কাতারের মেসাইমির কবরস্থানে শায়খ আল-কারজাভির লাশ বহনের দৃশ্য।

নিজের সমাজ-দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন এমন আলেমের সংখ্যা বেশ দীর্ঘ। তারা বেঁচে থাকার সময়ে তাদের শূন্যতা অনুভব হয় না খুব একটা। তবে তাদের বিদায়ে শূন্যতা তৈরি হয় ধীরেধীরে। যা সহসাই পূরণ হয় না। ২০৩০ সালের আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিদায় নেওয়া বরেণ্য আলেমদের তালিকা তুলে ধরা হলো এখানে-

পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ আলেম মাওলান এতহেরামুল হক থানবী

বছরের শুরুর দিকেই ইন্তেকাল করেন হাকিমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবি রহ.-এর নাতি পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ আলেম মাওলান এতহেরামুল হক থানবী। তার ইন্তেকাল হয় ৮ জানুয়ারি (রোববার)।

মাওলানা এহতেরামুল হক থানভি মাওলানা এহতেশামুল থানভির বড় ছেলে। মাওলানা ইহতিশামুল হক থানভি হাকিমুল উম্মত খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর ভাতিজা ও ছাত্র ছিলেন। তিনি জামিয়া এহতিশামিয়্যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কিছু দিনের জন্য পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পিটিআই করাচির সাথে যুক্ত ছিলেন।

তার বাবা মাওলানা এহতেশামুল থানভি ১৯৪৭ সালের ৯ আগস্ট করাচিতে আসেন। 

সৌদি দায়ি শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ

সৌদি আরবের বিশিষ্ট ইসলামী দায়ি শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ ইন্তেকাল করেন ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার)।  শায়খ আবদুল্লাহ বানামাহ সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদ ও প্রোগ্রামে ইসলাম বিষয়ক আলোচনা করতেন। ৩০ বছর আগে দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও সব প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে ধৈর্য ও অবিচলতার প্রতীক ছিলেন তিনি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে জায়গা করে নেন সবার মনে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শায়খ আবদুল্লাহর মৃত্যু-পূর্ব উপদেশ নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তরুণদের উপদেশ দিয়ে ভিডিওতে তিনি সবাইকে নামাজ আদায়, বাবা-মায়ের আনুগত্য ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখে তাওবার মাধ্যমে পাপ মুক্ত জীবন গড়ার আহ্বান জানান। তা ছাড়া আল্লাহর কাছে রমজান পর্যন্ত তার জীবন দীর্ঘ হওয়ার দোয়াও করেন। 

শায়খ আবদুল্লাহ বিন উমর বানামাহ ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই কারাতে ও কুংফুর প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল তার। ১৯৯৩ সালে একদিন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় তিনি গুরুতর আহত হন। সাঁতার কাটতে পুলে লাফ দেওয়ার সময় তার মাথায় আঘাত লেগে ঘাড় ভেঙে যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরপর তার পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার পর থেকে পুরো জীবন তিনি মানুষের মধ্যে ইসলাম প্রচারে কাজ করে যান। 

জীবনের গল্প বলতে গিয়ে বানামাহ সৌদি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ৩০ বছর আগে একদিন বাবার সামনে তার পকেট থেকে সিগারেটের লাইটার পড়ে যায়। তার বাবা লাইটার সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলেছিল, এটা তার বন্ধুর। তখন তার বাবা বলেছিল, তোমার বন্ধু সিগারেট খায় আর তোমার কাছে লাইটার! বরং তুমি মিথ্যা বলছ। তখন বানামাহ মিথ্যা শপথ করে বলে যে সে সত্য বলছে; সে ধূমপান করে না। একথা শুনে তার বাবা বলেছিল, তুমি মিথ্যা শপথ করলে আল্লাহ যেন তোমার ঘাড় ভেঙে দেন। এরপর একদিন বানামাহ স্কুল থেকে পালিয়ে বন্ধুদের নিয়ে সাঁতার কাটতে জেদ্দার একটি পার্কে যায়। সেখানকার পুলে লাফ দিলে তার ঘাড় ভেঙে রক্তক্ষরণ ঘটে এবং তার পুরো শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। 

সৌদির ইসলামী শিক্ষাবিদ ড. ফাতেমা নাসিফ

সৌদি আরবের নারী ইসলামী শিক্ষাবিদ কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ফাতেমা নাসিফ বিনতে উমর ইন্তেকাল করেন ৩১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার)। জেদ্দায় ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। সৌদি নারীদের মধ্যে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা প্রচারে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

