প্রতীকী ছবি

মানুষের জীবনে একজন ভালো সঙ্গী বা বন্ধু একান্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনেও একজন বিশ্বস্ত ও ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি হলেন হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।

যিনি প্রিয় নবীকে প্রতিটি মুর্হূতে সহযোগিতা করেছেন। ইসলামের শুরুর দিনগুলোতে যখন মক্কার কাফেরেরা প্রিয় নবীর ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছিল তখন তিনি তার পাশে ছিলেন বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে।

সন্দেহ পোষণ না করেই ইসলাম গ্রহণ

শুধু ইসলাম নয় বরং ইসলাম পূর্ব সময় থেকেই আবু বকর রা.-এর সঙ্গে নবীজির ভালো সম্পর্ক ছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যখন ওহী নাজিল হলো এবং তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানাতে শুরু করলেন তখন বয়স্ক স্বাধীন পুরুষদের মধ্যে আবু বকর রা. কোনও ধরনের বাক্য ব্যয় ও সন্দেহ পোষণ না করে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। 

রাসুল (সা.) নবুয়তপ্রাপ্তির কিছু দিন আগে আবু বকর (রা.) কোনো এক প্রয়োজনে ইয়েমেনে যান। ইয়েমেন থেকে ফেরার পর তিনি শুনতে পান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়তপ্রাপ্ত হয়েছেন।

তখন তিনি নবীজির বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আপনার বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে দিলেন কেন? তিনি তাকে বলেন, হে আবু বকর, আমি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সমস্ত মানুষের জন্য নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। অতএব তুমি এক আল্লাহ ও আমার নবুয়তের ওপর ঈমান আনো। 

তখন আবু বকর রা. বললেন, তাহলে আর দেরি কেন, আপনার হাতটি বাড়িয়ে দিন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল। আবু বকর (রা.) বলেন, আমার ইসলাম গ্রহণে রাসুল (সা.) খুব বেশি আনন্দিত হন। (উসদুল গাবাহ : ৩/২০৮-২০৯)

নিঃসংকোচে মেরাজের ঘটনা বিশ্বাস

বিনা দ্বিধায় ইসলাম গ্রহণের পাশাপাশি মেরাজের ঘটনাও তিনি নিঃসংকোচে বিশ্বাস করেন। মিরাজের ঘটনা যখন রাসূল সা. অন্যদের জানালেন। যখন মক্কার কুরাইশদের কেউ বিশ্বাস করতে চাইছিলো না।

তারা সবাই মিলে আবু বকরের অভিমত জানার জন্য তার কাছে গেল। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে আবু বকর জানতে চাইলেন, রাসূল সা. কি নিজে এটা বলেছেন। তারা বলল, হ্যা। আবু বকর স্বাভাবিক কন্ঠেই বলেন যে তিনি এটা সত্যায়িত করছেন।

ওই দিনের ঘটনায় কাফেরদের সন্দেহের মোকাবেলায় তার জবাবই তাকে এনে দিয়েছিল সিদ্দিক নামের সম্মান। যে নামের মানে হল সত্য প্রত্যয়নকারী। (মুবারকপুরী, ১৫০-১৫১)

হিজরতের সঙ্গী

মক্কার কাফেরদের নির্যাতন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে আল্লাহ তায়ালা নবীজিকে হিজরতের আদেশ করেন। এ সময় নবীজির সব থেকে বিশ্বস্ত একজন সঙ্গীর প্রয়োজন ছিল, আল্লাহর রাসূলের এই বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন হজরত আবু বকর রা.।

ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আপসহীন

ইসলামের শত্রুবাহিনীর সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় তিনি ছিলেন বিচক্ষণ ও আপসহীন। বিশেষভাবে নবীজির ইন্তেকালের পর আরব দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ধর্মত্যাগ ও রাসুলের প্রতি বিদ্বেষ এবং তাঁকে ব্যঙ্গ করে অবমাননার এক প্রবল ঝড় উত্থিত হয়েছিল।

এই ঝড়ের ঝাপটায় দুর্বল ঈমানদার এবং নতুন ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্তর থেকে ঈমানের আলো প্রায় নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কঠিন সেই মুহূর্তে আবু বকর (রা.) অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সীমাহীন ধৈর্যের সঙ্গে শত্রুবাহিনীর মোকাবেলায় অগ্রসর হয়েছিলেন।

আর এসব কিছুই ছিল নবীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা এবং গভীর মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ। মৃত্যুকালেও তার এই ভালোবাসার ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল।

বর্ণিত আছে, ‘মৃত্যুশয্যায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, নবীজি কোন দিন ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা (রা.) জানালেন, সোমবার। তিনি বলেন, আজ কী বার? জবাব দিলেন, সোমবার। তখন তিনি বলেন, হায়, যদি আমার মৃত্যু রাতের আগেই হতো! (বুখারি, হাদিস : ১৩৮৭)

এনটি