কোল্ড ড্রিংকস পান নিয়ে ইসলাম কী বলে?
প্রতিদিন জীবনধারণের জন্য নিয়মিত খাবারের বাইরেও হরেক রকমের খাবার গ্রহণ করে থাকি আমরা। এর সঙ্গে সৌখিন ও আয়েশি খাবারও থাকে অনেক। সৌখিন পানীয় হিসেবে বাজারে প্রচলিত রয়েছে বেশ কিছু কোমল পানীয় বা কোল্ড ড্রিংকস। এর মাঝে অন্যতম হলো- পেপসি, সেভেন আপ, স্প্রাইট, স্পীড, টাইগার, মজো, ক্লেমন।
এই কোল্ড ড্রিংকসগুলো হালাল খাবার হিসেবে কতটা গ্রহণযোগ্য বা এর ইসলামী দৃষ্টিকোণ নিয়ে অনেকের মাঝে সন্দেহ দেখা যায়। এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, বাজারে সহজলভ্য পেপসি, সেভেন আপ, স্প্রাইট, স্পীড, টাইগার, মজোসহ অন্যান্য কোল্ড ড্রিংকস সম্পর্কে শরয়ী হুকুম বলতে হলে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে আগে জেনে নিতে হবে। তাহলো
বিজ্ঞাপন
>> উল্লেখিত কোল্ড ড্রিংকস কী দিয়ে তৈরী হয়?
>> তাতে কী বস্তু মিশানো হয়?
>> যদি হারাম কিছু মিশ্রণ করা হয়, তাহলে তার পরিমাণ কতটুকু?
>> যদি হারাম বস্তু মিশ্রণ করা হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রসেসিংটা কী? এবং হারাম বস্তু মিশ্রণের পর এই খাবারে তার পূর্বের অবস্থা (হারামের প্রভাব) বহাল থাকে নাকি তা পরিবর্তন হয়ে যায়?
আরও পড়ুন : কৃত্রিম মিষ্টি ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ, ঘোষণা দেবে ডব্লিউএইচও
উপরের এই বিষয়গুলো জানা সাপেক্ষে এর উত্তর দেওয়া সহজ এবং সম্ভব। তবে ইলমে ফিকাহর একটি মূলনীতি অনুযায়ী আলেমরা বলেন-
হারাম কোন বস্তু যেমন শুকর ইত্যাদিকে যদি এমনভাবে রিফাইন করা হয় যে, এসবের কোন মৌলিকত্ব অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে এই বস্তু বা পানীয় ব্যবহার করা জায়েজ আছে। আর যদি হারাম বস্তু মিশ্রণের পর তার মৌলিকত্ব অবশিষ্ট থাকে, তাহলে সেই বস্তু যার সঙ্গে মিশ্রিত করা হবে, তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। -(নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালি-৮/১২)
ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া, মাজমাউল আনহুর ও ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়াতে বলা হয়েছে,
أما (الخمر) إذا خلله بعلاج بالملح أو بغيره يحل عندنا (الفتاوى الهندية،كتاب الأشربة وفيه بابان الباب الأول في تفسير الأشربة والأعيان التي تتخذ منها الأشربة وأسماؤها وماهياتها وأحكامه
অর্থাৎ, মদকে যখন লবণ বা অন্য কিছুর মাধ্যমে সিরকা বানিয়ে ফেলা হয়, তখন তা হালাল হয়ে যায়। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪১০, মাজমাউল আনহুর-৪/২৫১, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৮)
এ মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বর্তমান বাজারে বিক্রি করা কোল্ড ড্রিংসেরগুলোর ওপর বিধান দেওয়া হবে। অর্থাৎ যদি এই কোল্ড ড্রিংকসগুলোতে কোন হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়, আর মিশ্রিত করার আগে তাকে এমনভাবে প্রসেসিং করে যে, হারাম বস্তুটির মৌলিকত্ব অবশিষ্ট থাকে না, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে, আর যদি মৌলিকত্ব অবশিষ্ট থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।
আরও পড়ুন : কৃত্রিম মিষ্টিকে ক্যান্সারজনক ঘোষণা করলেও সমস্যা হবে না কোকাকোলার
আলেমরা বলেন, তবে আমরা যতটুকু জেনেছি, বর্তমান বাজারে প্রচলিত কোল্ড ড্রিংকসে নাপাক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না, সোডাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, আর যদিও কোন নাপাক দ্রব্য ব্যবহার হয়ে থাকে, তাহলেও তা এমনভাবে রিফাইন হয়ে যায় এসবের কোন নামগন্ধও আর অবশিষ্ট থাকে না, তাই এসব পণ্য ব্যবহারে শরয়ী কোন বাঁধা নেই।
লেখক : পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা