প্রতীকী ছবি

প্রিয় নবী সা. যেভাবে উত্তম আচরণের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছেন উম্মতকে তা সবার জানা উচিত। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করেছেন এবং করার শিক্ষা দিয়েছেন।

 আখলাকে হাসানার (সুন্দর আচরণ) উপমা ছিলেন তিনি। তার সদাচার ও মহানুভবতায় সবাই অভিভূত হয়েছে সবসময়। আল্লাহ তায়ালা নবীজির চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত। (সূরা কলম, আয়াত, ৪)

প্রিয় নবীর চরিত্রকে তুলনা করা হয় আখলাকে হাসানা বা সদাচারের সঙ্গে। এই সংজ্ঞার অধীনে সুন্দর আচরণ, উত্তম চরিত্র, নৈতিকতা সবই অন্তর্ভুক্ত। আখলাকে হাসানার সৌরভে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সবাইকে সুরভিত করেছেন, তেমনি তার শিক্ষাও ছড়িয়ে গিয়েছেন আজীবন। 

আল্লামা মনযুর নোমানী রহ. বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের পর যেসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন আখলাকে হাসানা বা সদাচার তার মধ্যে অন্যতম। আখলাকে হাসানার ওপর মানুষের সৌভাগ্য ও সফলতা নির্ভর করে বলে উল্লেখ করেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আখলাকে হাসানার শিক্ষা ও আদর্শে গড়ে তুলেছিলেন তিনি তার সাহাবি বা একান্ত সহরচদের।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলেছেন, আমাকে আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন উত্তম আখলাক (সদাচার)-এর পূর্ণতা বিধান করতে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ৮৯৫২) 

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো অশ্লীল কোনো কথা বলতেন না। অশোভন কিছু করতেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সব থেকে ভালো সে-ই, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (বুখারী, হাদিস, ৩৫৫৯)

প্রিয় নবী সা. যেভাবে উত্তম আচরণের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছেন 

হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিজানের পাল্লায় সব থেকে ভারি হবে উত্তম চরিত্র। (আবু দাউদ, হাদিস, ৪৭৯৯)

উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আমি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী রোজাদার ও নামাজির মর্যাদায় পৌঁছে যায়। (আবু দাউদ, হাদিস, ৪৭৯৮)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোন আমলের কারণে মানুষ বেশি জান্নাতে যাবে? তিনি বলেন, আল্লাহর ভয় ও সুন্দর আচরণ। (তিরমিজি, হাদিস, ২০০৪)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের দিক থেকে সব থেকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হলো সেই ব্যক্তি যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং পরিবার-পরিজনের প্রতি অধিক হৃদ্যতা রাখে। (তিরমিজি, হাদিস, ২৬১২)

এই হাদিসগুলোর মাধ্যমে বুঝা যায়, মানুষের প্রতি সদাচার, উত্তম আচরণ এবং আখলাকে হাসানা বাস্তবায়নে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। এবং তিনি নিজে অপরের প্রতি সদাচারের মাধ্যমে সুন্দর আচরণের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। তাই সদাচার ও সচ্চরিত্র অবলম্বনে নবীজির জীবনী থেকে  অনুপ্রেরণা গ্রহণ করা উচিত প্রত্যেক মুমিনের।