শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত
আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে বিশেষ এমন কিছু সময় দান করেছেন, যেগুলো কেউ মূল্যায়ন করলে এবং সাধ্য মতো ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহ তাআলা তাকে অফুরন্ত সওয়াব দান করবেন। সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন।
এরকম বিশেষ সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- শবে কদর, দুই ঈদের দিবাগত রাত ও লাইলাতু নিসফি মিন শাবান বা শবে বরাত। শবে বরাত বহু হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করেন
আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একদিন মধ্যরাতে দেখি— রাসুল (সা.) বিছানায় নেই। ঘরে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পেলাম না। তাই বের হয়ে দেখি— তিনি জান্নাতুল বাকিতে জিয়ারত করছেন। ঘরে এসে রাসুল (সা.) বিষয়টি বুঝতে পেরে বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি মনে করেছো, আল্লাহ ও তার রাসুল তোমার খিয়ানত করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আশঙ্কা করেছিলাম, আপনি হয়তো আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। রাসুল (সা.) তখন বললেন, আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বনি কালব গোত্রের (আরবের একটি গোত্রের নাম, যে গোত্রের লোকেরা অধিক পরিমাণে ছাগল পালতো) পালিত ছাগলের পশম থেকেও অধিক মানুষকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৯)
আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন—
আল্লাহ তাআলা শাবান মাসের মধ্যরাতে সৃষ্টিজগতের দিকে রহমতের বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও মুনাফিক ছাড়া সব বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।
(সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সাহিহাহ : ১/১৩৫; প্রখ্যাত হাদিস-বিশারদ আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.) হাদিসটি সহিহ বলেছেন।)
বিশেষভাবে দোয়া কবুল
ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, এই মর্মে আমি হাদিস পেয়েছি যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচ রাতে বিশেষভাবে দোয়া কবুল হয়। সেগুলো হলো- জুমা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিবাগত রাত, রজব মাসের প্রথম রাত ও শবে বরাতের রাত। (কিতাবুল উম্ম : ১/২৬৪)
সুতরাং উপরের উল্লেখিত হাদিস ও বর্ণনাগুলোর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, শবে বরাত বরকতময় রাতগুলোর একটি। এই রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া কান্নাকাটি করার প্রতি হাদিস শরিফে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
তাই সাধ্যানুকূল ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া-কান্নাকাটির মাধ্যমে এ রাতকে যথাযথ মূল্যায়ন করা চাই। গল্পগুজব, আতশবাজি ও অনৈসলামিক কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন।
মুহাম্মদ হামিদুল ইসলাম; তরুণ আলেম ও শিক্ষক, এশা’আতুল ইসলাম মাদরাসা, চাড়ালিয়াহাট, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।