আল আকসা প্রাঙ্গণে অবস্থিত ‘ডোম অফ দ্য রক’ বা ‘কুব্বাতুস সাখরা’

মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নবীজির চাচা আবু তালেব ও সহধর্মীনী খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার মৃত্যুর পর মক্কার কাফেরদের অত্যাচার নির্যাতন বেড়ে যায়। তখন হিজরতের ছয়মাস আগে মেরাজের ঘটনা সংঘটিত হয়। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার হাবীবের প্রতি এই ঘটনা ছিলো বিশেষ উপহার বা শান্ত্বনা।

এক রাতেই সংঘটিত হয় মেরাজের ঘটনা। এই রাতে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বোরাক নামক এক প্রাণীতে চড়িয়ে প্রথমে মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান। সেখানে বোরাকটি বেঁধে রাখেন তিনি। এরপর মসজিদুল আকসায় প্রবেশ করেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সেখানে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখূলুল মসজিদ নামাজ আদায় করেন।

এখান থেকে বের হয়ে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এক বিশেষ ধরনের সিঁড়িতে চড়িয়ে নবীজিকে নিয়ে আকাশ ভ্রমণে যান। এই ভ্রমণে প্রত্যেক আকাশে একজন করে নবীর সঙ্গে দেখা হয় প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সবার সঙ্গে নবীজির পরিচয় করিয়ে দেন। এই ভ্রমণে আল্লাহ কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে আসেন তিনি।

পুরো ভ্রমণ শেষে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরে আসেন। এ সময় বিভিন্ন আসমানে সাক্ষাৎ হওয়া নবীরা তাকে বিদায় সম্বর্ধনা জানাবার জন্য বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত আগমন করেন। তখন নামাজের সময় হয়ে যায় এবং তিনি নবীদের সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করেন। এই নামাজ সেদিনের ফজর নামাজ হতে পারে বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন।

বিখ্যাত তাফসিরকারক আল্লাম ইবনে কাসীর বলেন, নবীদের নিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের ইমামতির ঘটনাটি কারো মতে আসমানে যাওয়ার আগে সংঘটিত হয়। কিন্তু এ ঘটনাটি মূলত ফেরার পথে ঘটে। 

কারণ, আসমানে নবী-রাসূলগণের সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনায় একথাও বর্ণিত রয়েছে যে, জিবরীল সব নবীদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেন। ইমামতির ঘটনা প্রথমে হয়ে থাকলে এখানে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। 

এছাড়া এই ভ্রমণের আসল উদ্দেশ্য ছিল, উর্ধ্ব জগতে গমন করা। কাজেই এ কাজটি প্রথমে সেরে নেয়াই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। আসল কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর সব নবীদের বিদায় দেওয়ার জন্যে তার সঙ্গে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত আসেন এবং জিবরাঈল আলাইহিস সালামের ইঙ্গিতে  মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সবার ইমাম বানানো হয়।

এর মাধ্যমে মূলত নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়া হয়। এরপর তিনি বায়তুল মোকাদ্দেস থেকে বিদায় নেন এবং বোরাকে চড়ে অন্ধকার থাকতেই মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে যান।

(তাফরিরে মাআরিফুল কোরআন, ৫ম-খণ্ড, ৪৩১, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৩-খণ্ড, ২৬৮, তাফসিরে মাযহারী, ৭ম-খন্ড, ৬৬৯)