স্ত্রীর আত্মীয়দের প্রতি স্বামীর যে দায়িত্ব
বিবাহের মাধ্যমে দুজন নারী-পুরুষের মাঝে একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি হয়। দুজন মানুষের এই বন্ধনের মাধ্যমে দুইটি পরিবার একসঙ্গে মিলে যায়। তৈরি হয় নতুন কিছু সম্পর্ক। বৃদ্ধি পায় আত্মীয়তার গণ্ডি ও পরিধি।
স্ত্রীর মা-বাবা, ভাই-বোন, চাচা-ফুপির সঙ্গে স্বামীর এক ধরনের পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়। যেটা আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে বিবেচিত। স্ত্রীর আপনজন এবং আত্মীয়দের সঙ্গে স্বামীর পক্ষ থেকে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ একান্ত কাম্য। ইসলামও স্ত্রীর পরিবারের প্রতি স্বামীর পক্ষ থেকে সাধ্যমত সদাচরণের নির্দেশ দেয়।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে তোমরা নিশ্চয় মিসর জয় করবে। তা এমন একটি দেশ যেখানে কীরাত (আঞ্চলিক মুদ্রার নাম) ব্যবহার হয়ে থাকে। তোমরা যখন তা জয় করবে, তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা তাদের সাথে সৌহার্দ্য ও আত্মীয়তার (অথবা আল্লাহর রাসূল বলেছেন) সৌহার্দ্য ও শ্বশুরাত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।’ (মুসলিম, হাদিস, ২৫৪৩; মিশকাত, হাদিস, ৫৯১৬)
এই হাদিসে শ্বশুর পক্ষের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। তবে রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের মতো তাদের প্রতি কোন হক বা অধিকার নির্ধারিত করা হয়নি। (ওছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ২৪/০২; বিন বায, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব)।
শশুরালয়ের আত্মীয়দের সঙ্গে রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের মতো প্রতি কোন হক বা অধিকার বর্ণিত না হলেও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা, আত্মীয় হিসেবে তাদের খোঁজ খবর রাখা এবং সুখে দুখে তাদের পাশে দাঁড়ানো একান্ত কর্তব্য।
পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা আল্লাহকে দেওয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ বাসস্থান।’ -(সুরা রাদ : ২৫)
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে অথবা কোনও ঠুকনো কারণে স্ত্রীর মনে কষ্ট দিয়ে শশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে। কারণ আল্লাহর রাসুল আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের জন্য ভয়াবহ আজাবের কথা বর্ণনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -(সহিহ বোখারি : ৫৯৮৪)
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না।’ -(মুসনাদে আহমদ : ১০২৭৭)
স্ত্রীর মন খুশি রাখতে এবং তার প্রয়োজনে তাকে তার মা-বাবা, ভাই-বোন ও নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া উচিত। আর এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া বা মাহরাম ব্যক্তিকে সঙ্গে দিয়ে পাঠাতে হবে।
ইফকের ঘটনাকালে আয়েশা (রা.) অসুস্থ হলে তিনি পিতার বাড়িতে গমনের জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে অনুমতি চান। রাসুল (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি পিতৃগৃহে চলে যান। (বুখারি, হাদিস : ২৬৬১)
এনটি