জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম-বিধান
ইসলামে জানাজার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। মৃতের মাগফিরাতের জন্য জানাজা ও কাফন-দাফন ইত্যাদি সম্পন্ন করা জীবিত মুসলিমদের ওপর মৃতের অধিকার। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অবশ্যিক পালনীয় ফরজ (কেফায়া)। তাই কোনো মুসলমান মারা গেলে, তার জানাজা অবশ্যই আদায় করতে হবে।
জানাজার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও মাগফিরাত। একাধিক মৃতের জানাজা একসঙ্গে পড়া যায়। মহল্লার ইমাম জানাজা পড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি হকদার। এরপর মৃতের ওলি বা আত্মীয়-স্বজন। তবে ওলি-আত্মীয় ইমামের চেয়ে বেশি দ্বীনদার হলে তার-ই বেশি হক।
বিজ্ঞাপন
কাউকে জানাজা পড়ানোর জন্য মৃত অসিয়ত করে গেলে, তা কার্যকর করা জরুরি নয়। একান্ত প্রয়োজনে পুরুষের অনুপস্থিতিতে নারীরাও জানাজা পড়াতে পারবেন। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২২২, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৩৮)
লাশের প্রকারভেদে করণীয়
মৃতের প্রকারভেদে শরিয়তে বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। মাথাহীন লাশের বেশির ভাগ পাওয়া গেলে বা মাথাসহ অর্ধেক শরীর পাওয়া গেলে তার গোসল, কাফন ও জানাজা সবই করতে হয়। আর মাথাহীন অর্ধেক বা তার চেয়ে কম অংশ পাওয়া গেলে এসব করতে হয় না। বরং কোনো কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হয়। আর মৃত নাস্তিক-মুরতাদের গোসল-জানাজা ছাড়াই গর্ত করে কবরস্থ করতে হয়। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৯২)
কোনো নারী যদি সতীত্ব রক্ষা করতে গিয়ে আত্মহত্যা করেন, তাহলে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে দুশ্চরিত্র ও বখাটের হাতে নিহত নারী শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। কেউ আত্মহত্যা করলে সাধারণ মুসলমানের নিয়মে তারও গোসল, কাফন-জানাজা ও দাফন করতে হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২)
জানাজার ফরজ-সুন্নত
জানাজার নামাজের ফরজ দুইটি। এক. চারবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। দুই. দাঁড়ানো। জানাজা সহিহ হওয়ার জন্য লাশ উপস্থিত থাকা শর্ত।
জানাজার সুন্নত তিনটি। এক. আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া। দুই. নবীজি (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া। তিন. মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। (ইলাউস সুনান : ৮/১৭৪)
জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম
জানাযা নামাজ পড়ার পদ্ধতি হলো- জানাজার নামাজ আদায়ের আগে মৃতকে কিবলার দিকে জমিনে রাখতে হবে। ইমাম তার বক্ষ বরাবর দাঁড়াবেন। এরপর জানাজার নিয়ত করতে হবে। নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট। মুখে আলাদা করে উচ্চারণ করতে হয় না; তবে কেউ করলে অসুবিধা নেই।
নিয়ত এভাবে করা যায়- ‘আমি জানাজার ফরজে কিফায়া নামাজ চার তাকবিরের সঙ্গে কিবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।’
তাকবির বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত ওঠাতে হয়। এরপর নাভির নিচে হাত বেঁধে সানা (নামাজের) পড়তে হয়। তবে সানার মধ্যে ‘ওয়া তাআলা জাদ্দুকা’-এর পর ‘ওয়া জাল্লা সানাউকা’ও পড়তে হয়। এরপর তাকবির বলে দরুদে ইবরাহিম পড়তে হয়। তারপর তাকবির বলে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। চতুর্থ তাকবির বলে ডানে-বাঁয়ে সালাম ফেরাতে হয়।
লক্ষণীয় যে, কেউ যদি ইমাম চতুর্থ তাকবির বলার পর সালাম ফেরানোর আগ মুহূর্তেও তাকবির বলতে পারেন, তাহলে সে জানাজা পেয়েছে বলে গণ্য হবে। আর কেউ দেরি করে ফেললে তখন লাশ উঠিয়ে নেওয়ার আগে সানা, দরুদ ও দোয়াসহ তাকবির বলে সালাম ফেরাতে পারলে, তা-ই করে নিতে হবে। যদি লাশ উঠিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে শুধু তিন তাকবির বলে সালাম ফিরিয়ে নেবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/১১৬)