প্রতীকী ছবি

মুমিনদের রূহকে পবিত্র কোরআনে প্রশান্ত আত্মা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ যে আত্মা আল্লাহর স্মরণ ও আনুগত্যের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করেছে এবং না করলে অশান্তি ভোগ করে। সাধনার মাধ্যমে মন্দ স্বভাব ও হীনমন্যতা দূর করেই এই স্তর অর্জন করা যায়। আল্লাহর আনুগত্য, জিকির ও শরীয়ত এমন ব্যক্তির মজ্জার সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। 

এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলা হবে, তোমার নিজের পালনকর্তার দিকে ফিরে যাও। এখানে ফিরে যাওয়া বাক্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, তার প্রথম বাসস্থানও পালনকর্তার কাছে ছিল। সেখানেই ফিরে যেতে বলা হচ্ছে তাকে।

এতে সেই হাদিসের সমর্থন রয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, মুমিনের আত্মা তাদের আমলনামাসহ সপ্তম আকাশে আরশের ছায়াতলে অবস্থিত ইল্লিয়্যীনে থাকবে। সব আত্মার আসল বাসস্থান সেখানেই। সেখান থেকে এনে মানব দেহে প্রবিষ্ট করানো হয় এবং মৃত্যুর পর সেখানেই ফিরে যায়।

অর্থাৎ, এ আত্মা আল্লাহর প্রতি তার সৃষ্টিগত ও আইনগত বিধি-বিধানের প্রতি এবং আল্লাহ তায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট। কারণ, বান্দার সন্তুষ্টির মাধ্যমেই বোঝা যায়, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট না হলে বান্দা আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট হওয়ার তাওফীকই পায় না। এমন আত্মা মৃত্যুকালে মৃত্যুতেও সন্তুষ্ট ও আনন্দিত হয়।

হজরত উবাদা ইবনে সামেত রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎকে পছন্দ করে আল্লাহ তায়ালাও তার সঙ্গে সাক্ষাৎকে পছন্দ করেন। এর বিপরীতে যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে, আল্লাহ তায়ালাও তার সাক্ষাৎকে অপছন্দ করেন।

এই হাদিস শুনে আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. বলেন, আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ তো মৃত্যুর মাধ্যমেই হতে পারে, কিন্তু মৃত্যু আমাদের অথবা কারো পছন্দ নয়। 

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আসল ব্যাপার তা নয়। প্রকৃতপক্ষে মুমিন ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়. যা শুনে মৃত্যু তার কাছে একেবারে প্রিয় বিষয় হয়ে উঠে। (মাযহারী)

মূলকথা, বর্তমানে জীবদ্দশায় মানুষ মাত্রই মৃত্যুকে যে অপছন্দ করে বা করার প্রবণতা তা ধর্তব্য নয় এখানে, বরং আত্মা শরীর থেকে বের হওয়ার সময় যে ব্যক্তি মৃত্যুতে এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতে সন্তুষ্ট থাকে আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন। رَاضِیَۃً مَّرۡضِیَّۃً (রাদিয়াতাম মারদিয়্যা, সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন)- এর মর্ম এটাই।

অর্থাৎ প্রশান্ত আত্মাকে সম্বোধন করে বলা হবে, আমার বিশেষ বান্দাদের কাতারভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, জান্নাতে প্রবেশ করা ধর্মপরায়ণ সৎবান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এ থেকে জানা যায় যে, যারা দুনিয়াতে ধার্মিক  ও সৎকর্মপরায়ণ লোকদের সঙ্গ ও সংস্পর্শ অবলম্বন করে, তারা তাদের সঙ্গে জান্নাতে যাবে, এটা তারই আলামত। 

তবে এখানে একটি প্রশ্ন হলো- প্রশান্ত আত্মাকে কখন এই কথা বলা হবে? এর জবাবে মুফাসসির আলেমদের কেউ কেউ বলেন, কিয়ামতের দিন এ কথা বলা হবে। আবার কেউ বলেন যে, মৃত্যুর সময় ফিরিশতাগণ বান্দাকে এ কথা বলে সুসংবাদ দেন। আবার মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিনেও তাদেরকে বলা হবে, 

یٰۤاَیَّتُهَا النَّفۡسُ الۡمُطۡمَئِنَّۃُ ارۡجِعِیۡۤ اِلٰی رَبِّکِ رَاضِیَۃً مَّرۡضِیَّۃً فَادۡخُلِیۡ فِیۡ عِبٰدِیۡ وَ ادۡخُلِیۡ جَنَّتِیۡ

অর্থাৎ, হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে আস সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে, অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও, এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা ফাজর, (৮৯) আয়াত, ২৭-৩০)

এক হাদিসে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন মুমিনের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে, তখন রহমতের ফেরেশতা সাদা রেশমী কাপড় সামনে রেখে আত্মাকে সম্বোধন করে বলবে, তুমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট- এই অবস্থায় তুমি এই শরীর থেকে বের হয়ে আসো। এই বের হওয়া হবে আল্লাহর রহমত এবং জান্নাতের চিরন্তন সুখের দিকে। (মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজা)

হজরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এই আয়াত ( ٰ(ۤاَیَّتُهَا النَّفۡسُ الۡمُطۡمَئِنَّۃُ  পাঠ করলাম। তখন হজরত আবু বকর রা. এই মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই আয়াতে কত সুন্দরভাবে সম্বোধন করা হয়েছে! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শুনে রাখুন, মৃত্যুর পর ফেরেশতারা আপনাকে এইভাবে সম্বোধন করবেন। (ইবনে কাসির, মাআরিফুল কোরআন, ৮ম খণ্ড, ৭৭৬)