ছবি : সংগৃহীত

হিংসা, লোভ, অহংকার- এই তিনটি বদ স্বভাব থেকে সবার বেঁচে থাকা উচিত। পৃথিবীর অধিকাংশ মন্দ ও খারাপ কাজের মূলে রয়েছে এই তিন বদ স্বভাব।

সর্বপ্রথম অহংকার করেছিলো শয়তান। অহংকারের কারণে সে আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করে হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিলো। এ কারণে সে আল্লাহ তায়ালার কাছে চির অভিশপ্ত হয়েছে।

চির দিনের জন্য রহমত বঞ্চিত

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর স্মরণ করুন, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর , তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল; সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল। (সূরা বাকারা, আয়াত, ৩৮)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, 'তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে।' (সুরা আরাফ, আয়াত, ১২)

অহংকার জান্নাতে প্রবেশের অন্তরায়

হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকারও অবশিষ্ট থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস, ৪০৯১) 

জান্নাত থেকে পৃথিবীতে

শয়তানের প্ররোচনায় জান্নাতে চিরস্থায়ী হওয়ার লোভের কারণে হজরত আদম আলাইহিস সালাম নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ছিলেন। জান্নাতে চিরস্থায়ীর আকাঙ্খা তাকে এই ফল খেয়ে উদ্ধুদ্ধ করেছিলো। এর কারণে তাকে জান্নাত থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আমি বললাম, ‘হে আদাম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং যেখানে যা ইচ্ছে খাও, কিন্তু এই গাছের কাছে যেয়ো না, গেলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’। কিন্তু শয়তান জান্নাত থেকে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা দুজন যেখানে ছিল, তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিল; আমি বললাম, ‘নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু, দুনিয়াতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা আছে’। (সূরা বাকারা, আয়াত, ৩৫-৩৬)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আদাম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস করতে থাক, দু’জনে যা পছন্দ হয় খাও আর এই গাছের কাছে যেও না, তাহলে যালিমদের দলে শামিল হয়ে যাবে।  অতঃপর শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ করার জন্য যা তাদের পরস্পরের নিকট গোপন রাখা হয়েছিল; আর বলল, ‘তোমাদেরকে তোমাদের রব এ গাছের কাছে যেতে শুধু এ কারণে নিষেধ করেছেন যে, (খেলে) তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা তোমরা (জান্নাতে) চিরস্থায়ী হয়ে যাবে।’ (সূরা আরাফ, (৭) আয়াত, ১৯-২০)

হিংসা থেকেই পৃথিবীর প্রথম হত্যাকাণ্ড

হিংসার বিষয়টি শুরু হয়েছিলো আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালামের ছেলে কাবিলের কাছ থেকে। সে হিংসার বেড়াজালে আটকা পড়ে নিজের ভাইকে হত্যা করেছিলো। অবশেষে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে চিরদিনের জন্য জাহান্নামী হয়েছে। 

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর তুমি তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কোরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ শুধু মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন।’(সূরা মায়েদা আয়াত, ২৭)

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, তখন তার পাপের একাংশ আদমের প্রথম সন্তানের উপর বর্তাবে। (বুখারী, ৬৮৬৭)

(আাবুল লাইস সমরকন্দী রহ. লিখিত, তাম্বিহুল গাফেলিন,২য় খণ্ড, ৯৫) 

এনটি