ছবি : সংগৃহীত

মহানবী (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ সব স্তরের মানুষের জন্য অনুসরণীয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই তোমাদের প্রত্যেকের জন্য রাসুল (স.)-এর মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ’ (সুরা আহজাব: ২১)। 

আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছেন। যদি আপনি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের হতেন, তাহলে তারা আপনার পাশ থেকে সরে যেত। (সুরা আলে ইমরান: ১৫৯)। 

আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সুরা কলম: ০৪) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, নিশ্চয়ই আমি চারিত্রিক গুণাবলি পরিপূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে আহমদ: ৮৯৩৯)

হজরত ইয়াযীদ ইবনে বাবনুস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রা.–এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর চরিত্র কেমন ছিল? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর চরিত্র ছিল কোরআন। তারপর বলেন, তোমরা কি সূরা মুমিনূন পড়ো না ? আমরা বললাম, হ্যাঁ, পড়ি। তিনি বলেন, পড়ো, তখন আমি পড়লাম,

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَفِظُونَ

‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ; যারা বিনয়–নম্র নিজেদের সালাতে; যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে; যারা জাকাত দানে সক্রিয়; যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।’

তারপর হজরত আয়েশা রা. বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম–এর চরিত্র এমনই ছিল। (আখলাকুন নবী)

আরেক হাদিসে আয়েশা (রা.)-কে নবীজির চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘জেনে রাখো! পুরো কোরআনই হলো রাসুল (সা.)-এর চরিত্র।’ অর্থাৎ তিনি ছিলেন আল-কোরআনের বাস্তব নমুনা। (মুসনাদ আহমদ: ২৫৮১৩)

মহানবী (স.) তার স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তাদের হাসিখুশি থাকার দিকে খুব লক্ষ্য রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (স.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর তিনি আয়েশা (রা.)-কে বললেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে তার চেয়ে এগিয়ে গেলাম।’ (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি: ৮৯৪৫)

অন্য হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি ও রাসুলুল্লাহ (স.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম যা আমাদের মধ্যে থাকত। তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলে আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন! আমার জন্য রাখুন!’ (সহিহ মুসলিম: ৩২১)

আয়েশা (রা.) আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো প্রকার অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চৈসঃরে কথা বলতেন না। মন্দের প্রতিকার মন্দ দ্বারা করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। অতঃপর কখনো তা আলোচনাও করতেন না। (শামায়েলে তিরমিজি: ২৬৫; মুসনাদে আহমদ: ২৫৪৫৬; শুআবুল ঈমান: ৭৯৪৪ সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬৪৪৩)

তিনি হাসিমুখে বিশুদ্ধ, মার্জিত ও সুন্দরভাবে কথা বলতেন। যা দ্রুত শ্রোতাকে আকৃষ্ট করত। আর একেই লোকেরা ‘জাদু’ বলত। তাঁর উন্নত ও শুদ্ধভাষিতায় মুগ্ধ হয়েই ইয়ামেনের জেমাদ আজদি মুসলমান হয়ে যান। (মুসলিম: ৮৬৮ (৪৬); মেশকাত: ৫৮৬০)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.)-কে যখনই দুটি কাজের এখতিয়ার দেওয়া হতো, তখন তিনি সহজটি বেছে নিতেন। যদি তাতে গুনাহের কিছু না থাকত। তিনি নিজের জন্য কোনো অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতেন না। কিন্তু আল্লাহর জন্য হলে প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়তেন না’। (বুখারি: ৬১২৬; মুসলিম: ২৩২৭; মেশকাত: ৫৮১৭ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়)

এনটি