একজন মুসলিম প্রতিদিন যেভাবে আমল করবেন
কর্মব্যস্ত জীবনে ইবাদত পালন ও আমলের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কারণ, আল্লাহ মানুষকে তার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই দুনিয়া ও পরকালের জীবন সুখী ও স্বাচ্ছন্দময় করতে ইবাদতের গুরুত্ব প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
কাজের ভিড়ে মানুষ ইবাদতে মগ্ন হতে ও আমল করতে একেবারে ভুলে যান। অথচ দৈনন্দিন ব্যস্ততার পাশাপাশি চাইলে কিছু করা যায়, যা অবশ্যক এবং পরকালের আমলনামা ভারি করতে সহায়ক। প্রত্যহ যেসব আমলের প্রতি একজন মুসলমান গুরুত্ব দেবেন এমন কিছু আমল হলো-
বিজ্ঞাপন
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা জরুরি। জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া ওয়াজিব। জামাতে নামাজ না পড়ার অভ্যাস করে নেওয়া ব্যক্তি ফাসিক হিসেবে গণ্য হবে। (বাকারা-৪২, বুখারী-৯৬)
নফল নামাজ পড়া
প্রতিদিন ফরজ নামাজের বাইরেও অন্যান্য নফল নামাজ যেমন- তাহাজ্জুদ, ইশরাক চাশত ও আওয়াবিনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, ফরজের পাশাপাশি এই আমলগুলো মানুষকে পরকালে আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সবার আগে যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হল নামাজ। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নইলে (নামাজ ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরজ নামাজে কোনও কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোনও নফল (নামাজ) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। তারপর অন্য আমলের হিসাব গ্রহণ করা হবে।’ -(সুনানে আবু দাউদ, ৭৭০, তিরমিজি, ৩৩৭, ইবনে মাজাহ, ১১৭)
গুনাহ বর্জন
শিরক বিদয়াত ও গুনাহ থেকে কঠোরভাবে বেঁচে থাকতে হবে। প্রতিদিন যেকোনও কাজ করার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে তা যেনও শিরক, বিদয়াত মুক্ত হয়। এবং গুনাহ থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, একটি গুনাহই মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে। নেক কাজ দুধের মত আর গুনাহ হল বিষের মত। উভয়টি একত্রিত হলে বিষের ক্রিয়াই প্রকাশ পায়। (আনআম-১২০, মিশকাত-২২৮)
হারাম থেকে বেঁচে থাকা
প্রতিদিনের কাজেকর্মে হারাম থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কারণ, হারাম থেকে বেঁচে থাকা মহান আল্লাহর বিধান। এর থেকে বেঁচে থাকতেই হবে। হালালের মাধ্যমেই আমাদের অর্থনীতির সার্বিক সমাধান খুঁজতে হবে। হালাল কখনোই অসম্ভব নয়। তবে হালালের জ্ঞান ও অনুসন্ধানে ত্রুটি থাকার কারণে কখনও মনে হতে পারে, সব কিছুই হারাম, এ যুগে হালাল অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ ধারণা একেবারেই ভুল।
আর হারাম উপার্জন এমন একটি ধ্বংসাত্মক বিষয়, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ইবাদতেরও প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়া যায় না।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘হারাম খাদ্য গ্রহণ করে ইবাদত করা মূলত গোবরের ওপর ইমারত নির্মাণের মতোই।’ (কিতাবুল আরবাঈন ফি উসুলিদ্দীন ফিল আকায়েদ ওয়াল আসরার : ৭৫)। সেজন্য ইমাম আবু ইউসুফ আল গাসুলি (রহ.) বলেন, ‘আমি ষাট বছর আমার উপার্জনের হালাল-হারাম নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করেছি।’ (আল হাসসু আলাত তিজারা : ৪৩)।
সুন্নতের অনুসরণ
প্রতিটি কাজ নবীজীর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নত অনুযায়ী করার চেষ্টা করতে হবে। এবং দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে নবীজির সুন্নত আমলগুলো কী কী, তা শিখতে হবে এবং সুন্নতের প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
কাজকর্মের শুরু ও শেষে দোয়া পড়া
দৈনন্দিন ইচ্ছে করলেই সহজেই কিছু সুন্নত ও দোয়ার উপর আমল করা যেতে পারে। তাহলো-
>>পরস্পর সালাম আদান প্রদান।
>> উপরে উঠতে আল্লাহু আকবার বলা। নিচে নামতে সুবহানাল্লাহ বলা।
>> চলাফেরার সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকির করা।
>> প্রত্যেক ভাল কাজে ডানকে প্রাধান্য দেওয়া। নিম্নমানের কাজে বামকে প্রাধান্য দেওয়া।
>> বাথরুমে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া পড়া।
>>যানবাহনে উঠার দোয়া পড়া।
>> ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার পরের দোয়ার পড়া।
>> খাবার শুরু ও শেষের দোয়া পড়া।
একজন মানুষ চাইলেই প্রতিদিন খুব সহজেই এই আমলগুলো করতে পারেন। এই দোয়াগুলো (ঘুমনো, বাথরুম, যানবাহন, খাবার দোয়া) মুখস্ত না থাকলেও যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাৎক্ষণিক বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইট থেকে দেখে দেখে দোয়াগুলো পড়তে পারেন। অথবা দেখে দেখে মুখস্ত করে নিতে পারেন।
কোরআন শরিফ তিলাওয়াত
প্রতিদিন সহী শুদ্ধভাবে কিছু পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করা। প্রতিদিন কমপক্ষে এক পারা করে কোরআন তেলাওয়াত করতে চেষ্টা করা উচিত।
ফরজ নামাজের পরে দোয়া ও অজিফা পড়া
প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে তিনবার ইস্তিগফার পড়া। (তাবারানী কাবীর-৮৫৪১)
أَسْتَغْفِرُ الله الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
এবং এ দোয়াটি পড়লেও ভাল হয়। (বুখারী শরীফ-১/১১৭)
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
আরো কিছু দোয়া আছে যা ফরজের পর সুন্নত ও নফল থাকলে, সুন্নত ও নফলের পরে পড়বে। আর সুন্নাত নফল না থাকলে ফরজের পরে পড়বে।
>> আয়াতুল কুরসী, একবার। (নাসাঈ-৯৮৪৮)
>> সূরা ফালাক, সূরা নাস-তিনবার করে, এর সাথে সূরায়ে কাফিরুন ও ইখলাস মিলিয়ে নিলে ভাল। (তিরমিযী-২৯০৩)
>> তাসবীহে ফাতেমী একবার। (৩৩ বার سُبحَا نَ ا لله, ৩৩ বার اَلحَمدُ لِلّهِ, ৩৪ বার اَللهُ اَكبَر) (মুসলিম ৫৯৭)
এগুলো পাঁচ ওয়াক্তেই পড়া উচিত। শুধু ফজর ও মাগরিবে এ তিনটির আগে নিচের দুটি পড়া উচিত।
اللَّهُمَّ أجِرْنِي مِنَ النَّارِ
ফজর ও মাগরিবের পর পড়বে-৩ বার اعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم পড়ে, বিসমিল্লাহ পড়ার পর ১ বার سورة الحشر এর শেষ ৩ আয়াত পড়বে। (তিরমিযী, ২ : ১২০)
এনটি