ছবি : গেটি ইমেজ

বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হয় এতে একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা করা জরুরি হয়ে পড়ে। এর মাঝে কিছু দায়িত্ব স্বামীর আবার কিছু দায়িত্ব স্ত্রীর। স্বামী যেহেতু একটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাই ইসলাম সবসময় স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে স্বামীকে। কেননা সে তার স্বজন ছেড়ে স্বামীর কাছে আসে। 

স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ

ইসলাম স্ত্রীর কাছে স্বামীর পাওনা অধিকার নিয়ে যতটা সরব তার থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়েছে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, (তবে হতে পারে) তোমরা এমন বস্তুকে অপছন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন। -(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

স্বামীর কাছে স্ত্রীর দুই পাওনা

স্বামীর কাছে স্ত্রীর যেসব পাওনা ও অধিকার রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম দুটি অধিকার হলো- ১. জৈবিক অধিকার। ২. ধর্মীয় অধিকার।

অধিকাংশ মানুষই স্ত্রীর জৈবিক অধিকার পূরণ করাকে নিয়েজের দায়িত্ব মনে করে। অর্থাৎ, স্ত্রীর খাওয়া-দাওয়া, ভরণপোষণ, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, স্ত্রী কোনও আবদার করলে তা পূরণ করা

স্ত্রীর ধর্মীয় অধিকার

এর বিপরীতে স্ত্রীর ধর্মীয় অধিকার আদায়কে নিজের কোনও দায়িত্ব মনে করে না। ধর্মীয় বিষয়ে স্ত্রীর কোনও অধিকার আছে অনেকে এই বিষয়টি অনুধাবনও করতে পারেন না।

বাহির থেকে বাড়িতে ফেরার পর, জাগতিক প্রয়োজন সম্পর্কে জিগেস করলেও ধর্মীয় কোনও বিষয়- যেমন নামাজ ঠিকমতো আদায় করা হয়েছে কিনা এ নিয়ে কখনো কিছু জানার প্রয়োজন মনে করে না। আবার সময়মতো খাবার প্রস্তুত না হলে অথবা খেতে বসে ঠিকমতো স্বাদ না পেলে রাগারাগিও করেন।

কিন্তু স্ত্রী কোনও ওয়াক্তের নামাজ পড়েছে কিনা অথবা তার অলঙ্কার বা ব্যক্তিগত সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে কিনা অথবা স্ত্রী শরীয়তের কোনও বিধান পালনে অবহেলা করছে কিনা- এসব নিয়ে কোনও ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না স্বামীর মাঝে। 

‘পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করো’

অথচ ইসলাম স্ত্রীর, সন্তান-সন্ততির জৈবিক চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের পাশপাশি তাদের ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষা এবং চরিত্র সংশোধনের বিষয়েও গুরুত্ব দিতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَهۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ عَلَیۡهَا مَلٰٓئِکَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়। -(সুরা আত-তাহরীম, (৬৬) আয়াত, ০৬)

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসেআল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ

জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোন ব্যাক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারী, ৬৬৫৩)

তাই কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্ত্রীর জাগতিক প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি তার ধর্মীয় বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দিতে হবে। তার ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শনের কোনও সুযোগ নেই। 

স্ত্রীকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলবেন যেভাবে

তবে স্ত্রীকে ধর্মীয় অনুশাসনের উপর পরিচালিত করার অর্থ এই নয় যে, নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য তার ওপর সীমাতিরিক্ত কঠোরতা করবে। বরং নম্রতা ও কোমল আচরণের মাধ্যমে তাকে ধর্মীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে বোঝাতে হবে।

এর পাশাপাশি ধর্মীয় বিভিন্ন বই পড়তে দিতে হবে। ধর্মীয় আলোচকদের কাছ থেকে শোনা ইসলামী আলোচনা অথবা  ইসলাম সম্পর্কে নিজের যেসব জানাশোনা রয়েছে, স্ত্রীকে তা শোনাতে হবে।

ধর্মীয় বিষয়ে স্ত্রীকে আগ্রহী করে তোলতে নিজেই তার সামনে ধর্মীয় বই এবং নবীজির সহধমীর্ণী ও পূণ্যময়ী নারীদের গল্প পড়ে শোনানো যেতে পারে।এর সঙ্গে সঙ্গে ‍গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- স্ত্রীকে আদেশ করার পাশাপাশি নিজেকেও আমল এবং ধর্মীয় বিধি-নিষেধ পালনে সচেষ্ট হতে হবে। (পারিবারিক-জীবন, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ., ৮৬-৯০)