প্রতীকী ছবি

পবিত্র কোরআনের সূরা নামলে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী যুগের একজন নারী শাসকের কথা তুলে ধরেছেন। যিনি প্রথমে আল্লাহতে বিশ্বাসী না হরেও পরবর্তীতে আল্লাহর ওপর ঈমান আনেন। তার নাম ছিল রানী বিলকিস। তিনি আল্লাহর নবী হজরত সুলাইমান আলাইহি সালামের সময়কালে রাজ্য শাসন করতেন। 

সুলাইমান আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের একজন নবী ছিলেন। তাকে আল্লাহ তায়ালা রাজত্বও দান করেছিলেন। তৎকালীন যুগে মানব সমাজে ব্যবহৃত সব ধরণের বস্তু সামগ্রী তার ছিল। বিশাল সেনাবাহিনী ছিল। রাজ্য নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজে জিন, পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী, প্রবাহিত বাতাস তার অধীন ছিল। তিনি মানুষের ভাষাসহ অন্যান্য প্রাণীর ভাষা বুঝতেন।

সুলাইমান আলাইহিস সালামের বাহিনীতে অসংখ্য পশুপাখি সংযুক্ত ছিল। একদিন হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তার অনুগত ‘গোয়েন্দা পাখি’ হুদহুদকে অনুপস্থিত দেখলেন। এতে রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, যথাযথ কারণ দর্শাতে না পারলে হুদহুদ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে। 

একটু পরেই হুদহুদ ফিরে এল। এসে রানি বিলকিসের রাজ্য, রাজত্ব, ক্ষমতা, প্রাসাদ ও সিংহাসন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল। সে বলল, ‘আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যা আপনার কাছে নেই। (ইয়েমেনের) সাবা থেকে আমি নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। সেখানে দেখলাম—এক নারী রাজত্ব করছেন এবং তাঁকে সবই দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরাট সিংহাসন রয়েছে।’ 

হুদহুদ আরও বলে, ‘এটুকুই নয়, আরও দেখলাম, তিনি ও তার প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছেন। শয়তান এ কাজকে তাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে এবং হেদায়েতের পথ থেকে বিরত রেখেছে। ফলে তারা হেদায়েত পায়নি।’ 

এমন তথ্য শুনে সুলাইমান আলাইহিস সালাম বিস্মিত হলেন এবং বললেন, ‘দেখি, তুমি সত্য বলেছ, না মিথ্যা বলছ।’ 

এরপর তিনি তিনি রানিকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠান। উত্তরে রানি বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন প্রেরণ করেন হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের দরবারে। কিন্তু জাগতিক ধন-সম্পদের প্রতি কোনো মোহ ছিল না হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন এবং জানালেন, মানুষকে কুফর ও শিরকমুক্ত করে একত্ববাদের পথে নিয়ে আসাই তার মূল চাওয়া।

বিলকিসের প্রতিনিধি দলকে সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে অর্থ-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে এসেছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম। তোমরা বরং তোমাদের উপহার নিয়েই আনন্দ করো।’ 

কঠিন এক ধমক দিয়ে সুলাইমান আলাইহিস সালাম তাদের বললেন, ‘নিজ দেশে ফিরে যাও। আমি তাদের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব। তাদের অপমানিত করে সেখান থেকে বের করে দেব। তারা লাঞ্ছিত হবেই।’ 

তারা ফিরে গেল এবং সুলাইমান আলাইহিস সালাম ওহীর মাধ্যমে জানতে পারলেন, হুঁশিয়ারি শুনে বিলকিস শিগগিরই তার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। তাই তিনি যখন আসবেন, তখন তাকে আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা দেখানোর জন্য সুলাইমান আলাইহিস সালাম চাইলেন রানি বিলকিস উপস্থিত হওয়ার আগেই তার সিংহাসন উপস্থিত করে ফেলতে। যেন তা দেখে সে অবাক হয়ে যায়, প্রভাবিত হয়ে যায়। 

সভাসদকে ডেকে সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, ‘হে সভাসদগণ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার আগেই তোমাদের কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসবে?’

এক শক্তিশালী জিন বললেন, ‘আপনি আপনার জায়গা থেকে ওঠার আগেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব। এ কাজে আমি অবশ্যই ক্ষমতার অধিকারী ও আস্থাভাজন।’ ঐশী জ্ঞানের অধিকারী এক আলেম বললেন, ‘আপনার পলক ফেলার আগেই তা আপনার কাছে এনে দেব।’ 

যেই কথা সেই কাজ, মুহূর্তেই তিনি বিলকিসের বিরাট সিংহাসন সুলাইমান আলাইহিস সালামের সামনে হাজির করে দিলেন এবং আল্লাহর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন। সিংহাসনটি আনার পর সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর আকৃতি পরিবর্তন করে দিলেন, যেন সহজেই রানী বিলকিস তা চিনতে পারে এবং তিনি এর মাধ্যমে রানী বিলকিসের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন।

এরপর রানী বিলকিস যখন সুলাইমান আলাইহিস সালামে দরবারে এসে উপস্থিত হলেন। তাকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এটি কি আপনার সিংহাসন?’ তিনি বললেন, ‘তাই তো মনে হয়। আপনার সম্পর্কে আগেই আমাদের জানানো হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি।’

রানি বিলকিস এসব পরীক্ষার মুখে পড়ে সুলাইমান আলাইহিস সালামের অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন এবং আল্লাহর দরবারে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি অবশ্যই নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’ 

রানি বিলকিস ছিলেন অপরূপ সুন্দরী। কিন্তু কোনো পুরুষ তাকে মোহিত করতে পারেনি। প্রসিদ্ধ মতে হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, তিনি সুলাইমান আলাইহিস সালামের সন্তানের মাও হন।

(সূরা নামল)