প্রতীকী ছবি

কারো জ্বর, ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্য জটিল পর্যায়ে চলে গেলে এবং এ কারণে যদি কোনোভাবেই মুখে ওষুধ খাওয়ানো সম্ভব না হয় অথবা রোগী অচেতন হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে সাপোজিটর প্রয়োগ করা হয়। 

পায়ুপথে সাপোজিটরি ব্যবহার করা হয়। মূলত পায়ুপথের আশপাশে রক্তনালি বেশি থাকে। ফলে সাপোজিটরি দ্রত রক্তে মিশে কাজ করতে পারে এবং জ্বর বা ব্যথা দ্রুত কমাতে পারে।

পায়ূপথের মাধ্যমে সাপোজিটরি ব্যবহারের কারণে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগে থাকে এর মাধ্যমে অজু ভাঙে কিনা। এ বিষয়ে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলে থাকেন, যদি সাপোজিটরি প্রবেশ করানোর সময় ভিতর থেকে ময়লা বের হয় তাহলে এর অজু ভেঙে যাবে। কারণ প্রস্রাব-পায়খানা অথবা উভয় রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হলে তা অজু ভেঙে যাবার কারণ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। যদি এমনটি না হয়, অর্থাৎ ভিতর থেকে ময়লা বের না হয়, তাহলে এ কারণে অজু ভাঙবে না। বাদায়ে সানায়ে, ১/২৪,  আদ দুররুল মুখতার ওয়া হাশিয়াতু ইবনে আবিদীন, ১/১৪৯)

অজু ভঙ্গের কারণ 

ভাঙার কারণ কয়টি ও কী কী তা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এখানে তা সংক্ষেপে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

মৌলিকভাবে অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথাক্রমে-

এক. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া

যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া, হাদিস : ১/৭)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০৬ )

আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।’ (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস : ৫৬৮)

দুই. রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)

আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১১০)

তিন. মুখ ভরে বমি করা

আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২২১)

চার. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া

হাসান বসরি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৩৩০)

পাঁচ. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০২)

ছয়. পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে

হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৯৩)

সাত. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে

ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’ (সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)

এনটি