আধুনিক যুগে নারীদের মধ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রসারে অগ্রনায়ক ছিলেন তিনি। সৌদির বাইরে বিভিন্ন আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রেও তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন আরব উপদ্বীপে দ্বিন প্রচারে অগ্রগামী নারীদের অন্যতম। ইসলামী শিক্ষা অনুসারে নারীদের গড়ে তোলার প্রচেষ্টার জন্য সবার কাছে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।

১৯৪৪ সালে জেদ্দার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক পরিসরে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি। উচ্চমাধ্যমিক স্তর শেষ করে রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি) থেকে ইতিহাসে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সেই সময় নারীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিহাস বিভাগ ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে ভর্তির সুযোগ ছিল না। তাই প্রথমে এই বিভাগেই স্নাতক করেন। পরবর্তীতে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে তিনি শরিয়াহ বিভাগে পুনরায় ভর্তি হন। 

এরপর ১৯৮২ সালে মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ বিভাগ থেকে কোরআন ও সুন্নাহ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি একাডেমিক ও প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রবীণ আলেম ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ আবদুল্লহ আল-খাওলি

মিশরের কায়রোতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক ও প্রবীণ আলেম ড. ইবরাহিম মুহাম্মদ আবদুল্লহ আল-খাওলি ইন্তেকাল করেন ৮ এপ্রিল (শনিবার)। ৯৩ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। 

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ড. সালামাহ দাউদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় আজ একজন বরেণ্য আলেমকে হারিয়েছে। ইসলামী জ্ঞানের জগতে তিনি ছিলেন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজন্ম। তাঁর গভীর পাণ্ডিত্ব এ যুগে সত্যিই বিরল। রোজা অবস্থায় তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেলেন।’ 

ড. ইবরাহিম আল-খাওলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তাকে আল-আজহারের প্রভাবশালী আলেমদের অন্যতম মনে করা হতো। 

১৯২৯ সালের ১৭ মে তিনি মিসরের গারবিয়া প্রদেশের মারকাজু সানতা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করে তিনি মাহাদ দাসুকে পড়াশোনা করেন। অতঃপর মাহাদ তানতায় উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়েন। ১৯৫২ সালে আল-আজহারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। 

১৯৭২ সালে তিনি বালাগাত ও নাকদ শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে সৌদি আরবের কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটি এবং ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। 

তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে- মানহাজুল ইসলাম ফিল হায়াত, লুজুমিয়্যাতু আবিল আলা, আস-সুন্নাতু বায়নান লিল কোরআন, আত-তারিদু ফিল কোরআনিল কারিম, মুতাশাবিহুল কোরআন।

অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের প্রধান মাওলানা রাবে হাসানি নদভী

ভারতের প্রখ্যাত আলেম, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের প্রধান, ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মহাপরিচালক মাওলানা রাবে হাসানি নদভী ইন্তেকাল করেন ১৩ এপ্রিল, ২১ রমজান (বৃহস্পতিবার)। 

মাওলানা রাবে হাসানি নদভী প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদদের একজন। তিনি সামাজিক জীবনে ইসলামী অনুসাশনের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলতেন, বর্তমানে মানুষ নামাজ রোজার মধ্যেই ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, এবং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ইসলামকে উপেক্ষা করে চলে। তিনি বিয়েতে যৌতুকের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এর বিপরীতে বাবার সম্পদে মেয়েদের অধিকার নিশ্চিতের প্রতি জোর দিতেন।

তিনি বলতেন, ইসলাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পথনির্দেশনা প্রদান করে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হালাল হারাম বাছ-বিচার করে চলা একজন মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।

মাওলানা রাবে হাসানি নদভী ১৯২৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মুফাক্কিরে ইসলাম খ্যাত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-এর ভাগিনা। তিনি অনেক গ্রন্থেরও লেখক ছিলেন।

তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী মক্কা মুকাররমার সদস্য ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ইসলামী সাহিত্য সংস্থা সৌদি আরবের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামিক রিসার্চ অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং কাউন্সিল, লখনউর ধর্মীয় শিক্ষা কাউন্সিল এবং ইসলামিক ফিকহ একাডেমী ভারতের পৃষ্ঠপোষকদের একজন ছিলেন।

