হজে যাওয়ার আগে যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। শারীরিক এবং আর্থিক সক্ষমতার সমন্বয়ে এই ইবাদত পালন করা হয়। কোনও ব্যক্তির নিজের মৌলিক খরচ বাদে হজের মৌসুমে মক্কায় যাওয়া-আসা-থাকার একান্ত প্রয়োজনীয় খরচ এবং এই সময়ে পরিবারের ভরণপোষণের প্রয়োজনীয় খরচ জমা থাকলে তার উপর হজ ফরজ হয়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এই ঘরের হজ করা মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার।’ (সুরা আল ইমরান: ৯৭)
বিজ্ঞাপন
হজের ঘোষণা সম্পর্কিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটের পিঠে (সওয়ার হয়ে), তারা আসবে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে। (সুরা হজ, আয়াত, ২৭)
প্রতি বছর হজে অংশ নিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ একত্রিত হন সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মোট পাঁচদিন চলে হজের মূল কার্যক্রম। হজ শুরুর প্রায় এক দেড় মাস আগে থেকে সৌদি আরবে উপস্থিত হন হজযাত্রীরা।
হজ সফরের আগে অগ্রিম প্রস্তুতি হিসেবে আলেমদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখানে হজের প্রস্তুতিমূলক কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো-
সব ধরনের খরচ ও হজ প্যাকেজ সম্পর্কে ধারণা রাখা
হজের সফরে উড়োজাহজাভাড়া, বাসাভাড়া, হজের সময় মিনায় তাঁবুতে থাকা কিংবা না-থাকা ইত্যাদির খরচ, প্যাকেজের সুবিধাদি দেখে, শুনে, বুঝে এবং আগে থেকে জেনে নিতে হবে।
এছাড়াও প্যাকেজের অধীনে সৌদি আরবে অবস্থানের মেয়াদ কত দিন, কোথায় কত দিন অবস্থান এবং তা কীভাবে, বিস্তারিত জানতে হবে। প্যাকেজের অধীনে মুয়াল্লিম কী কী সেবা দেবেন, তাও জেনে নিন। কারণ এসব নিয়ে হজের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বির্তক হয়।
মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা
ইসলামের যেসব ইবাদতে শরীরিক সক্ষমতা জরুরি হজ তার অন্যতম। হজ ফরজ হওয়ার পাঁচটি শর্তের মধ্যে শারীরিক সক্ষমতাও একটি। হ
জের সফরে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়। যাতায়াতের জন্য যখন-তখন যানবাহন পাওয়া যায় না। তাই কাবা শরীফ তাওয়াফ, সাঈ, মিনা, জামারায় পাথর মারা, মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হজের তাওয়াফ, সাঈ করতে প্রচুর হাঁটাচলা করতে হয়।
এসবের জন্য মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা জরুরি। এ বিষয়টি হজের প্রস্তুতির জন্য অন্যতম বিবেচিত।
নিয়তের শুদ্ধতা
হজের জন্য নিয়তের শুদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনও ধরনের আমল কবুল হওয়ার প্রথম শর্ত খাঁটি অন্তরে নিয়ত করা। হাদিসে এসেছে-‘নিশ্চয় নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল’ (বুখারি : হাদিস ১)।
তাই দুনিয়ার যশখ্যাতির মোহে না পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজের নিয়ত করা। হজকে পার্থিব যেকোনও ধরনের খ্যাতির বাইরে রাখতে হবে। অন্যথায় তা রিয়া বা লোক দেখানো আমল বলে গণ্য হবে। হাদিসে রিয়াকে ছোট শিরক বলা হয়েছে। ছোট শিরক বুকে ধারণ করে হজ করলে হজ কবুল না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এমন হজ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এমন হজের তওফিক দাও, যা হবে রিয়া ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা হতে মুক্ত।’ (ইবনে মাজা : হাদিস ৮৯০)
হজের নিয়ম-কানুন জেনে নিন
হজ করতে ইচ্ছুক এবং প্রথমবারের মতো হজ করতে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তির জন্য অবশ্যই হজের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখা জরুরি।
হজ সফরে কোথায় কখন কী আমল করতে হবে, কোন আমল করা ফরজ, কোন আমল ওয়াজিব, কোন আমল সুন্নত ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। একই সঙ্গে হজের তালিবায়াসহ গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো মুখস্থ করে নিতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন হজ প্যাকেজের অধীনে এজেন্সির পক্ষ থেকে মুয়াল্লিম বা হজ গাইড নির্ধারণ করা থাকে। তবে অন্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজের আমল নিজেই করতে পারাটা উত্তম।
এছাড়াও হজের সময় বিপুল সংখ্যক জনসমাগমের কারণে তাৎক্ষণিখ মুয়াল্লিমকে খুঁজে না পেলে হয়তো ঝামেলায় পড়তে হবে পারে। মূল ইবাদত পালনেও সমস্যা হতে পারে, এমনকি এর কারণে হজ অসম্পূর্ণও থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখন থেকে বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জরুরি বিষয়গুলো জেনে নেওয়া উচিত।
আশপাশে কোথাও হজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কিনা খোঁজ নিয়ে, সেখানে যোগাযোগ করে মাসআলাগুলো ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। সম্ভব হলে হজ-সংক্রান্ত বই পড়েও জেনে নেওয়া যেতে পারে।