কোরআনের যে সূরাগুলো পড়লে বিশেষ ফজিলত পাবেন
পবিত্র কোরআনে মোট সূরা সংখ্যা ১১৪ টি। মোট আয়াত সংখ্যা ৬ হাজার ২৩৬টি। পবিত্র কোরআনের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত এবং প্রতিটি হরফ তিলাওয়াতের সওয়াব ও ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। একইসঙ্গে কিছু কিছূ সূরা ও আয়াতের বিশেষ ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। এখানে হাদিসের এমন কয়েকটি আয়াত ও সূরার বিশেষ ফজিলত তুলে ধরা হলো-
সূরা ফাতিহা
বিজ্ঞাপন
সূরা ফাতিহা তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এক হাদিসে হজরত আবু সায়ীদ ইবনুল মুআল্লা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি একদিন মসজিদে নামাজ পড়ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগেই তোমাকে এমন একটি সূরা শেখাব, যা কোরআন মাজিদের সব থেকে মহান সূরা।... এরপর বললেন, (সেটি হল) আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন (অর্থাৎ সূরা ফাতিহা)। -(সহিহ বুখারি, হাদিস, ৪৪৭৪)
সূরা বাকারা ও আল ইমরান
পবিত্র কোরআনের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আরও দুইটি সূরা হলো- সূরা বাকারা ও আল ইমরান।
হজরত আবু উমামা বাহিলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করবে। কেননা, কিয়ামতের দিন তা তিলাওয়াতকারীদের জন্য সুপারিশকারীরূপে উপস্থিত হবে। সুপারিশকারী দুটি সমুজ্জ্বল সূরা বাকারা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করবে। কেননা, এ দুটি কিয়ামতের দিনে উপস্থিত হবে যেন সে দুটি ‘গামামা’ কিংবা (তিনি বলেছিলেন) সে দুটি ‘গায়ায়া’ (মেঘ) কিংবা যেন সে দুটি ডানা বিস্তারকারী দুটি পাখির ঝাঁক যারা তাদের তিলাওয়াতকারীদের পক্ষে সাহায্যকারী হবে। তোমরা সূরা বাকারা তিলাওয়াত করবে। কেননা, তা তিলাওয়াত করাতে বরকত রয়েছে। এবং তা বর্জন করা আফসোসের। কারণ বাতিলপন্থীরা তার সাথে কুলিয়ে উঠতে পারবে না।... (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৮০৪)
আরও পড়ুন
আয়াতুল কুরসী
আয়াতুল কুরসি কোরআনের কোনো সূরা নয়। বরং তা সূরা বাকারার একটি বিশেষ আয়াত। এর তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আবুল মুনযিরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবুল মুনযির, তুমি কি জানো আল্লাহর কিতাবের যে আয়াতগুলো তুমি হিফজ করেছ তার মধ্যে কোন আয়াত শ্রেষ্ঠ?
আবুল মুনযির বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন।
তিনি আবার বললেন, হে আবুল মুনযির, তুমি কি জানো আল্লাহর কিতাবের যে আয়াতগুলো তুমি হিফজ করেছ তার মধ্যে কোন আয়াত শ্রেষ্ঠ? তখন আমি আয়াতুল কুরসি পাঠ করলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে চাপড় দিয়ে বললেন, ইলম তোমার জন্য সহজ হোক হে আবুল মুনযির। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ৮১০)
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
হযরত আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পড়বে তার জন্য তা (রাতের আমল হিসেবে এবং সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে) যথেষ্ট হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৫০০৯)
সূরা কাহফ
হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সে মুক্ত থাকবে। (সহিহ মুসলিম, হাদীস, ৮০৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস, ৪৩২৩)
মুসাব্বিহাত এর সূরা (সূরা বানি ইসরাইল, যুমার, হাদিদ, হাশর, সফ, জুমআহ, তাগাবুন, আলা)
হজরত ইরবায ইবনে সারিয়া রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল মুসাব্বিহাত সূরাগুলো পাঠ না করে ঘুমাতেন না। আর তিনি বলতেন, এগুলোতে এমন একটি আয়াত রয়েছে যা হাজার আয়াত থেকেও শ্রেষ্ঠ। (জামে তিরমিজি, হাদিস, ৩৪০৬)
সূরা মূলক
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে। যে ব্যক্তি নিয়মিত সেই সূরা তিলাওয়াত করবে তার জন্য ক্ষমা আদায় করা পর্যন্ত সূরাটি সুপারিশ করতে থাকবে। সেই সূরা হল, ‘তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক’। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস, ১৪০০; জামে তিরমিজি, হাদিস, ২৮৯১; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৭৮৭)
আস সাজদাহ
হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তানযিল আস–সাজাদা ও তাবারাক সূরাদ্বয় পাঠ না করে ঘুমাতেন না। (জামে তিরমিজি, হাদিস, ৩৪০৪)
সূরা কাফিরুন
হজরত ফারওয়া ইবনে নাওফাল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমি আমার শয্যাগ্রহণের সময় বলতে পারি। তিনি বললেন, ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন সূরাটি পাঠ করবে। কেননা এটি হল শিরকের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা। (জামে তিরমিজি, হাদিস, ৩৪০৩)
সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস
আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন বিছানায় আসতেন, (ঘুমানোর আগে) সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে দুই হাতের তালুতে (একত্র করে) ফুঁ দিতেন। এরপর সেই দুই হাতে চেহারা ও পুরো শরীর যতদূর সম্ভব মুছে নিতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে গেলে আমাকে আদেশ করতেন, আমি তা (সূরাগুলো পড়ে হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে শরীর মোছার কাজ) করে দিতাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৫৭৪৮)
সূরা দুখান
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে হা–মীম আদ–দুখান পাঠ করবে সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস, ২৮৮৮)
সূরা ওয়াকিয়া
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবে তার ওপর অভাব আসবে না। (বায়হাকি, হাদিস, ২৪৯৭, তাফসিরে রুহুল মাআনি : ২/১২৮)
সূরা ইয়াসিন
হজরত জুনদুব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য রাতের বেলা সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ২৫৭৪, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৬/৫৬২)