প্রতীকী ছবি

প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, দু্ই ঈদ ও ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান হজ- বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলিমদের একত্রিত করে রবের সামনে। এখানে এসে রঙ, বর্ণ, উঁচু-নিচু শ্রেণীভেদ ভুলে সবাই নিজেকে সঁপে দেন রবের কাছে। ধর্মীয় আদেশ পালনের জন্য মুসলিমদের সর্ববৃহৎ সমাগম হয়ে থাকে সৌদি আরবের মক্কায়,পবিত্র হজকে কেন্দ্র করে।

হজের ফজিলত

হজের জন্য মক্কায় একত্রিত মুসলিমদের ফজিলত সম্পর্কে ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিজের ঘর থেকে কাবার উদ্দেশ্যে তোমার বের হওয়াতে, তোমার সওয়ারীর প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে আল্লাহ একটি করে সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন এবং একটি করে পাপ মাফ করবেন। আরাফায় অবস্থান কালে আল্লাহ নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং তাদেরকে (হাজীদেরকে) নিয়ে ফিরিশতাদের কাছে গর্ব করেন। 

বলেন, ’আমার ওই বান্দারা আলুথালু কেশে ধূলামলিন বেশে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করে আমার কাছে এসে আমার রহমতের আশা করে এবং আমার আজাবকে ভয় করে, অথচ তারা আমাকে দেখেনি। তাহলে তারা আমাকে দেখলে কি করত?

সুতরাং তোমার যদি বালির পাহাড় অথবা পৃথিবীর বয়স অথবা আকাশের বৃষ্টি পরিমাণ গুনাহ থাকে, আল্লাহ তা ধুয়ে দেবেন। পাথর মারার সওয়াব তোমার জন্য জমা থাকবে। মাথা মুণ্ডালে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব লিখা হবে। অতঃপর কাবাঘরের তওয়াফ করলে তুমি তোমার পাপরাশি থেকে সেই দিনের মত বের হবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিল। (ত্বাবারানী ১৩৩৯০, সহীহুল জামে’ ১৩৬০)

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম কাজ কী? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান রাখা। জিজ্ঞাসা করা হল, তারপর কী? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হল, অতঃপর কী? তিনি বললেন, মাবরূর (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ। (বুখারী ২৬, মুসলিম ২৫৮)

হজ-ওমরার সফরে মারা গেলে যে বিশেষ মর্যাদা

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে বর্তমানে মানুষ কয়েক দিন, মাস, বছরের পথ কয়েক ঘণ্টায় পার হতে পারেন। এক সময় হজের সফরে মানুষের দীর্ঘ সময় লাগতো। দূর দেশ থেকে হজ পালন করতে প্রায় বছর খানেক সময়ও লেগে যেতো। এই সফরে অনেকে মারাও যেতেন। বর্তমান সময়েও অনেকে হজ ওমরার সফরে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃতের স্বজনেরা স্বাভাবিক নিয়মেই প্রিয়জনকে হারানোর ফলে কষ্ট পান। তবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ-ওমরাযাত্রায় মৃত্যুবরণকারীদের জন্য সুসংবাদ শুনিয়েছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হলো, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কেয়ামত পর্যন্ত তার হজের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হলো, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হলো, কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ওমরার সওয়াব, লেখা হবে।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৬৩৫৭)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আরাফাতে উকুফ অবস্থায় হঠাৎ তার উটনি হতে পড়ে যায়। এতে তাঁর ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবি বলেছেন, তাঁর ঘাড় মটকে দিল। (যাতে সে মারা গেল)। তখন নবী (স.) বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু’কাপড়ে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং মস্তক আবৃত করবে না। কেননা, কেয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠবে। (সহিহ বুখারি: ১২৬৫; সহিহ মুসলিম: ২৭৬৩; ইবনে মাজাহ: ৩০৮৪)

হজের সফরে মক্কায় মৃত্যুবরণকারীদের সাধারণত কাবা শরিফের সন্নিকটে জান্নাতুল মুয়াল্লাতে আর যারা মদিনায় মৃত্যুবরণকারীদের মসজিদে নববি সংলগ্ন জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। এ কবরস্থানে দাফন হওয়া মুসলিম অনেক সৌভাগ্যবান। কারণ, এখানে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তান, স্ত্রীসহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম শুয়ে আছেন। 

এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির জমিনে চিড় ধরবে, সেই ব্যক্তি আমি। তারপর আবু বকর (রা.), তারপর ওমর (রা.), তারপর আহলে বাকি। আমি আহলে বাকির পাশে থাকব। তারা আমার সঙ্গে একত্র হবে। তারপর আমি মক্কাবাসীর জন্য অপেক্ষা করব। তারা মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি জায়গায় এসে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। (সুনানে তিরিমজি: ৩৬২৫)

এনটি