ভালো কাজ ডান দিক থেকে শুরু করার ফজিলত
যেকোনও ধরনের ভালো কাজ ডান দিক থেকে শুরু করা সুন্নত। ডান দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যা নিয়মিত ছেড়ে দেওয়ার অভ্যাস হয়ে গেলে গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নবী (সা.) জীবনের সবক্ষেত্রে ডানের বিবেচনা করতেন।
আয়েশা থেকে বর্ণিত, এক হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘নবীজি (সা.) সব কাজ ডান থেকে শুরু করতে পছন্দ করতেন। এমনকি জুতা পায়ে দেওয়া, আরোহন করা, মাথায় তেল দেওয়া এবং অজু করার ক্ষেত্রেও।’ (বুখারি : ১৬৬)
বিজ্ঞাপন
ভালো কাজের সূচনা হবে ডান হাত দিয়ে
খাওয়া-পান করা, কাউকে কোনো জিনিস দেওয়া, জামা পড়া, ঘরে প্রবেশ করা ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রে ইসলাম ডান হাত ব্যবহারের নির্দেশ দেয়। ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, ‘ইসলামের চির শাশ্বত মূলনীতি হচ্ছে, সৌন্দর্যবর্ধক সম্মানসূচক যেকোনো কাজ এবং প্রত্যেক ভালো কাজের সূচনা হবে ডান হাত দিয়ে কিংবা ডান দিক থেকে। বিপরীতে অপছন্দনীয় কিংবা নিম্নমানের সব কাজের সূচনা হবে বামদিক থেকে।’
‘বিসমিল্লাহ পড় এবং ডান হাত ব্যবহার করো’
নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকেও ডান দিক ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। ওমর ইবনে আবু সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি ছিলাম ছোট বালক। থাকতাম নবী (সা.)-এর ঘরে। সেখানেই আমার প্রতিপালন হতো। সবাই একসঙ্গে এক প্লেটে খাওয়ার সময় আমার হাত ঘুরত পুরো প্লেট জুড়ে। খেতাম বাসনের সবদিক থেকে। একদিন নবী (সা.) আমাকে বললেন, খোকা! খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়, তারপর তোমার প্লেটের পাশ থেকে ডান হাত দিয়ে খাবার খাও। তিনি বলেন, তারপর থেকে আমার খাওয়া কখনও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি।’ (বুখারি : ৫০৬১)
হজরত সালমান ইবনে আকওয়া (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে আছে, এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বাম হাতে আহার করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ডান হাতে খাও! সে উত্তরে বলে আমি ডান হাতে আহারে সক্ষম নই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি সক্ষম হবেও না। অতপর বলেন, তাকে একমাত্র অহংকার ও আত্মম্ভরিতা ডান হাতে আহার করতে বাধা দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আর ওই ব্যক্তি তার ডান হাত মুখে নিতে পারেনি।’ (সহিহ্ মুসলিম শরিফ : ২০২১)
হজরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,যখন তোমরা কাপড় পরবে এবং অজু করবে তখন তোমরা তোমাদের ডান দিক থেকে আরম্ভ করবে। ( মুসনাদে আহমাদ, ১/২১৯)
ডান হাত ব্যবহার পছন্দনীয় কাজ
ডান হাতে খাওয়া বা ডান দিক থেকে কোনো কাজ শুরু করা ইসলামের কোনো ফরজ কিংবা ওয়াজিব বিধান নয়। কিন্তু নবীজি (সা.) এটি করতেন এবং পছন্দ করতেন। উম্মতকেও আদেশ করেছেন একটি পছন্দনীয় কাজ হিসেবে। তাই এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
সব কাজে ডানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমাদের কোনো হুকুমের প্রয়োজন নেই, বরং এতটুকুই যথেষ্ট যে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এই কাজটি পছন্দ করতেন। এতেই আমরা বলতে পারি, ‘শুনেছি এবং মেনেছি’।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা প্রকৃত মুমিন তাদের যখন ডাকা হয় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের দিকে কোনো বিষয়ের ফয়সালা বর্ণনা করার জন্য, তখন তারা বলে, ‘আমরা শুনেছি এবং আমরা মেনেছি’ আর তারাই হলো আখেরাতে সফলকাম ব্যক্তি।’ (সুরা নূর : ৫১)
এনটি