প্রতীকী ছবি

আজীবন একসঙ্গে কাটানোর শপথ নিয়ে বিয়ের সম্পর্কে জড়ান দুজন মানুষ। তবে সবসময় সবার স্বপ্ন-শপথ পূরণ হয় না, অনেক সময় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে অশান্তি দেখা দেয় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। কখনো কখনো অল্পতেই সমাধান হয়ে যায় অশান্তি-তর্কের। কখনো আবার দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি শেষ হয় না। অশান্তি বাড়তেই থাকে।

স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে যদি বনিবনা না হয় এবং কোনোভাবেই মিল হওয়া সম্ভব না থাকে অথবা জুলুম-নির্যাতন বা কোনো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি রয়েছে ইসলামে। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পথে না হাটার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে ইসলামে।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তার (স্বামীর) পরিবার থেকে একজন ও তার (স্ত্রী) পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মিমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ -(সূরা আন নিসা, আয়াত, ৩৫)

 তালাকের ক্ষমতা স্বামীর হাতে

বোঝাপড়ার মাধ্যমেও দুজনের মাঝে মিলনের কোনো সম্ভবনা না থাকলে প্রয়োজনে ও যৌক্তিক কারণে স্বামী তালাক দিতে পারে, একইভাবে স্ত্রীও তালাক চাইতে পারে। তবে ইসলামী শরিয়ত মতে, তালাকের ক্ষমতা স্বামীর হাতে ন্যস্ত।

স্ত্রীর করণীয়

তবে ইসলামে স্ত্রীকে একটি অধিকার ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, বিবাহের সময় যেকোনো নারীই ইচ্ছা হলে স্বামীকে এ শর্ত দিতে পারে যে আমি যদিও এখন স্বেচ্ছায় আপনার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করছি, কিন্তু পরে যেকোনো সময় কারণে-অকারণে এ সম্পর্ক ছিন্ন করার অধিকার আমাকে দিতে হবে।

ওই শর্তে বিবাহ সম্পাদিত হলে পৃথিবীর সব নারীই এ অধিকার প্রয়োগ করে স্বামীর ইচ্ছাবহির্ভূত হলেও তালাক গ্রহণ করে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৫২৬২, ফাতহুল কাদির, ৩/৪২৭)

খোলা তালাক

আর কোনো স্ত্রী বিয়ের আগে স্বামীর সঙ্গে ওই শর্তচুক্তি না করলে পরবর্তীতে কোনো কারণে সংসার জীবনে বনিবনা না হলে স্ত্রীর জন্য আরেকটি অবকাশ দেওয়া হয়েছে ইসলামি বিধানে। তাহলো- স্ত্রী স্বামীকে বুঝিয়ে তালাকের ওপর রাজি করাবে অথবা কোনো বিনিময়ের মাধ্যমে তালাকের সম্মতি নেবে। 

অর্থাৎ সে বলবে যে হয়তো তুমি আমাকে বিবাহ করতে গিয়ে মহর, অনুষ্ঠান ও অন্য খাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই তুমি এ বিবাহ ভাঙতে চাচ্ছ না, আমি প্রয়োজনে তোমাকে তোমার কিছু খরচ পুষিয়ে দেব, তবু তুমি আমাকে তালাক দিয়ে দাও। এটিকে ইসলামী পরিভাষায় ‘খোলা তালাক’ বলা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৫২৭৩) ‘

আইনি প্রক্রিয়া

স্ত্রীর আবেদনের পর স্বামী যদি ‘খোলা তালাকের’ মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি না হয়, তাহলে এ ক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতে মামলা করে যৌক্তিক কারণ দর্শিয়ে স্বামীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিচারকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ করাতে পারে। (শরহুস সগির, দরদির, ২/৭৪৫, কিফায়াতুল মুফতি, ৬/২৫২)

এনটি