প্রতীকী ছবি

সূরা তীনের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা তীন, যায়তুন, সিনাই পর্বত ও নিরাপদ নগরী (মক্কা)র শপথ গ্রহণ করেছেন। এরপর বলা হয়েছে, মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে। একথার মানে হচ্ছে এই যে, তাকে এমন উন্নত পৰ্যায়ের দৈহিক সৌষ্ঠব দান করা হয়েছে যা অন্য কোন প্ৰাণীকে দেয়া হয়নি। 

আয়াতে বর্ণিত تَقْوِيم এর অর্থ কোন কিছুর অবয়ব ও ভিত্তিকে যেভাবে করা উচিৎ, সে-রকমভাবে পরিপূর্ণ আকারে গঠন করা। তা দ্বারা উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে দৈহিক অবয়ব এবং আকার-আকৃতি ও আচার-ব্যবহার ও মানুষ্যত্বের মাধ্যমে অন্যান্য সব প্রাণী অপেক্ষা সুন্দরতম করেছেন। (বাদা’ই’উত তাফসীর, আদওয়াউল বায়া) 

আকার আকৃতির বাইরেও আল্লাহ তায়ালা তাকে জ্ঞানী, শক্তিবান, বক্তা, শ্রোতা, স্রষ্টা, কুশলী এবং প্রজ্ঞাবান করেছেন। (ফাতহুল কাদীর)

আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন নিচুমুখী করে। কেবলমাত্র মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলম্বিত দেহ সোজা করে; যে নিজের হাত দিয়ে পানাহার করে। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যথোপযোগী বানিয়েছেন।

তাতে পশুর মত বেমানান ও অসামঞ্জস্য নেই। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাঝে উচিত ব্যবধানও রেখেছেন।

তাতে বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা, বোঝশক্তি, প্রজ্ঞা, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। যার ফলে মানুষ আসলে তার কুদরতের প্রকাশস্থল এবং তার শক্তিমত্তার প্রতিবিম্ব। 

মানুষের সৃষ্টির সৌন্দর্যের আলোচনার পর এখানে এখানে মানুষের স্থবিরতা ও অন্তিম আয়ুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে সময়ে যুবক অবস্থা ও শক্তিমত্তার পর বার্ধক্য ও দুর্বলতা এসে পড়ে তার আলোচনা করা হয়েছে। 

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি মানুষকে যৌবনের পর বার্ধক্যের এমন এক অবস্থার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি যেখানে সে কিছু চিন্তা করার, বুঝার ও কাজ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে; ছোট শিশুর মত হয়ে যায়। 

মুফাসসিরদের কেউ কেউ বলেছেন, আমি মানুষকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন পর্যায়ের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার পর যখন মানুষ নিজের দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে দুস্কৃতির পথে ব্যবহার করে তখন আল্লাহ তাকে এর উপযুক্ত প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামকে তার আবাসস্থল বানিয়ে দেন। (কুরতুবী)

তবে যারা মুমিন ও সৎকর্মী, তাদেরকে নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌছানো হবে না; বরং তারা জান্নাতে এমন পুরস্কার পাবে যার ধারাবাহিকতা কোনদিন শেষ হবে না, যে পুরষ্কারের কোন কমতি হবে না। (বাদাইউত তাফসীর, সাদী)

এরপরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতে অবিশ্বাসীদেরকে হুশিয়ার করে বলেছেন যে, আল্লাহর কুদরাতের এই দৃশ্য ও পরিবর্তন দেখার পরও তোমাদের জন্যে আখেরাত ও কিয়ামতকে মিথ্যা মনে করার কি অবকাশ থাকতে পারে? তোমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, তিনি ইচ্ছা করলে হীনতম ও নিম্নতম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন, তারপরও কেন তোমরা তা অস্বীকার করবে?

সূরায় সর্বশেষ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বলেছেন, তিনি কি সব বিচারকের মহাবিচারক নন? তিনি কি সকল শাসকের মধ্যে সর্বোত্তম শাসক নন? এই ন্যায় বিচারের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রত্যেক অপরাধীকে তার শাস্তি ও প্রত্যেক সৎকর্মীকে তার উপযুক্ত পুরস্কার প্রদান করা। বিচারকদের শ্রেষ্ঠবিচারক আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে উপনীত করেছেন পরিপূর্ণ ন্যায় ও প্রজ্ঞার সাথে; তবুও কি তিনি মানুষের কৃতকর্মের উপযুক্ত প্রতিদানও দেবেন না? (তাফসিরে মাআরিফুল কোরঅন, ৮ম খণ্ড, ৮১৫ বাদাইউত তাফসীর)

এনটি