তিনি নিজের পারিবারেই প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামাতে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে নদওয়াতে উচ্চতর শিক্ষা সমাপ্ত করেন, এরপর ১৯৪৮ সালে এক বছর দারুল উলুম দেওবন্দে ছিলেন। পড়াশোনা শেষে ১০৪৯ সালে নদওয়াতুল উলামাতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

এরপর তিনি ১৯৫০-১৯৫১ পর্যন্ত দাওয়াত ও তালিমের কাজে সৌদি আরব ও হিজাজ অঞ্চলে অবস্থান করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার আরবি ভাষা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। আরবি ভাষায় বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ইন্ডিয়া উত্তরপ্রদেশ কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

১৯৯৩ সালে তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। ২০০২ সালের জুন মাসে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সাবেক সভাপতি কাজী মুজাহিদুল ইসলাম কাসমির মৃত্যুর পর তিনি সর্বসম্মতিক্রমে এর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন।

১৯৭৩ সালে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য ইসলামি শরিয়া আইন সংরক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার লক্ষ্যে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড গঠিত হয়। এর মাধ্যমে মুসলিম ধর্মাবলম্বী সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা হয়। ভারতীয় মুসলিমদের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, পণ্ডিত, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য পেশার ব্যক্তিরা এর সদস্যদের মধ্যে আছেন।

মাওলানা রাবে হাসানি নদভী আমেরিকা, জাপান, মরক্কো, মালয়েশিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বহু আরব, ইউরোপীয় ও আফ্রিকান দেশ ভ্রমণ করেছেন।

নামাজে ইমামতির সময় মিশরের জনপ্রিয় কারী শায়খ আব্দুল্লাহ কামিলের ইন্তেকাল

মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন মিশরের জনপ্রিয় কারী শায়খ আব্দুল্লাহ কামিল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে নামাজে ইমামতি করার সময় ইন্তেকাল করেন তিনি।

আমেরিকা যাওয়ার কয়েকদিন আগে ১০ এপ্রিল কারী আবদুল্লাহ কামিলের একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। তিনি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করে বলেন, আল্লাহ আমাকে একটি পুত্র দিয়েছেন যার নাম আমি সুফিয়ান রেখেছি।

শায়খ আবদুল্লাহ আহমদ কামিল ১৯৮৫ সালে মিসরের আল-ফাইউম প্রদেশের ইউসুফ সিদ্দিক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জন্মগতভাবেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছিলেন। ছোটবেলায় ব্রেইল পদ্ধতিতে পুরো কোরআন হিফজ করেন। এরপর ২০০৫ সালে আল-ফাইউম বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুল উলুম কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে তিনি আল-ফজর চ্যানেলে সম্প্রচারিত কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। 

মরহুম শায়খ আবদুল্লাহ চলতি বছরের রমজানে ২৪ বার পবিত্র কোরআন খতম করেছেন। গত বছর তিনি ২৮ বার খতম করেছিলেন।’

শায়খ আবদুল্লাহ কুয়েত, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ গত রমজানে তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সেন্টার ও টিভি-চ্যানেলে তিনি নিয়মিত ইসলামী আলোচনা করতেন। মনমুগ্ধকর তিলাওয়াতের জন্য শায়খ আবদুল্লাহ অনলাইন ও অফলাইন সবখানে খুবই জনপ্রিয়। ইউটিউব চ্যানেলে তার তিলাওয়াতের অনেক ভিডিও রয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার তিলাওয়াত নিয়মিত সম্প্রচার হয়। 

মসজিদে নববীর সাবেক ইমাম শায়েখ মুহাম্মদ খলিলের ইন্তেকাল

মসজিদে নববীর সাবেক ইমাম শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ইন্তেকাল করেন ৮ মে (সোমবার)। শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ইসলামের প্রথম মসজিদ মসজিদে কুবার ইমাম হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এক সময়।

তিনি মসজিদে নববীতে তারাবি নামাজের ইমামের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।  শায়খ মুহাম্মদ খলিল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি ও তার ভাই মাহমুদসহ তার পরিবার থেকে দুজন মসজিদে নববীর ইমাম হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করছেন। তার ভাইও গত বছর ইন্তেকাল করেছেন।

পাঁচ বছর আগে তার আরেক ভাই আহমদ ইন্তেকাল করেন। তিনিও সৌদি আরবের জনপ্রিয় কারীদের একজন ছিলেন। মসজিদে নববীর এই ইমামের ইন্তেকালে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা শোক প্রকাশ করেছেন।

শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল তার সুললিত তেলাওয়াতের কারণে শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত ছিলেন। শায়েখ কারি মুহাম্মদ খলিল ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

আলজেরিয়ার প্রবীণ আলেম শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত 

আলজেরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী শীর্ষ আলেম শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ইন্তেকাল করেন ১৪ জুন (বুধবার)। ১০৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। 

তিনি ছিলেন ফরাসি উপনিবেশবিরোধী বিপ্লবের অন্যতম নেতা ও আলজেরিয়ান ফতোয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। ফরাসি উপনিবেশবিরোধী মুক্তি আন্দোলনের সময় তিনি মুক্তি বাহিনীর বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া স্বাধীন হওয়ার পর তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন।

আলজেরিয়ার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন আলজেরিয়ার জাতীয় চাঁদ দেখা ও ইসলামী সময় নির্ধারণকারী মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটির প্রধান। মহান আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ করুন এবং তাঁকে তাঁর প্রশস্ত জান্নাতের অধিবাসী করুন।

শায়খ মুহাম্মদ আত-তাহির আয়াত আলজাত ১৯১৭ সালে আলজেরিয়ার বেজাইয়া প্রদেশের তামাকরাহ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার দাদা শায়খ ইয়াহইয়া আইদালির তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। এরপর সাইয়িদি আহমদ বিন ইয়াহইয়াহ উমালুর কাছে প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। কনস্টানটিনোপলের কাছে বালাহমালাবির খানকা ও শায়খ ইবনে বাদিসের উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ফিকাহ, তাফসিরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে পড়েন।

এরপর ফরাসি উপনিবেশবিরোধী মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার পর তিনি মুক্তি বাহিনীর বিচারক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ সালে আলজাত নিজ দেশের মুক্তি সংগ্রামের সমর্থন জোগাড় করতে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে যান। সেখানে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফিসের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে আলজেরিয়া স্বাধীন হওয়ার পর তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন এবং রাজধানী আলজেয়ার্সে শিক্ষকতা শুরু করেন।

ইসলামের প্রচার-প্রসার, মালেকি ফিকাহের চর্চা ও বিস্তারের পাশাপাশি তিনি আমৃত্যু জাতীয় ফতোয়া কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তুরস্কে নকশবন্দি শায়খ আবদুল বাকি আল-হুসাইনি 

তুরস্কের নকশবন্দি তরিকার শায়খ আবদুল বাকি আল-হুসাইনি ইন্তেকাল করেন ১৫ জুলাই (বুধবার)  তিনি ছিলেন নকশবন্দি মানজিল তরিকার প্রবীণ শায়খ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর জানাজার ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে বিস্তীর্ণ স্থানজুড়ে বিপুল পরিমাণ মানুষকে জানাজার নামাজে অংশ নিতে দেখা যায়।

শায়খ আল-হুসাইনি ১৯৪৯ সালের ১ মে তুরস্কের আদিয়ামান শহরের মানজিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর থেকে তিনি জামাতে মানজিলের মুরশিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শায়খ মুহাম্মদ রাশিদ আওরালের মাধ্যমে নকশবন্দি মানজিল জামাত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের আদিয়ামান মানজিল গ্রামের দিকে সম্পৃক্ত করে এর নামকরণ করা হয়।

১৯৮০ সালের সামরিক বিপ্লবের পর দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে আধ্যাত্মিক দলটির কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। সামাজিক প্রভাব ও শিষ্যের সংখ্যার দিক থেকে মানজিল তুরস্কের বৃহত্তম আধ্যাত্মিক দলগুলোর অন্যতম। 

ইসলামী অর্থনীতিবিদ ড. আলি আল-সালুস

ইসলামী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ শায়খ ড. আলি আল-সালুস ইন্তেকাল করেন ৮৯ বছর বয়সে। তিনি আরববিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ফিন্যান্স ও অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।

সর্বশেষ তিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। 

ড. আলি বিন আহমদ আলি আল-সালুস ১৯৩৪ সালে মিসরে জন্মগ্রহণ করেন। কায়রোর বিশ্বখ্যাত কুল্লিয়াতু দারুল উলুম থেকে ১৯৫৭ সালে লিস্যান্স ও ১৯৬৯ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ সময় তিনি মিসরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর কুয়েতের হাই স্টাডিজ ইনস্টিটিউটে কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৮১ সাল থেকে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ফ্যাকাল্টিতে আমৃত্যু অধ্যাপনা করেন।

