প্রতীকী ছবি

বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষ কত ধরনের কাজ করে। এর কোনওটা প্রয়োজনীয় আবার কোনওটা অপ্রয়োজনীয়, অনর্থক। তবে যেকোনও কাজ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ, মানুষ যা কিছু করে তার প্রতিটিই লিপিবদ্ধ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর নিশ্চয় তোমাদের উপর সংরক্ষকগণ রয়েছে।’ -(সুরা ইনফিতার, আয়াত, ১০)

কোরআনে আমলনামা লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতার আলোচনা

আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা কি মনে করে যে আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর রাখি না। অবশ্যই রাখি। আমার ফেরেশতারা তাদের সঙ্গে থেকে সব কিছু লিপিবদ্ধ করে।’ (সুরা জুখরুফ, আয়াত : ৮০)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন দু’জন লিপিবদ্ধকারী (ফেরেশতা) লেখক ডানে ও বামে বসে (মানুষের আমল লিখছে। যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে (তা সংরক্ষণের জন্য) তার নিকটে একজন সদা তৎপর প্রহরী আছে। -(সুরা কফ আয়াত, ১৭-১৮)

মানুষের প্রতি মুহুর্তের আমলের হিসাব

আয়াতে দু্‌ইজন ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে, যারা সবসময় মানুষের সঙ্গে থাকেন এবং তাদের কাজকর্ম ও আমল লেখেন। তাদের একজন ডানপাশে থাকেন অপরজন বাম পাশে থাকেন। ডান পাশের ফেরেশতা মানুষের নেক আমল লিখে থাকেন আর বাম পাশের ফেরেশতা তার তার খারাপ ‍ও বদ আমল লেখে থাকেন। তাদের নাম কিরামুন-কাতিবুন।

গোপন গুনাহও লেখা হয়

মানুষের হাটা চলা, বসা ঘুমানো- সবসময় এই দুই ফেরেশতা তাদের সঙ্গে থাকে। তবে মানুষ যখন প্রস্রাব-পায়খানা করে অথবা স্ত্রী-সহবাসের মতো কাজের জন্য নিজের লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করে তখন এই দুই ফেরেশতা সেখান থেকে সরে যায়। তবে এই সময় মানুষ কোনও ধরনের গুনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত হলে আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির মাধ্যমে ফেরেশতারা তা জানতে পারেন এবং তা আমলনামায় লিপিবদ্ধ করেন।

বাম কাঁধের ফেরেশতার প্রতি ডান কাঁধের ফেরেশতার আহ্বান

ইবনে কাসীর আহনাফ ইবনে কায়েস রহ.-এর বর্ণনা উদ্ধৃত করে লিখেছেন,  এই দুই ফেরেশতার মধ্যে ডানদিকের ফেরেশতা নেক আমল লিপিবদ্ধ করেন। একই সঙ্গে তিনি বামপাশের ফেরেশতার দিকে খেয়াল রাখেন, মানুষ কোনও গুনাহ করে ফেললে তিনি বাম কাঁধের ফেরেশতাকে বলেন, এখনি তার পাপের গুনাহ আমলনামায় লিপিবদ্ধ করো না, তাকে একটু সময় দাও, সে তওবা করে ফেললে তার গুনাহ লেখার আর প্রয়োজন নেই। আর সে যদি তওবা না করে তাহলে আমলনামার গুনাহের সঙ্গে যুক্ত কোরো। ( ইবনে আবী হাতেম)

কেয়ামতের দিন সবার আমলনামা তাকে পড়তে দেওয়া হবে

হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন, হে আদম সন্তান! তোমাদের আমল পর্যবেক্ষণের জন্য দুজন ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়েছে। একজন তোমার ডানপশে অপরজন তোমার বাম দিকে। ডান পাশের ফেরেশতা তোমার ভালো কাজগুলো লিখে রাখেন আর বামপাশের ফেরেশতা বদ আমল লেখেন। এ সত্য মনে রেখে যা মন চায় করো। 

এরপর যখন তুমি মারা যাবে এই আমলনামা তোমার সঙ্গে দেওয়া হবে। এটা কবরে তোমার সঙ্গে থাকবে। এরপর কেয়ামতের দিন তুমি যখন কবর থেকে উঠবে, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে বলবেন-

‘আমি প্রত্যেক লোকের ভাগ্য(কৃতকর্ম) তার কাঁধেই ঝুলিয়ে রেখেছি (অর্থাৎ তার ভাগ্যের ভাল-মন্দের কারণ তার নিজের মধ্যেই নিহিত আছে) আর কেয়ামতের দিন তার জন্য আমি এক কিতাব (আমলনামা) বের করব যাকে সে উন্মুক্ত অবস্থায় পাবে। তুমি তোমার কিতাব  (আমলনামা) পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব-নিকেশের জন্য যথেষ্ট। (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত, ১৩-১৮), তাফসিরে মারেফুল কোরআন, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা, ১২৮-১৩১)  

এনটি