, ২/১০২৩; ফাতওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩৬১)

এক হাদিস শরিফে এসেছে যে, ‘রাসূল সাল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আগুন দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কেউ শাস্তি দিতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৩০১৬)

তবে যে প্রাণী কষ্ট দেয় এবং ক্ষতিকর— সেটা হত্যা করা জায়েয। কোনো প্রাণী যদি কষ্টদায়ক এবং ক্ষতিকর হয় তাহলে সেগুলোকে হত্যা করা যাবে। (বুখারি, হাদিস, ৩০১৬; আবু দাউদ, হাদিস, ২৬৭৫)

তবে এর জন্য বিকল্প রাস্তা গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে এমন পরিবেশ তৈরি করাই শ্রেয়, যা মশা জন্মের প্রতিবন্ধক হয়। এতে করে প্রাণী হত্যার বিধিনিষেধ সম্বলিত হাদিসগুলোর সঙ্গে পরিবেশ রক্ষার হাদিসগুলোর ওপরও আমল হয়ে যাবে।

এনটি