প্রতীকী ছবি

মৃত্যু অবধারিত। কেউ এর থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো (একদিন না একদিন) মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, চাই তোমরা সুরক্ষিত কোনো দুর্গে থাকো না কেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৮)

কোনও মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানের ওপর মৃতের গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করার অবশ্যক হয়ে যায়। কেউ মারা গেলে দ্রুতই এই কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। হাদিসে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 

এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ -(তিরমিজি ১/২০৬)


জানাজার দাফন-কাফন একজন মুসলমানের অধিকার। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক মুসলিমের ওপর অন্য মুসলিমের ছয়টি অধিকার রয়েছে—

এক. যখন কোনো মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয় তখন সালাম দেবে। দুই. কোনো মুসলমান ডাকলে সাড়া দেবে। তিন. সে তোমার কাছে সত্ পরামর্শ চাইলে তুমি তাকে সত্ পরামর্শ দেবে। চার. কোনো মুসলমানের হাঁচি এলে হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। পাঁচ. কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রূষা করবে। ছয়. কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে।’ -(মুসলিম, হাদিস : ২১৬২)

মৃতকে কবরে রাখা ও দাফনের শেষ পর্যন্ত যেসব করণীয়

কেউ মারা গেলে তার গোসল, জানাজার পর লাশ কবরে নেওয়ার সময় অর্থাৎ খাটিয়া বহন করে কবর পর্যন্ত নেওয়ার সময় চুপচাপ আখেরাতের চিন্তা করা উচিত। এসময় মনে মনে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা কাম্য। তবে এসময়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই, এবং মৃত্যের জন্য কোন আওয়াজ ছাড়া মনে মনে দোয়া করতে হবে।

ইবনু জুরাইজ রহ. বলেন,  নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাজার পিছনে চলতেন তখন তিনি একেবারে চুপ থাকতেন এবং চিন্তায়  মগ্ন থাকতেন। -(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬২৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১১৩১৫)

হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জানাজার পিছনে যেন শব্দ না করা হয় এবং আগুন না নেওয়া হয়। -(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৫১৫)

সুনানে কুবরা বায়হাকী ও ইবনুল মুনযিরের আলআওসাতের এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, সাহাবায়ে কেরাম জানাজার পিছনে যাওয়ার সময় কোনো আওয়াজ করতেন না। -(সুনানে কুবরা, বায়হাকী ৪/৭৪; আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/৪২২ (৩০৩৪)

এই হাদীসগুলোর আলোকে ফকীহগণ বলেছেন, জানাজার পিছনে চলার সময় মূল কাজ হল আখেরাত ও পরকালের চিন্তাভাবনা করা। জিকির করতে চাইলে তা আওয়াজ ছাড়া করতে হবে। -(বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭।)

তবে লাশ কবরে রাখার সময় একটি দোয়া পড়তে হবে। হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা তোমাদের মৃতদের কবরে রাখবে, তখন তোমরা বলবে- 

আরবি : 

بسم الله وعلى ملة رسول الله

উচ্চারণ :  ‘বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’। (মুস্তাদরেক, ২/৫২৩, সুনানে তিরমিজি, ১/২২৭, মুসনাদে আহমাদ, ২/২৭ সুনানে ইবনে মাজা, ১/১১১)


লাশ কবরে রাখার পর মাটি দেওয়ার সময় আরেকটি দোয়া পড়তে হবে। হজরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, যখন নবীজির মেয়ে উম্মে কুলসুমকে কবরে রাখা হলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়লেন-

আরবি : 

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُومٍ ابْنَةُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقَبْرِ. قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” {

উচ্চারণ :  ‘মিনহা খালকনাকুম, ওয়াফীহা নুয়ীদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’। (সুরা ত্বহা : আয়াত , ৫৫) (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২১৮৭, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩৪৩৩, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৬৭২৬, জামেউল মাসানীদ ওয়াস সুনান, হাদীস নং-১১০২৪, মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪২৩৯)


মাটি দেয়া শেষ হবার পর পড়বে-

আরবি : 

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, আল্লা-হুম্মা সাববিতহু। অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্‌ আপনি তাকে (প্রশ্নোত্তরের সময়) স্থির রাখুন।

এছাড়া মৃতের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনামূলক এবং তার কবরের প্রশ্ন উত্তর সহজ হবার জন্য যেকোন দোয়াই পড়া যাবে। উসমান ইবনু আফফান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন স্থির থাকে সেজন্য দোয়া করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২২১)