সূরা আদিয়াতে মানুষের যে অকৃতজ্ঞ স্বভাবের কথা বর্ণিত হয়েছে
সূরা আদিয়াত পবিত্র কোরআনে ১০০ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১১। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এটি পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারায় অবস্থিত।
সূরা আদিয়াত
বিজ্ঞাপন
وَالۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ۙ ١ فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا ۙ ٢ فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا ۙ ٣ فَاَثَرۡنَ بِہٖ نَقۡعًا ۙ ٤ فَوَسَطۡنَ بِہٖ جَمۡعًا ۙ ٥ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّہٖ لَکَنُوۡدٌ ۚ ٦ وَاِنَّہٗ عَلٰی ذٰلِکَ لَشَہِیۡدٌ ۚ ٧ وَاِنَّہٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ ؕ ٨ اَفَلَا یَعۡلَمُ اِذَا بُعۡثِرَ مَا فِی الۡقُبُوۡرِ ۙ ٩ وَحُصِّلَ مَا فِی الصُّدُوۡرِ ۙ ١۰ اِنَّ رَبَّہُمۡ بِہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّخَبِیۡرٌ ٪
সূরা আদিয়াতের অর্থ :
শপথ সেই ঘোড়াসমূহের, যারা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ায়। তারপর যারা (খুরের আঘাতে) অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উৎক্ষিপ্ত করে। তারপর প্রভাতকালে আক্রমণ চালায়। এবং তখন ধুলো উড়ায়। তারপর সেই সময়ই (শত্রু সৈন্যের) কোন ভীড়ের মাঝখানে ঢুকে পড়ে। মানুষ তার প্রতিপালকের বড়ই অকৃতজ্ঞ। এবং সে নিজেই এ বিষয়ে সাক্ষী। এবং বস্তুত সে ধন-সম্পদের ঘোর আসক্ত। তবে কি সে সেই সময় সম্পর্কে জ্ঞাত নয়, যখন কবরে যা-কিছু আছে তা বাইরে উৎক্ষিপ্ত হবে। এবং বুকের ভেতর যা-কিছু আছে, তা প্রকাশ করে দেওয়া হবে? নিশ্চয়ই তাদের প্রতিপালক সে দিন তাদের (যে অবস্থা হবে, সে) সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত।
সূরা আদিয়াতে মানুষের যে অকৃজ্ঞ স্বভাবের কথা বর্ণিত হয়েছে
এ সূরায় আল্লাহ তায়ালা সামরিক অশ্বের কিছু বিশেষ অবস্থা বর্ণনা করেছেন এবং তাদের শপথ করে বলেছেন যে, মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। একথা বার বার বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টির মধ্য থেকে বিভিন্ন বস্তুর শপথ করে বিশেষ ঘটনাবলী ও বিধানাবলী বৰ্ণনা করেন। এটা আল্লাহ তায়ালারই বৈশিষ্ট্য। মানুষের জন্য কোনো সৃষ্টবস্তুর শপথ করা বৈধ নয়।
আরও পড়ুন
এখানে সামরিক অশ্বের কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠার কথা উল্লেখ যেন মানুষের অকৃতজ্ঞতার সাক্ষ্যস্বরূপ করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা এই যে, অশ্ব বিশেষত, সামরিক অশ্ব যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষের আদেশ ও ইঙ্গিতের অনুসারী হয়ে কত কঠোর পরিস্থিতি সামলিয়ে থাকে। অথচ এসব অশ্ব মানুষ সৃষ্টি করেনি। তাদেরকে যে ঘাস-পানি মানুষ দেয়, তাও তার সৃজিত নয়। আল্লাহর সৃষ্টি করা জীবনোপকরণকে মানুষ তাদের কাছে পৌছে দেয় মাত্র।
এখন অশ্বকে দেখুন, সে মানুষের এতটুকু অনুগ্রহকে কিভাবে চিনে এবং স্বীকার করে। তার সামান্য ইশারায় সে তার জীবনকে সরাসরি বিপদের মুখে ঠেলে দেয়, কঠোরতর কষ্ট সহ্য করে। পক্ষান্তরে মানুষের প্রতি খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে এক ফোটা তুচ্ছ বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস তার জন্য সহজলভ্য করে তার কাছে পৌছে দিয়েছেন। কিন্তু সে এতসব উচ্চস্তরের অনুগ্রহেরও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
এই সূরাতে মানুষের অকৃতজ্ঞতার আরেকটি ধরণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মানুষ বিপদাপদ ও কষ্টের কথা স্মরণ রাখে কিন্তু তার প্রতি করা অনুগ্রহ ও নিয়ামতের কথা ভুলে।
(তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৮/৮৪৭)
এনটি