ইসমে আজম কী, হাদিসে যা বলা হয়েছে
'ইসম' শব্দের অর্থ নাম আর 'আজম' শব্দের অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলার অনেক নাম রয়েছে। এসব নামের মধ্যে যে নামগুলো দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়, সেই নামগুলোকে 'ইসমে আজম' বলা হয়। ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করা হলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
তবে ইসমে আজম আল্লাহর নির্দিষ্ট কোনো নাম কিনা; এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস ও বিজ্ঞ আলেমদের থেকে প্রায় ৪০টি মন্তব্য পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) বলেন, "ইসমুল আজম হলো 'আল্লাহ' শব্দ। তবে শর্ত হলো তা পূর্ণ একাগ্রতা ও এখলাসের সঙ্গে বলতে হবে'।" (মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৬)
ইসমে আজমের ফজিলত
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে নিম্নোক্ত শব্দমালার মাধ্যমে দোয়া করেছিলেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لك الْمَنَّانُ بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হা'মদু লা-ইলা-হা ইল্লা-আনতা ওয়াহ'দাকা লা-শারিকা লাকাল মান্না-ন, ইয়া বাদিআ'স্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম।'
অর্থ :, হে আল্লাহ! আপনার নিকট এই অসীলায় চাই যে, (আমি বলি) কেবল আপনারই প্ৰশংসা, আপনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, আপনি এক, আপনার কোন শরীক নেই, অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী হে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে মর্যাদা ও সম্মান দানের অধিকারী। হে চিরঞ্জীব ও সর্বনিয়ন্তা।
তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, ''তুমি জানো, তুমি কি দিয়ে দোয়া করেছ? তুমি দোয়া করেছ 'ইসমে আজম' দিয়ে, যা দ্বারা দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন এবং তা দ্বারা কিছু চাইলে আল্লাহ তা প্রদান করেন।'' (সুনানে তিরমিজি : ৩৫৪৪, আবু দাউদ ১৪৯৫, নাসাঈ, ১৩০)
হজরত আসমা বিন ইয়াজিদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, 'ইসমে আজম এই দুটি আয়াতের মধ্যে নিহিত। সুরা বাকারার ১৬৩ নম্বর আয়াত
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِي
এবং সুরা আল ইমরানের ১ নম্বর আয়াত
اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ।' (সুনানে আবি দাউদ : ১৪৯৬)
কোনো কোনো সাহাবী থেকে থেকে বর্ণিত হয়েছে , الْحَيُّ এবং الْقَيُّومُ আল্লাহর ইসমে আজ’যম। ইমাম রাজি রহ. ও আল্লামা নববী রহ. এ মতকেই গ্রহণ করেছেন। (ফাতাওয়া উসমানী ১/২৬৪)
ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে শুনেছি, আল্লাহ তাআলার ইসমে আজম হল, اللَّه (আল্লাহ)। (আত-তাকরীর ওয়াত-তাহবীর ১/৫) কেননা, এটি তাঁর সত্তাগত নাম। এছাড়া কোরআন মাজিদে এই নামটিই ২৬৯৭ বার এসেছে। এত বেশি তার অন্য নাম আসেনি।
এক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলেমদের বক্তব্য হলো, প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তায়ালার সব নামই আজিম তথা মহিমান্বিত। কোনো নামের উপর কোনো নামের আলাদা ফযিলত-মর্যাদা নেই। সুতরাং ইসমে আজম তথা আল্লাহ তায়ালার সকল নামের মধ্যে সবথেকে সম্মানিত কোনটি; এমন কোনো বিষয় নির্দিষ্টভাবে নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত নয়।
যে সব নামকে হাদীস শরীফে ‘ইসমে আজম’ বলা হয়েছে- এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এই নামগুলো আল্লাহ তায়ালার আজিম (মহান) নামের মধ্য থেকে। বিশেষভাবে এই নামগুলোর মাধ্যমে দোয়া কবুল হয়।
এ কারণেই ইসমে-আজম সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। সুতরাং নিশ্চিত ও সর্ব সম্মতভাবে কোনো একটি নামকে ‘ইসমে আজম’ হিসাবে আখ্যা দেয়া কঠিন এবং জটিল বিষয়! (ফাতাওয়া উসমানী ১/২৬৪, ২৬৫)
আমাদের দেশের প্রচলিত অজিফার বইগুলোতে অনেক বানোয়াট নামকে ইসমে আজম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেগুলো আসলে ইসমে আজম নয়। তাই এসব ভুল তথ্যের পেছনে না পড়ে বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ ও মানসম্মত বই-পুস্তক থেকে ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণ করাই বাঞ্ছনীয়।