মোবাইল, কম্পিউটারের স্ক্রিনে কোরআন তেলাওয়াতের বিধান
কোরআন তেলাওয়াত সর্বোত্তম ইবাদত। যে মানুষ যত কোরআনের ধারক–বাহক হবে, তার সম্মানও তত বেশি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১২২৯২) ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান বাড়ি।’ (তিরমিজি: ২৯১৩)
যারা কোরআন শরিফ তিলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে কিয়ামত দিবসে আল্লাহর কাছে রাসুল (সা.) এই বলে অভিযোগ করবেন, ‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল।’ (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৩০)
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষ বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মোবাইল ও কম্পিউটার স্কিন দেখে কোরআন তেলাওয়াতের সুযোগ পান। কম্পিউটার, মোবাইল কিংবা অন্য যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইসে কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো স্ক্রিন স্পর্শ না করে হরফে দেখে দেখে তেলাওয়াত করলে অজু থাকা জরুরি নয়। অজু ছাড়াও তেলাওয়াত করা যাবে।
তবে গোসল ফরজ হলে তা জায়েজ হবে না। কারণ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ঋতুস্রাব ও গোসল আবশ্যক হওয়া ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১)
আর যদি স্ক্রিন স্পর্শ করে তেলাওয়াত করা হয়, তাহলে অধিকাংশ ফকিহদের মত হলো, অজু ছাড়া তা স্পর্শ করা যাবে না। যখনই কোরআনের আয়াত স্ত্রিনে ভেসে উঠবে, তখনই তা স্পর্শ করতে অজু থাকতে হবে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পবিত্র হওয়া ছাড়া কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না।’ (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৬৮০)। উমর (রা.) যখন অমুসলিম ছিলেন, তখন কোরআন স্পর্শ করতে চাইলে তার বোন বলেছিলেন, ‘তুমি অপবিত্র, আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না।’ (মুসনাদুল বাজ্জার : ১/৪০১)
তবে সমকালীন কোনো কোনো আলিম বলেছেন, ‘কোরআনের লিপি স্থায়ী হলে অজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই, যেমন কাগজে ছাপা অক্ষরের কোরআন। মোবাইল স্ক্রিনের কোরআন স্থায়ী নয়। কিছু আলোকরশ্মির মাধ্যমে তা স্বল্প সময়ের জন্য দৃশ্যমান হয়। তাছাড়া এর ওপর গ্লাসের আবরণও থাকে। তাই তা অজু ছাড়া স্পর্শ করা যাবে।’ (আল-ইসলাম, সওয়াল-জওয়াব, ফতোয়া : ১০৬৯৬৬১)
সারকথা হলো, বিষয়টি যেহেতু মতভেদপূর্ণ এবং কোরআন মজিদ যেহেতু পৃথিবীর পবিত্রতম ও মর্যাদাপূর্ণ গ্রন্থ, তাই পাক-পবিত্র হয়েই তা স্পর্শ করা ইমানের দাবি। পারতপক্ষে স্ক্রিনেও অজু ছাড়া কোরআন স্পর্শ না করাই শ্রেয়।
এনটি