প্রতীকী ছবি

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রোকন নামাজ আদায়ের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াতের গভীর সম্পর্ক। কারণ, নামাজে কেরাত পড়া বা কোরআন থেকে সর্বনিম্ন তিন আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা ফরজ।

কোরআনের এমন একটি অংশ শিক্ষা করা ফরজ...

এজন্য একজন মুসলিমের ওপর কোরআনের এমন একটি অংশ শিক্ষা করা ফরজ যা দিয়ে সে নিজে নিজে পুরো নামাজ আদায় করতে পারে।

তাই যদি কোনো ব্যক্তি কোরআনের একটি অংশও না শেখে 'যার মাধ্যমে সে তার নামাজ আদায় করতে পারে’ তাহলে নামাজ না পড়া বা পড়তে না পারার কারণে নিশ্চিত সে গুনাহগার হবে।

কোরআন তিলাওয়াতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত

এর বাইরে একজন মুসলিমের জন্য জীবনে একবার হলেও সম্পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করা ফরজে কিফায়া। কোনো ব্যক্তি যদি ইসলামের অন্যান্য সব নিয়ম-কানুন মেনে পুরো কোরআন তিলাওয়াত না করেই মারা যায়, তবে সে কোরআন তিলাওয়াতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে, তবে সে এর কারণে গুনাহগার হবে না।

কিন্তু গুণাহগার হবে না- এমন ভেবে কোরআন তিলাওয়াত শেখার প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া একটি গর্হিত কাজ বলে গণ্য হবে। কারণ, হাশরের ময়দানে বান্দার নেক আমল নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকাসহ সব ইবাদতের একটা আকৃতি থাকবে এবং বান্দার মুক্তির জন্য সেগুলো পথপ্রদর্শক হবে। এ সবের মাঝে কোরআনের ভূমিকা থাকবে বেশি। 

পরকালে কোরআনের সুপারিশ

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন, ‘কোরআন ও রোজা আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের খায়েশাত মিটানো থেকে বিরত রেখেছিলাম। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তখন আল্লাহ তাআলা সুপারিশ কবুল করে নিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) 

সহিহ মুসলিমের আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘ তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা তিলাওয়াতকারীদের জন্য কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৪) 

নবীজির জীবনচরিতই ছিল কোরআন

এছাড়া মুমিনদের হেদায়েতের জন্য প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। মানুষের জীবনে কোরআনের বিধান বাস্তবায়নে পুরো জীবন ব্যয় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার জীবনযাপন ও জীবনচরিতই ছিলো কোরআন।

উম্মুল মুমিমীন হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজির চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘জেনে রাখো! পুরো কোরআনই হলো রাসুল (সা.)-এর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন আল-কোরআনের বাস্তব নমুনা। (মুসনাদ আহমদ: ২৫৮১৩)

কোরআন চর্চায় উদ্বুদ্ধ

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতদের কোরআন চর্চা ও কোরআন অনুযায়ী জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং কোরআনের প্রতি আমলে উদ্বুদ্ধ করেছেন বিভিন্ন হাদিসে। 

এক হাদিসে হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কিছু মানুষ আল্লাহর পরিজন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তিলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ -(ইবনে মাজাহ: ২১৫)

এমনকি যারা সবসময় কোরআন তিলাওয়াত করে তাদের নিয়ে ঈর্ষা করাও জায়েজ বলা হয়েছে। 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তায়ালা কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হতো, যেমন অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম।

অন্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সত্য ও ন্যায়ের পথে সম্পদ খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেওয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।’ -(বুখারি: ৫০২৬)

প্রতিদিন কতটুকু কোরআন পড়বেন?

আলেমদের পরামর্শ হলো—প্রতিদিন হাফেজ নন এমন ব্যক্তির এক পারা কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। যেন মাসে এক খতম পূর্ণ হয়ে যায়। আর হাফেজদের তিন পারা তিলাওয়াত করা উচিত। যারা কোরআন না পড়তে পড়তে এমনভাবে ভুলে যায় যে দেখেও পড়তে পারে না। তাদের ব্যাপারে হাদিসে কঠিন শাস্তির ধমকি এসেছে। তারা কেয়ামতের দিন অঙ্গহানি অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। (আবু দাউদ: ১৪৭৪)

সহি শুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা

তাই যারা কোরআন পড়তে জানে না, তাদের শেখার চেষ্টা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও কোরআন শিক্ষা দেয়।’ (আবু দাউদ: ১৪৫২)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সহি শুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহি শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (আবু দাউদ: ১৪৫৮)

কোরআন না শেখার ক্ষতি

যে কোরআন শেখা থেকে বিমুখ থাকে পরকালে তার জন্য দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে আমার জিকির (কোরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে,  নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠাবো। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন ? অথচ আমিতো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্নণ? তিনি বলবেন,  অনুরূপভাবে তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল।’ (সূরা তাহা-১২৪-১২৬)

কোরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কোরআন মানুষের বিপক্ষের দলীল হিসাবে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, কোরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলীল। (সহীহ মুসলিম: ৩২৮)

শিক্ষা না করার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি বলেছেন, ‘কোরআন সুপারিশকারী এবং তার সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি কোরআনকে সামনে রেখে তার অনুসরণ করবে, কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি একে নিজ পশ্চাতে রেখে দিবে, কোরআন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।’ (সহীহ ইবনে হিববান : ১২৪)

এনটি