মসজিদুল আকসা, ছবি : শাটারস্টক

বনি ইসরায়েল বা ইহুদি জাতিকে আল্লাহ তায়ালা যেসব কারণে অভিশপ্ত করেছেন তার অন্যতম একটি কারণ হলো, নবীদের হত্যা। নবীরা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বাণী, বিধি-নিষেধ জানিয়ে সতর্ক করার পর তাদের অপছন্দ হলে তারা নবীদের অস্বীকার করে বসতো এবং তাদের যতভাবে কষ্ট দেওয়া যায়, তাওহীদের বাণী প্রচারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যায়, তাই করতো। এমনকি নবীর বাণী গ্রহণের মতো মানসিকতা না থাকলে সেই নবীকে হত্যা করতো নির্দ্বিধায়।

এই অবাধ্য ও পাপাচারী সম্প্রদায় অসংখ্য নবী-রাসূলকে হত্যা করেছিল। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

 وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ وَ قَفَّیۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهٖ بِالرُّسُلِ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدۡنٰهُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ اَفَکُلَّمَا جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَهۡوٰۤی اَنۡفُسُکُمُ اسۡتَکۡبَرۡتُمۡ فَفَرِیۡقًا کَذَّبۡتُمۡ ۫ وَ فَرِیۡقًا تَقۡتُلُوۡنَ 

‘আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে ক্রমান্বয়ে রাসুলদের প্রেরণ করেছি, মরিয়ম পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছি। যখনই কোনো রাসুল এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের পছন্দ নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ এবং একদল নবীকে তোমরা অস্বীকার করেছ, একদল নবীকে হত্যা করেছ।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ৮৭)

পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 

 وَ ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الذِّلَّۃُ وَ الۡمَسۡکَنَۃُ ٭ وَ بَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقۡتُلُوۡنَ النَّبِیّٖنَ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ ؕ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوۡا وَّ کَانُوۡا یَعۡتَدُوۡنَ

আর তাদের উপর লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য আপতিত হলো এবং তারা আল্লাহর গযবের শিকার হল। এটা এ জন্য যে, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করত এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করার জন্যই তাদের এ পরিণতি হয়েছিল। (সূরা বাকারা, আয়াত, ৬১)

 
অভিশপ্ত এই জাতির নবীদের হত্যা করার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, 

 فَبِمَا نَقۡضِهِمۡ مِّیۡثَاقَهُمۡ وَ کُفۡرِهِمۡ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ قَتۡلِهِمُ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ وَّ قَوۡلِهِمۡ قُلُوۡبُنَا غُلۡفٌ ؕ بَلۡ طَبَعَ اللّٰهُ عَلَیۡهَا بِکُفۡرِهِمۡ فَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ اِلَّا قَلِیۡلًا

(তাদের প্রতি আল্লাহর অসন্তোষ নেমে এসেছে) তাদের ওয়া‘দা ভঙ্গের কারণে, আর আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করার কারণে, অন্যায়ভাবে নাবীগণকে তাদের হত্যা করার কারণে, আর ‘আমাদের হৃদয়গুলো আচ্ছাদিত’ তাদের এ কথা বলার কারণে- বরং তাদের অস্বীকৃতির কারণে আল্লাহ তাদের হৃদয়গুলোতে মোহর মেরে দিয়েছেন। যে কারণে তাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া ঈমান আনে না। ( সূরা নিসা, (৪), আয়াত, ১৫৫)

আরেক সূরায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الذِّلَّۃُ اَیۡنَ مَا ثُقِفُوۡۤا اِلَّا بِحَبۡلٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ حَبۡلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الۡمَسۡکَنَۃُ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقۡتُلُوۡنَ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ ؕ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوۡا وَّ کَانُوۡا یَعۡتَدُوۡنَ

আল্লাহর অনুকম্পা ও মানুষের আশ্রয় ছাড়া যেখানেই তারা অবস্থান করুক, সেখানেই তারা হয়েছে লাঞ্ছিত, তারা আল্লাহর ক্রোধে পরিবেষ্টিত এবং তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দারিদ্রের কশাঘাত। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখ্যান করতো এবং নবিদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতো, এটা এজন্য যে, তারা অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করতো। (সুরা আলে ইমরান,আয়াত, ১১২)

অভিশপ্ত বনি ইসরায়েলের হাতে নিহত নবীর সংখ্যা শতাধিক ছিল। এ বিষয়ে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত সূত্রে জানা যায় , বনি ইসরায়েল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম: ১/১২৬, তাফসিরে বয়ানুল কোরআন: ২/৩৬৭-৩৬৮)

অভিশপ্ত ইহুদিরা কোন কোন নবীকে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে কোরআন বা হাদিসে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কাজি নাসিরুদ্দিন বায়যাবি রহিমাহুল্লাহ তার তাফসিরগ্রন্থে লিখেছেন, ইহুদিদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার উল্লেখযোগ্য তিন জন নবী হলেন, আশইয়া আলাইহিস সালাম, জাকারিয়া আলাইহিস সালাম এবং তার ছেলে ইয়াহিয়া আলাইহিস সালাম।

এনটি