রমজানকে যেভাবে স্বাগত জানাবেন
পবিত্র রমজানুল মুবারক। বছরের অন্য এগারো মাসের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতময়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস হলো- সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যখন রমজানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)
বিজ্ঞাপন
অন্য হাদিসে এসেছে—
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেলো অথচ নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি, সে হতভাগা।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৯০৮)
গুনাহ মাফ ও ক্ষমা অর্জনের মাস
তাই এ মাস হেদায়েত প্রাপ্তির মাস, গুনাহ মাফের ও ক্ষমা অর্জনের মাস। আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকত লাভের মাস এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার মাস। সুতরাং এ মাসে অধিক ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা এবং তাওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে ক্ষমা অর্জন লাভে সচেষ্ট হওয়া সবার কর্তব্য।
এ মাসের রোজাকে আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেনো এ মাসে রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
তাই প্রত্যেক সুস্থ ও বালিগ মুসলিম নর-নারীর জন্য রোজা রাখা অপরিহার্য। বলাবাহুল্য যে, ফরজ ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহতায়ালার সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করে। কাজেই নফল ইবাদতে কিছু ত্রুটি হলেও ফরজ-ওয়াজিবে ত্রুটি হওয়া উচিত নয়। বরং গুরুত্বের সঙ্গে তা পালন করা উচিত।
অনাচার-অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা
পানাহার ও স্ত্রীসহবাস থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সর্বপ্রকার অনাচার-অশ্লীলতা থেকেও বেঁচে থাকা রোজাদারের কর্তব্য। রাসুল (সা.)-এর এ বাণী রোজাদারের সর্বদা স্মরণ রাখা কর্তব্য, ‘রোজা শুধু পানাহার ত্যাগের নাম নয়, বরং অশ্লীল ও অর্থহীন কাজ থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি।’ সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১৯৯৬)
অতএব কেউ যদি রোজাদারের সঙ্গে ঝগড়া করতে থাকে কিংবা মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করতে থাকে, তখন এ কথা ভেবে নিজেকে সংযত রাখবে যে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৪৭০)
কাজেই রোজাদারের রোজার পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকমের অন্যায়-অশোভন কাজ থেকে বিরত থাকাও কর্তব্য।
রোজাদার চোখ, মুখ, কান ও প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত করে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে হবে, যাতে সে মহানবী (সা.) এর ঘোষিত এই সাবধান বাণীর আওতায় না পড়ে যায় যে, ‘কোনো কোনো রোযাদার এমনও আছে, রোজা দ্বারা যার শুধু ক্ষুৎপিপাসায় অর্জিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজা, হাদিস : ১৬৯০)
সব ধরনের গুনাহ থেকে দূরে
আল্লাহ তাআলা রমজানকে খায়ের ও বরকত, তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন এবং মুমিনের জন্য গোটা বছরের ইমানি শক্তি অর্জনের কেন্দ্র বানিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘এ মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, ‘হে কল্যাণ-অন্বেষী, অগ্রসর হও; হে অকল্যাণের পথিক, থেমে যাও।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮২)
এসবের প্রভাবে রমজান মাসে চেতনে বা অবচেতনে ভালো কাজের দিকে আগ্রহ বাড়তে থাকে। যারা সৌভাগ্যবান, তারা এই আসমানি আহ্বানকে মূল্য দেয় এবং ইবাদত-আমল অব্যাহত রাখে। হাদিসের ভাষায়, ‘আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানের জন্য এর চেয়ে উত্তম মাস আর নেই আর মুনাফিকের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই। মুসলমান এ মাসে ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সঞ্চয় করে (গোটা বছরের জন্য)।’
হাদিসে আরো এসেছে, ‘এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত এবং মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ : ২/৩৩০) হাদিসের মর্মার্থ হলো, রমজানের কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত থাকা মুনাফেকির প্রমাণ বহন করে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মুনাফিকি (বিশ্বাসঘাতকতা) থেকে রক্ষা করুন এবং মুমিনের মতো এ মাসকে স্বাগত জানানোর তাওফিক দান করুন। মুমিনের মতোই এই মূল্যবান সময় কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। পাশাপাশি মাহে রমজান সবার জীবনে মোবারক হোক। শুভ, কল্যাণকর ও ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনুক। ব্যক্তি ও সমাজজীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা ও আবিলতা দূর হয়ে যাক। মাহে রমজানের শিক্ষায় সবার চিন্তা-চেতনা, কথা-কাজ ও আচরণ-উচ্চারণে আলোকিত হয়ে উঠুক।