চার দশক ধরে মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শায়খ ড. আবদুর রহমান আল-সুদাইস

মসজিদ এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ইমাম। মুসলিম সমাজের নেতাও মনে করা হয় ইমামকে। ইমামতি ছাড়াও মুসলমানদের যাবতীয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন তিনি।

হাদিসে ইমামের মর্যাদা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হলেন (সালাতের সার্বিক) জিম্মাদার। আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৭)

জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য মুসল্লিরা ইমামের অনুসরণ করে থাকেন। ইমাম ছাড়া জামাতে নামাজ আদায় করা যায় না। ইমামদের সম্পর্কে এক হাদিসে হজরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সঠিক সময়ে লোকদের নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেছে, এ জন্য সে (ইমাম) নিজে ও মুকতাদিরাও পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে।

অপরপক্ষে যদি কোনো সময় ইমাম সঠিক সময়ে নামাজ আদায় না করে তবে এজন্য সে দায়ী হবে; কিন্তু মুকতাদিরা পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে। -(আবু দাউদ : ৫৮০, ইবনু মাজাহ, ৯৩৬, আহমাদ৪/১৪৫, ২০১)

ইমামতির জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি যিনি

একজন ব্যক্তিকে ইমাম হতে হলে তার মধ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট গুণ থাকা আবশ্যক। জামাতে নামাজ আদায় করার এই গুণ রয়েছে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচন করা হয়। যিনি ইমামতি করবেন তার যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলো-

>> ‍উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে পবিত্র কোরআন সবচেয়ে বেশি মুখস্ত রয়েছে এমন ব্যক্তি।
>> নামাজের নিয়ম-কানুন ও মাসআলা ভালোভাবে জানা ব্যক্তি ইমামতি। 

>> যার কোরআন তেলাওয়াত উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি বিশুদ্ধ।
>> যিনি হাদিস ও সুন্নত সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখেন।

>> উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যিনি বেশি তাকওয়াবান এবং পরহেজগার।
>> যার চরিত্র তুলনামূলক বেশি ভালো।

>>উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যিনি সম্ভ্রান্ত বংশের এবং যার কণ্ঠস্বর সবার থেকে ভালো।
>> যিনি সবার থেকে বেশি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন।
>> যিনি কোনো স্থানে আগে হিজরত করেছেন কিংবা গিয়েছেন।

>> কোনো দলের মধ্যে যিনি আগে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
>>  উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যিনি বয়স্ক। এ সব বিষয়গুলোর মধ্যে যদি সবাই সমান হয় তবে লটারির মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইমাম নির্ধারণ করতে হবে।

হাদিসে ইমামের বর্ণনা

ইমামের মাঝে এইগুণগুলো থাকা আবশ্যক। এর সমর্থনে এক হাদিসে এসেছে, হজরত আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, গোত্রের ইমামতি করতে সর্বাধিক কোআন মুখস্তকারী (হতে হবে), যদি তাতে সমান হয় তবে (যিনি) সুন্নত (হাদিস) সম্পর্কে বেশি অভিজ্ঞ ব্যক্তি (তিনি ইমাম হবেন), তাতেও যদি সমান হয়, তবে (ওই স্থানে) আগে হিজরতকারী (উপস্থিত) ব্যক্তি। আর তাতেও সমান হলে আগে ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি (ইমামতি করবে)।’ (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম, মিশকাত, ১১১৭)

মসজিদের নির্ধারিত ইমামই অগ্রাধিকার পাবেন

তবে যদি কোন মসজিদে আগে থেকে ইমাম নির্ধারিত থাকেন তবে সেখানে নির্ধারিত ইমামই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নামাজ পড়াবেন। আর যদি কোথাও ইমাম নির্ধারিত না থাকে, কিন্তু সেখানে নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায়, তাহলে সেখানে উপস্থিত মুসলিমরা কাউকে ইমামতির জন্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইমাম নির্ধারণ করতে হবে।

আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, নামাজের জন্য একত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে যদি সে স্থানের বা বাড়ির মালিক উপস্থিত থাকে এবং তার মাঝে এইসব গুণ থাকে, তবে তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইমামতির যোগ্য। অন্যথায় স্থানীয় মসজিদের ইমামই ইমামতির বেশি যোগ্য। আর এ লোকদের দলে যদি ইসলামি সরকারের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে তবে তিনি ইমামতির বেশি যোগ্য বলে হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সুতরাং মসজিদ বা কোথাও নির্ধারিত ইমাম থাকলে তার পেছনে নামাজ আদায় করতে হবে। আর যদি নির্ধারিত ইমাম না থাকে তাহলে হাদিসের আলোকে উল্লেখিত বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে ইমাম নির্বাচিত করতে হবে। (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া, ১ম খণ্ড, ১৬০, ফতোয়ায়ে রাহমানিয়া, ১ম খণ্ড, ৩২৮, বাদায়ে সানায়ে, ১ম খণ্ড, ১৫৭)

এনটি