প্রতীকী ছবি

জীবিকা নির্বাহের জন্য ইসলামে উপার্জনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, 'নামাজ আদায়ের পর পর তোমার জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (হালাল রিজিক) তালাশ করো'। (সূরা জুমা, আয়াত, ২৮)। 

উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম সবসময় হালাল-হারামে গুরুত্ব দিতে বলেছে। কারণ, হারাম পন্থায় উপার্জন করলে বরকত নষ্ট হয়ে যায়। যার উপার্জন হারাম তার সারা জীবনই ধ্বংসের মুখে। কারণ, তার খাবার-দাবার, পোশাক সবই হারাম উপার্জনের এমনকি সন্তান-সন্ততির শরীরও হারাম খাবারে পূর্ণ। এক কথায় তার পুরো জীবন প্রতিষ্ঠিত হারামের ওপর। এমন ব্যক্তি অঢেল সম্পদ উর্পাজন করলেও বরকত থেকে বঞ্চিত। আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত। 

তাই হালাল উপার্জনে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, এতে রয়েছে বরকত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে থাকে তাকে এর মধ্যে বরকত দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস, ২৩১১)

হালাল উপায়ে উপার্জন ফরজ 

হালাল রিজিক অনুসন্ধান করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'অন্যান্য ফরজ কাজ আদায়ের সঙ্গে হালাল রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরজ।' (বায়হাকী, হাদিস, ৪৬০)। 

হালাল পন্থায় রিজিক অনুসন্ধানে বিশেষ সওয়াব অর্জন হয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'পুরুষের জন্য তার উপার্জনের কারণে সওয়াব রয়েছে'‌। (বুখারি, হাদিস, ১৪২৫)। নিজ হাতে উপার্জন করা নবীদের সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিজ হাতে উপার্জিত খাবারের থেকে উত্তম খাবার কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।' (বুখারি, হাদিস ২০৭২)।

হারাম উপার্জন জান্নাত লাভে প্রতিবন্ধক

হারাম উপার্জনকারী হারাম সম্পদ দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে। তার দেহ হারাম খাবারে গঠিত হয়। এমন ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'যে শরীর হারাম দিয়ে প্রতিপালিত তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' (বায়হাকী, মেশকাত, হাদিস, ২৭৮৭)। তাই অবশ্যই হালাল উপার্জন করতে হবে এবং হালাল খাবার খেতে হবে। হারাম উপার্জন ও হারাম হাদিয়া-তোহফা বর্জন করতে হবে।

ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হালাল উপার্জন

হারাম খাবার খাওয়া ব্যক্তির ইবাদত কবুল হয় না, ফরজ আদায় হয় ঠিকই, কিন্তু সওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে রসুলগণ! তোমরা উত্তম খাবার খাও এবং নেক আমল করো'। (সূরা মুমিনুন, আয়াত, ৫১)। 

আয়াতে নেক-আমলের আগে হালাল খাবারের কথা বলা হয়েছে। হালাল খাবার গ্রহণ আবশ্যক ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তোমাদেরকে আমি যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র হালাল খাবার খাও'। (সূরা নাহল, আয়াত, ১২৪)।

হারাম উপার্জনকারীর দোয়া কবুল হয় না

দোয়া কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে- হালাল রোজগার ও হালাল খাবার। যে হারামভাবে উপার্জন করে তার দান-সদকাও আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তার দোয়াও আল্লাহ কবুল করেন না। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, 'আল্লাহ তায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না'। এরপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ্ণ কেশধারী হয়ে পড়ে। এরপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, 'হে আমার প্রতিপালক'। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কীভাবে কবুল করতে পারেন?'। (মুসলিম, হাদিস, ২২৩৬)।

উপার্জনের ক্ষেত্রে সাবধানতা

বর্তমানে অনেকেই হালাল উপার্জনের প্রতি গুরুত্ব দেন না। যেভাবে খুশি হারাম পন্থায় উপার্জন করেন। নবউদ্ভাবিত বিভিন্ন বিজনেস প্লাটফর্মে অবাধে অংশ নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। হালাল-হারাম যাচাইয়ের জন্য আলেমদের শরণাপন্ন হচ্ছেন না। এ যেন হাদিসের বাস্তব নমুনা। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ কোন পরোয়া করবে না, সে কোথা থেকে উপার্জন করছে, হালাল থেকে নাকি হারাম থেকে'। (বুখারি, হাদিস, ২০৮৩ )।

তাই উপার্জনের আগে ভালোভাবে অনুসন্ধান করে নেওয়া উচিত। হারাম সুদ, ঘুষ, ধোঁকাবাজি ও অবৈধ উপায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করা উচিত। তাহলে অল্প উপার্জনে অনেক বরকত দেবেন আল্লাহ তায়ালা।