হজ কবুলের জন্য যেসব মানতে হবে
হজের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অন্তরের বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতা অর্জন করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি : ১/২০৬)
অন্তরের বিশুদ্ধতা ও হজ্জে মাবরুরই মূলত আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেন। হাদিসে একথাই বলেছেন আল্লাহর প্রিয় হাবিব। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বাধিক উত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ইমান আনয়ন করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, হজে মাবরুর বা মকবুল হজ আদায় করা।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৪২৯)
বিজ্ঞাপন
তাই হজ করতে গিয়ে তা যেন শুধু কোনও ট্যুর বা ভ্রমণ না হয়ে একান্ত আল্লাহর ইবাদতের সফর হয় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে সবার। কেননা অন্তর থেকে যদি আল্লাহর জন্য কিছু করা না হয়, তা কোনো কাজে আসে না, আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার কাছে তোমাদের আল্লাহভীতিই পৌঁছে।’ (সূরা হজ : ৩৭)।
তাই হজ এবং এ ধরনের কোনও ইবাদত পালনের আগে তা কবুলের শর্তগুলো জেনে রাখা উচিত। আলেমরা হজ কবুলের জন্য বেশ কিছু বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। তাহলো-
যশখ্যাতির বিড়ম্বনায় না পড়ে আল্লাহর জন্য হজ করা
হজ কবুলের জন্য অন্যতম শর্ত হলো- লোক দেখানো কিংবা সুনাম অর্জনের মানসিকতা বর্জন করা। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস ইবন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এমন হজের তওফিক দান করুন, যা হবে লোক দেখানো ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা মুক্ত। ’ -(সুনানে ইবন মাজা)
হালাল টাকায় হজ করা
হালাল ও বৈধ উপার্জনের টাকায় হজ পালন করা। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অবৈধ উপার্জন নিয়ে কোনো ব্যক্তি যখন হজের উদ্দেশ্যে বের হয় এবং বাহনের পা-দানিতে পা রেখে ঘোষণা দেয়- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...’, তখন আসমান থেকে একজন ঘোষক তার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তোমার জন্য কোনো লাব্বাইক নেই, তোমার জন্য কোনো সৌভাগ্যবার্তা নেই। তোমার পাথেয় হারাম। তোমার ব্যয়-খরচা হারাম। তোমার হজ কবুল করা হয়নি। ’ –(মুয়াত্তা মালেক)
সব ধরনের খারাপ কাজ ও ঝগড়া থেকে দূরে থাকা
মহান আল্লাহ বলেছেন, হজের মাসগুলো সবার জানা। যে ব্যক্তি এই নির্দিষ্ট মাসগুলোতে হজ করার নিয়ত করে, তার জেনে রাখা উচিত, হজের সময়ে সে যেন যৌন সম্ভোগ, দুষ্কর্ম ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। আর যা কিছু সৎকাজ তোমরা করবে আল্লাহ তা জানেন। হজ সফরের জন্য পাথেয় সঙ্গে নিয়ে যাও আর সবচেয়ে ভালো পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। কাজেই হে বুদ্ধিমানেরা! আমার নাফরমানী করা থেকে বিরত থাকো। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৯৭)
আরেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি মক্কার জমিনে সীমালংঘন করে কোন অন্যায় কাজ করতে ইচ্ছা পোষণ করবে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করাব।- (সূরা হজ, আয়াত, ২৫)
ধৈর্য, তাকওয়া ও সদাচারের গুণ থাকা
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ছাওর ইবন ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে এই কাবা ঘরের ইচ্ছা করল অথচ তার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য নেই, তার হজ নিরাপদ নয়। ধৈর্য, যা দিয়ে সে তার মূর্খতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে; তাকওয়া, যা তাকে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখবে এবং সঙ্গী-সাথীর সঙ্গে সদাচার। ’ –(আল ইসতিজকার)