প্রতীকী ছবি

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মদ সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ। কোরআনে যেসব বিষয়কে স্পষ্টভাবে হারাম বলা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো মদ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা ও লটারির তীর তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন কর-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা মায়েদা, আয়াত, ৯০)

যেসব বস্তু সেবনে উন্মত্ততা সৃষ্টি হয় ও বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে অথবা বোধশক্তির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, পরিভাষায় সেগুলোকে মাদকদ্রব্য বলা হয়। ইসলাম সব ধরনের মাদকতা তথা নেশাদ্রব্য হারাম ঘোষণা করেছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'প্রত্যেক নেশাদ্রব্যই মদ, আর যাবতীয় মদই হারাম।' (মুসলিম ও মেশকাত, হাদিস, ৩৬৩৮)

বর্তমানে খোলা মার্কেটে অনেককে মদের বোতল বিক্রি করতে দেখা যায়। কম দামে সেখান থেকে বোতল কিনে অনেকেই এতে পানি রাখেন। তবে মদ যেহেতু স্পষ্ট হারাম তাই এর বোতলে পানি রাখার বিধান নিয়ে অনেকে সন্দেহে পড়ে যান। এ বিষয়ে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন-

বোতলটি প্রথমে হারাম কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে তা ব্যবহার না করাই উত্তম এবং এমন বোতল এড়িয়ে চলাই উচিত। কারণ, এমন বোতল অনেক সময় হারাম কাজের দিকে আগ্রহ তৈরি করে এবং মানুষের মনে কুমন্ত্রণা তৈরিতে সহায়ক হতে পারে। তাই যথাসম্ভব মদের বোতলে পানি না রাখার চেষ্টা করা উচিত। আলেমরা এমন বোতল ব্যবহার না করার প্রতিই উৎসাহিত করেন।

তবে কেউ যদি ভালোভাবে মদের বোতল পরিস্কার করে, পরিস্কারের পর এই বোতলে মদের কোনো চিহ্ন এবং গন্ধ না থাকে, তাহলে এমন পাত্র বা বোতলে পানি রাখা এবং তা থেকে পান করা যাবে।

এক হাদিসে হজরত আবু সালাবা খুশানী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিগেস করলাম যে, আমরা আহলে কিতাবদের প্রতিবেশী, তারা তাদের হাঁড়িতে শূকরের গোশত রান্না করে ও তাদের পাত্রে মদপান করে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তোমরা তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র পাও, তবে তোমরা তাতে পানাহার করবে। আর যদি তোমরা তাদের পাত্র ছাড়া অন্য পাত্র না পাও, তবে তোমরা তা ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে পবিত্র করে তাতে পানাহার করতে পার।’ (আবু দাউদ, হাদিস,৩৮৩৯; ইরওয়া, হাদিস, ৩৭; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত, হাদিস, ৪০৬৬)।

ইসলামের প্রথম যুগে মদের পাত্রে রাখা পানি পান করতে নিষেধ করা হয়েছিল। ইসলামের প্রথম যুগে মূলত ৩টি কারণে মদের পাত্রে রাখা পানি পান করতে নিষেধ করা হয়েছিল।

এক. সেসব পাত্রে মদের চিহ্ন অবশিষ্ট ছিল।

দুই. সে সময় সবেমাত্র মদ হারাম করা হয়েছিল। তাই মদের পাত্রে পানি পান করলে মদের কথা স্বরণ হয়ে যেতে পারত। তাই সতর্কতামূলক এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

তিন. মদের প্রতি যেন পরিপূর্ণ ঘৃণা সৃষ্টি হয়, সেজন্য তখন মদের পাত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে যখন মদ হারাম হওয়ার বিষয়টি সবার জানা হয়ে যায়, এবং সাহাবিদের মধ্যে মদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা জন্মে যায়, তখন ওই সব পাত্র ভালোভাবে পরিস্কার করে তাতে রাখা পানি পান ইত্যাদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। (তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম : ৩/৩৫১)

এ বিষয়ে হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ইরশাদ করেছেন, ‌'আমি তোমাদের কিছু পাত্রের ব্যাপারে (মদ রাখার পাত্র) নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলাম। আসলে পাত্র কোনো কিছুকে হালাল বা হারাম করতে পারে না। তবে প্রতিটি মাদকদ্রব্য হারাম।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর : ৫৩২৬, তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ১৮৬৯)

এনটি