ঈদ-উৎসবসহ বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বাস-ট্রেন, লঞ্চের টিকিট সংকট দেখা দেয়। এ সময় অগ্রিম টিকিট কাটার পর অনেক সময় যাত্রা বাতিল করেন কেউ কেউ। তবে টিকিটের প্রচুর চাহিদা থাকায় তা নষ্ট না করে অন্যের কাছে বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে অনেকেই তা বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। টিকিট সংকটের কারণে নিরুপায় হয়ে অন্যরা তা কিনেও নেন তখন।

ট্রেন-বাসের টিকিট

এমন পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই ইসলামী বিধান জানতে চান। যেমন একজন প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন-

‘গত কোরবানির ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকেট কিনেছিলাম। পরে ওই সময় আর বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে না বিধায় ওই টিকেট আরেক ব্যক্তিকে পঞ্চাশ টাকা বেশিতে বিক্রি করেছি। এখন আমি জানতে চাই, আমার জন্য ওই টিকেট অধিক মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হয়েছে কিনা?’

এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আলেমরা বলেন, বাস বা ট্রেনের টিকিট ক্রয় করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা নাজায়েয। তাই টিকিট বিক্রি করে অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া জায়েয হয়নি। টিকিট বিক্রির অতিরিক্ত পঞ্চাশ টাকা ওই ব্যক্তিকে ফেরত দিয়ে দিতে হবে। তবে যদি তাকে পাওয়া সম্ভব না হয় তবে তা সদকা করে দিতে হবে।

অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা যাবে?

আলেমরা আরও বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় যাত্রীদের জন্য এভাবে টিকিট কেনাও ঠিক নয়। তবে পরিস্থিতির কারণে কেউ নিরুপায় হয়ে বেশি দামে টিকিট কিনলে তা বৈধ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি বেশি দামে টিকিট বিক্রি করেছে তার ‍গুনাহ হয়েছে। এটা অনেকটা অন্যায়ভাবে অন্যের থেকে টাকা নেওয়ার অন্তর্ভূক্ত। কোরআন ও হাদিসে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

কোরআন-হাদিসে সতর্কতা

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না।  (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)

হজরত আবু সিরমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহ তায়ালা তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন।’ -(তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু সিরমাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘কেউ অন্যের ক্ষতি করলে আল্লাহ তার ক্ষতিসাধন করবেন। কেউ অযৌক্তিকভাবে কারো বিরোধিতা করলে আল্লাহ তার বিরোধী হবেন।’ -(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৩৫)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, যার কাছে তার ভাইয়ের হক রয়েছে, তা মান-সম্মানের হোক বা অন্য কিছুর হোক, সে যেন আজই ক্ষমা চেয়ে নেয় (বা পরিশোধ করে মিটমাট করে নেয়)। এমন দিন আসার আগেই, যেদিন কোনো অর্থকড়ি থাকবে না। যদি ব্যক্তির কোনো নেক আমল থাকে তা দিয়ে পাওনাদারের ঋণ বা হক শোধ করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে তা হলে পাওনাদারের বা হকদারের পাপের বোঝা সমপরিমাণ তার মাথায় দিয়ে দেয়া হবে।’ -(সহীহ বুখারী)

-(কিতাবুল আছল ৩/৪৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৬৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৫০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৩৭৬০, ২৩৭৫৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩০; আল কাউসার অনলাইন, শাবান-রমযান ১৪৩৬, ২০১৫, ৩৪১৭ নম্বর ফাতাওয়া; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৯১)

প্রশ্নটি করেছেন, মুহাম্মাদ ইশতিয়াক - চকবাজার, চট্টগ্রাম থেকে

ইসলাম ও জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়ে জানতে এবং ধর্ম সম্পর্কিত খবর, ছবি, ভিডিও পাঠান

dhakapostislam@gmail.com

এনটি