এ সময় তিনি ফিকাহ ও উসুল বিষয়ক শিক্ষক ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন শায়খ মুস্তফা জায়েদ, শায়খ মুহাম্মদ আবু জাহরা, শায়খ মুস্তফা জায়েদ, শায়খ আলি হাসবুল্লাহ, শায়খ মুহাম্মদ আল-মাদানি ও শায়খ উমর আল-দাসুকি। 

ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর ফিকাহ বোর্ডের ফিকাহ ও অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দি এসেম্বলি অব মুসলিম জুরিস্ট-এর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট, লন্ডনে অবস্থিত কাতার ইসলামিক সেন্টারের ট্রাস্টি, মিসরের শরিয়া কমিশন ফর রাইটস অ্যান্ড রিফর্মের প্রধান। 

ড. আলি আল-সালুস ইসলামী ফিকাহ, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো, ফিকাহুল শিয়াহ আল-ইমামিয়্যাহ মাওয়াদিয়ুল খিলাফ বাইনাহু ও বাইনাল মাজাহিবিল আরবায়াহ, আসরুল ইমামাহ ফিল ফিকহিল জাফরি ওয়া উসুলিহি, আল-ইমামাতু ইনদাল জাফারিয়্যাহ ওয়াল আদিল্লাতু মিনাল কোরআনিল আজিম, হুকমু আমালিল বুনুকি ফিল ফিকহিল ইসলামি, আল-মুয়ামালুতুল মালিয়্যাহ আল-মুয়াসারাহ ফি মিজানিল ফিকহিল ইসলামি, মাওসুয়াতুল কাজায়া ফিকহিয়্যাহ আল-মুয়াসারাহ ওয়াল ইকতিসাদিল আল-ইসলামী ইত্যাদি। 

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের লিগ্যাল এইড কমিটির প্রধান হাজী গুলজার আজমী

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের আইনি সহায়তা কমিটির (লিগ্যাল এইড টিম) প্রধান জনাব হাজী গুলজার আজমী ইন্তেকাল করেন ২০ আগস্ট (শনিবার)। 

হাজী গুলজার আজমী জীবদ্দশায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের লিগ্যাল টিমের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। এসময় তিনি বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতারকৃত নিরপরাধ মুসলমানদের কারাদণ্ডের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন। 

সিরিয়ার প্রভাবশালী আলেম ও দায়ী শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি

সিরিয়ার প্রসিদ্ধ আলেম ও দায়ী শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ইন্তেকাল করেন ২৬ আগস্ট (শনিবার)। সর্বশেষ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর তিনি কাতারের দোহায় মারা যান। 

তিনি ছিলেন সিরিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী আলেম। ইসলাম বিষয়ক আকর্ষণীয় বক্তব্য দিতেন তিনি। তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও ইসলাম প্রচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শায়খ আল-সাইরাফি ১৯৩০ সালে সিরিয়ার হামা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল সম্ভ্রান্ত ইলমী পরিবার।

ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষকে ইসলামের প্রতি ডাকতে অভ্যস্ত ছিলেন। তার হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও বিনয়ীভাব মানুষকে তার কাছে নিয়ে আসত। বিশুদ্ধ ভাষায় বক্তব্যের জন্য তিনি সবার মধ্যে সুপরিচিত ছিলেন। শায়খ মুহাম্মদ আল-হামিদ, শায়খ মুহাম্মদ আলী মুরাদসহ সমকালীন বিখ্যাত আলেমদের কাছ থেকে তিনি ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন।

১৯৫০ সালে তিনি দামেশক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ইসলামী শরিয়াহ, সাহিত্য, দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
শায়খ মুস্তফা আল-সাইরাফি ছাত্রাবস্থা থেকেই বিভিন্ন সাংগঠনিক তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন। তরুণদের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব গড়তে তিনি নিয়মিত হামা শহরের জামে আল-মাসউদে বক্তব্য দিতেন। তখনকার সময় বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে অনেক তরুণ ইসলামচর্চা শুরু করে।তখন তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে উঁচু পদের জন্য অফার করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৬৩ সালের মার্চে বাথ পার্টি সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিলে তার ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। পরের বছর তিনি প্রথমে আরব আমিরাত যান। এরপর পুনরায় দেশে ফিরে কাতার চলে যান। আমৃত্যু সেখানে তিনি বিভিন্ন ইসলামী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকেন। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকতা, দাওয়াতি কার্যক্রম, মসজিদের ইমামতিসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ তাজুদ্দিন হামিদ আল-হিলালি মিসরে ইন্তেকাল করেন ৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)। এর আগের দিন তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন করে নিজ বাড়িতে ফেরেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দীর্ঘ ৩১ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ ড. রাতিব জুনাইদ মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, শায়খ তাজ ১৯৮২-২০১৩ সাল পর্যন্ত একজন অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম কমিউনিটিতে ঐক্যের প্রাণ ছিলেন। ৪০ বছরের বেশি সময় তিনি এই দেশের মুসলিমদের সেবায় কাজ করেছেন। আমি নিজেও তার সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ বছর কাজ করেছি। যারা ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন, তিনি কতটা রসিক ও উদার ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, শায়খ আল-হিলালি সব সময় কমিউনিটির সেবার জন্য উদগ্রীব থাকতেন। তিনি খুব সহজেই তার বক্তব্যের মাধ্যমে জনসাধারণকে আকর্ষণ করতে পারতেন। মুফতি ও ইমামের দায়িত্ব থেকে অবসরের পর তিনি উত্তর আফ্রিকায় ধর্মীয় তাৎপর্য নিয়ে ঐতিহাসিক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত হন এবং মিসরের গ্রামাঞ্চলে মানবিক কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় মুসলিমদের শিক্ষা, পরামর্শসহ নানাভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন।

শায়খ তাজুদ্দিন আল-হিলালি মিসরের সাওহাজ অঞ্চলের সামাতে ১৯৪০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে পবিত্র কোরআন হিফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া ও আইন বিষয়ে ‘আলামিয়াহ’ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর আরবি ভাষা ও ফিকহুল মুকারিন বিষয়ে উচ্চতর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। তিনি মিসরের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইমাম হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজে আরবি ভাষা ও ইসলামি ফিকহের শিক্ষকতা করেন।

১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত লাকেমবা মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এদিকে ১৯৬৯ সাল থেকে শায়খ জায়দান শারীরিক অসুস্থতার কারণে অস্ট্রেলিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না। অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন অব ইসলামিক কাউন্সিল ১৯৮৮ সালে শায়খ আল-হিলালিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত করে। মুসলিম কমিউনিটির সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ২০০৫ সালে শায়খ আল-হিলালিকে বর্ষসেরা মুসলিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে ‘অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস’ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে তিনি লাকেমবা মসজিদের ইমামতি থেকে অব্যাহতি নেন।

সাহারানপুর মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি

ভারতের প্রাচীনতম ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাজাহেরুল উলুম, সাহারানপুরের মহাপরিচালক মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি ইন্তেকাল করেন ৬ অক্টোবর (শুক্রবার)। তিনি ছিলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলভি (রহ.)-এর নাতি ও মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.)-এর জামাতা।

মাওলানা সাইয়েদ শাহেদ আল-হাসানি (রহ.) ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসায় তিনি প্রথম শ্রেণি থেকে দাওয়ারায়ে হাদিস পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭০ সালে সেখানে শিক্ষকতা শুরু করেন।

১৯৯৩ সাল থেকে তিনি মাদারাসাটির ‘আমিন আম’ (মহাপরিচালক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন অনন্য যোগ্যতার অধিকারী নিভৃতচারী একজন আলেম। মাজাহেরুল উলুম মাদরাসার উন্নতি ও অগ্রগতি এবং দ্বিনি ইলম বিস্তারে গ্রন্থ রচনা ও গবেষণায় তিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেন। ভারতের বৃহত্তম মুসলিম সংস্থা অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ও জমিয়ত উলামা হিন্দের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।

কোরআন, হাদিস, দাওয়াত, তাসাউফসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাহরিকে আজাদিয়ে হিন্দ, বুখারি শরিফ, মাকতুবাতে ইলমিয়্যাহ, হজরত জি সালেস কি ওয়াফাত আওর ফিতনুন বারসাত, আপবিতি খুদ নশত, আকাবির কে খুতুত, সাওয়ানেহে হজরত মাওলানা ইনআমুল হাসান, তারিখে মাশায়েখে চিশত, উলামায়ে মাজাহেরে সাহারানপুর, মাকতুবাতে তাসাউফ, মাকতুবাতে শায়খসহ তার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। গত বছর তার আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়।