প্রতীকী ছবি

সূরা আলা পবিত্র কোরআনের ৮৭ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১৯। সূরাটি মক্কায় অবর্তীণ এবং পবিত্র কোরআনের ত্রিশতম পারায় অবস্থিত।


সূরা আলা

سَبِّحِ اسۡمَ رَبِّکَ الۡاَعۡلَی ۙ ١ الَّذِیۡ خَلَقَ فَسَوّٰی ۪ۙ ٢ وَالَّذِیۡ قَدَّرَ فَہَدٰی ۪ۙ ٣ وَالَّذِیۡۤ اَخۡرَجَ الۡمَرۡعٰی ۪ۙ ٤ فَجَعَلَہٗ غُثَآءً اَحۡوٰی ؕ ٥ سَنُقۡرِئُکَ فَلَا تَنۡسٰۤی ۙ ٦ اِلَّا مَا شَآءَ اللّٰہُ ؕ  اِنَّہٗ یَعۡلَمُ الۡجَہۡرَ وَمَا یَخۡفٰی ؕ ٧ وَنُیَسِّرُکَ لِلۡیُسۡرٰی ۚۖ ٨ فَذَکِّرۡ اِنۡ نَّفَعَتِ الذِّکۡرٰی ؕ ٩ سَیَذَّکَّرُ مَنۡ یَّخۡشٰی ۙ ١۰ وَیَتَجَنَّبُہَا الۡاَشۡقَی ۙ ١١ الَّذِیۡ یَصۡلَی النَّارَ الۡکُبۡرٰی ۚ ١٢ ثُمَّ لَا یَمُوۡتُ فِیۡہَا وَلَا یَحۡیٰی ؕ ١٣ قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی ۙ ١٤ وَذَکَرَ اسۡمَ رَبِّہٖ فَصَلّٰی ؕ ١٥ بَلۡ تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا ۫ۖ ١٦ وَالۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّاَبۡقٰی ؕ ١٧ اِنَّ ہٰذَا لَفِی الصُّحُفِ الۡاُوۡلٰی ۙ ١٨ صُحُفِ اِبۡرٰہِیۡمَ وَمُوۡسٰی ٪ 

সূরা আলা অর্থ : 

তোমার সমুচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা কর। যিনি (সবকিছু) সৃষ্টি করেছেন ও সুগঠিত করেছেন। এবং যিনি (সবকিছুকে এক বিশেষ) পরিমিতি দিয়েছেন, তারপর পথ প্রদর্শন করেছেন। এবং যিনি (ভূমি থেকে সবুজ) তৃণ উদগত করেছেন। তারপর তাকে কালো আবর্জনায় পরিণত করেছেন। 

(হে নবী!) আমি তোমাকে দিয়ে পাঠ করাব, ফলে তুমি ভুলবে না, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য বিষয়াবলীও জানেন এবং গুপ্ত বিষয়াবলীও। আমি তোমার জন্য সহজ শরীয়ত (-এর অনুসরণ) সোজা করে দেব। সুতরাং তুমি উপদেশ দিতে থাক, যদি উপদেশ ফলপ্রসূ হয়, যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে সে উপদেশ গ্রহণ করবে। আর তা থেকে দূরে থাকবে কেবল সেই, যে চরম হতভাগা। যে প্রবেশ করবে সর্ববৃহৎ আগুনে। তারপর সে তাতে মরবেও না এবং বাঁচবেও না।

সফলতা অর্জন করেছে সেই, যে পবিত্রতা অবলম্বন করেছে। এবং নিজ প্রতিপালকের নাম নিয়েছে ও নামাজ পড়েছে। কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দাও, অথচ আখেরাত কত বেশি উৎকৃষ্ট ও কত বেশি স্থায়ী। নিশ্চয়ই এ কথা পূর্ববর্তী (আসমানী) গ্রন্থসমূহেও লিপিবদ্ধ আছে, ইবরাহীম ও মূসার গ্রন্থসমূহে।

সূরা আলাতে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

এই সূরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে তার তাসবিহ বা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যে পবিত্ৰতা ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহরজিকির, ইবাদাত, তার মাহাত্মের জন্য বিনয় ও দীন-হীনাতা প্ৰকাশ পায়। আর তার তাসবীহ যেন তার সত্তার মাহাত্মা উপযোগী হয়। যেন তাকে তার সুন্দর সুন্দর নামসমূহ দিয়েই সেগুলোর মহান অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখেই কেবল আহ্বান করা হয়। 

এরপরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার কারণ ও হেতুসমূহ বর্ণনা করা হচ্ছে। এ আয়াত এবং এর পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে পৃথিবী সৃষ্টিতে আল্লাহর অপার রহস্য ও শক্তি সম্পর্কিত কিছু কর্মগত গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে।

সৃষ্টিতে আল্লাহর অপার রহস্য ও শক্তি সম্পর্কিত বিষয় বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বস্তুকে তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। প্রতিটি জিনিস সে তাকদীর অনুসরণ করে চলছে। এবং স্রষ্টা যে কাজের জন্যে যাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সে কাজের পথনির্দেশও দিয়েছেন। এ পথনির্দেশে আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টিই অন্তর্ভুক্ত আছে। 

এরপরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা উদ্ভিদ সম্পর্কিত স্বীয় কুদরত ও হেকমত বর্ণনা করেছেন। তিনি ভূমি থেকে সবুজ-শ্যামল ঘাস উৎপন্ন করেছেন, এরপর একে শুকিয়ে কাল রং-এ পরিণত করেছেন এবং সবুজতা বিলীন করে দিয়েছেন। এতে দুনিয়ার চাকচিক্য যে ক্ষণস্থায়ী সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন। 

সৃষ্টিতে আল্লাহর অপার রহস্য ও শক্তি সম্পর্কিত বিষয় বর্ণনা ও দুনিয়াবি নিয়ামত বর্ণনার পর এখন আল্লাহ তায়ালা কিছু দ্বীনী নেয়ামত বর্ণনা করছেন। তন্মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে কোরআন। 

এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সুসংবাদ জানানো হচ্ছে যে, আল্লাহ তাকে এমন জ্ঞান দান করবেন যে, তিনি কোরআনের কোনো আয়াত বিস্মৃত হবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আপনার কাছে কিতাবের যে ওহী আমি পাঠিয়েছি আমি সেটার হিফাজত করব, আপনার অন্তরে সেটা গেথে দেব, ফলে তা ভুলে যাবেন না। 

আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ‍ওহী সহজ করে দেওয়ার সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, আমি আপনার জন্য ওহীকে সহজ করে দেব, যাতে তা মুখস্থ করা এবং তার উপর আমল করা সহজ হয়ে যায়। 

পরের আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ওয়াজ-নসীহত এবং শিক্ষাদানের একটি নীতি ও আদর্শ বর্ণনা করেছেন। 

এরপর বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির মনে আল্লাহর ভয় এবং তার সাথে সাক্ষাত করতে হবে এমন ধারণা কাজ করে সে অবশ্যই রাসূলের উপদেশ মনোযোগ সহকারে শুনবে। আর যারা কুফরীতে অবিচলতা ও আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে তারা সেই উপদেশ দ্বারা উপকৃত হবে না। 

আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেবেন। সেখানে তার মৃত্যু হবে না। যার ফলে আজব থেকে রেহাই পাবে না। আবার বাঁচার মতো বাঁচাবেও না। এ কারণে জীবনের কোন স্বাদ-আহলাদও পাবে না। 

এরপর সফল মানুষদের কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, যে নিজের আত্মাকে নোংরা আচরণ থেকে এবং অন্তরকে শিরক ও পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে সে সফল। সফল মানুষদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, তারা তাদের রবের নাম স্মরণ করে এবং সালাত আদায়।

এরপর মানুষের স্বভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, মানুষ পরকালীন জীবনকে ভুলে পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এরপর বলা হয়েছে, পৃথিবী এবং তার সমস্ত বস্তু ধ্বংসশীল। পক্ষান্তরে পরকালের জীবনই হল চিরস্থায়ী জীবন। বলা বাহুল্য, জ্ঞানী ব্যক্তি কোনো দিন চিরস্থায়ী বস্তুর উপর ধ্বংসশীল ক্ষণস্থায়ী বস্তুকে অগ্রাধিকার দেয় না।

এরপর বলা হয়েছে, এই সূরার সব বিষয়বস্তু অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (আখেরাত উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী ইবরাহীম ও মূসা আলাইহিস সালাম-এর সহীফাসমূহেও লিখিত আছে।

(ইবনে কাসির, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮/৭৫০)

এনটি