নামাজে ইমামের অজু ভেঙে গেলে বা অসুস্থ হলে করণীয় কী?
পবিত্রতা ছাড়া নামাজ হয় না। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরাআনে বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও; তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ধোও, আর উভয়হাত কনুই পর্যন্ত ধোও, মাথা মাসেহ কর এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধোও।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত ৬)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদিসে বলেছেন, ‘পবিত্রতা (অজু) ছাড়া নামাজ কবুল হয় না। আর হারাম উপায়ে প্রাপ্ত মালের (দান) সাদকাও কবুল হয় না।’ (তিরমিজি)
বিজ্ঞাপন
আরেক হাদিসে অজু করার চমৎকার ফজিলত বর্ণনা করেছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনো মুমিন অথবা মুসলিম বান্দা অজু করে এবং মুখমণ্ডল ধোয়- তার মুখমণ্ডল থেকে তার চোখের দিয়ে করা সব গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার দুই হাত ধোয়- তার দুই হাতের দ্বারা কৃত সব গুনাহ তার হাত থেকে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূরীভূত হয়ে যায়। এরপর সে সব গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)
পবিত্রতা অর্জনের পর আবার অপবিত্র হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন অবস্থায় মানুষ অপবিত্র হয়। অনেক সময় নামাজ পড়াতে গিয়ে প্রাকৃতিক কারণে ইমামের অজু ভেঙে যায় বা ইমাম অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় পুরো নামাজ শেষ করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।
এমন পরিস্থিতিতে ইলমে ফিকহার গ্রন্থগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতে, যদি ইমামের অজু ভেঙে যায় বা নামাজ পড়ানোর সময় ইমাম অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাহলে ইমামের দায়িত্ব হলো- তার পেছনে দাঁড়ানো ইমামতির যোগ্য এবং মাসবুক (জামাতে নামাজের কোনো রাকাত ছুটে গেছে এমন) নন এমন কোনো ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করা। ইমাম পেছনে ফিরে একজনকে ইশারা করে তার স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং সেই ব্যক্তি মুসল্লিদের নিয়ে বাকি নামাজ চালিয়ে যাবেন। এরপর ইমাম অজু করে এসে বা সুস্থতাবোধ করলে নিজের নিযুক্ত করা ইমামের ইকতেদা করে নামাজ শেষ করবেন।
আমর ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজরত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কী করণীয় এ সম্পর্কে উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-কে জিগেস করা হলে তিনি বলেন, সে অজুর জন্য বের হয়ে যাবে এবং অজু করে আসবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫৯৫০)
ইবরাহিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলকামার নামাজে নাক থেকে রক্ত বের হয়েছে, তখন তিনি এক ব্যক্তির হাত ধরে ইমামতির স্থানে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং তিনি বের হয়ে গিয়ে অজু করে আসলেন। তারপর বাকি নামাজে বেনা করছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৯৫৬)
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব হেদায়াতে আছে, যে ব্যক্তির নামাযে হদস হবে অর্থাৎ নামাজে অযু চলে যাবে সে ফিরে আসবে। সে যদি ইমাম হয় তাহলে সে একজন প্রতিনিধি বানাবে এবং অজু করবে এবং তার নামাজে বেনা করবে। (হেদায়া: ১/৫৯)
এনটি