ঈদযাত্রায় নিরাপদ থাকতে যেসব আমলের প্রতি খেয়াল রাখবেন
ঈদ মানে আনন্দ। পবিত্র ঈদুল ফিতর প্রতি বছর আমাদের জন্য নিয়ে আসে আনন্দের নতুন বার্তা। সেজন্য বলা যায়, রোজাদারদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদ এক মহা উপহার। এটি রোজাদারের জন্য উপহার হলেও এই অনাবিল আনন্দ সবার জন্য অবারিত। ঈদ আমাদের জাতীয় উৎসব।
প্রতি বছর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যান ঘরমুখো মানুষ। ঈদের সময়গুলোতে একসঙ্গে কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন রাজধানী ছাড়েন। যা বছরের অন্য যেকোনও সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। অনেক সময় ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতেও পড়তে হয়। তাই ভোগান্তির মুখোমুখি না হতে শরীয়ত নির্দেশিত কিছু আমলের প্রতি খেয়াল রাখা যেতে পারে। এতে ঈদযাত্রা সহজ হবে বলে আশা করা যায়। এখানে এমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো-
বিজ্ঞাপন
১. সফরকালে নানা রকম বিপদাপদের আশঙ্কা থাকে। সে জন্য যানবাহন, আসবাবপত্র ও যাত্রাপথ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব ভালো করে খোঁজখবর নিন।
২. যাত্রার সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে ভালো কিছু রেখে যায় না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, হাদিস : ৪৯১২)
৩. যতটা সম্ভব একাকী সফর পরিহার করুন। একাকী সফর নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। সুতরাং ভালো কাউকে সফরসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন। মহানবী (সা.) বলেছেন, সঙ্গীহীনতায় কত কী সমস্যা! আমি যেমন জানি, তোমরাও জানলে রাতে একাকী কখনো সফর করার সাহস পেতে না। (বুখারি, হাদিস: ২৯৯৮)
৪. অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে গ্রুপ লিডার নির্বাচন করুন। যিনি পরামর্শের ভিত্তিতে সফরের দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করবেন। অন্যদের কাজ হবে তার নির্দেশনা মেনে চলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরে তোমরা যদি তিনজন হও, একজনকে আমির নিযুক্ত করো। (আবু দাউদ, হাদিস, ২৬০৯)
৫. সাতসকালে যাত্রা করুন। সাহাবি সাখর আল গামিদি ব্যবসায়ী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, ‘ভোরবেলাকে আমার উম্মতের জন্য বরকতে পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে।’ এর পর থেকে সাখর গামিদি (রা.) সকাল সকাল ব্যবসায় নেমে পড়তেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস : ৪৭৫৪)
৬. পরিচিত ও প্রিয়জনদের থেকে সুন্দরভাবে বিদায় নিন। বিদায় দানকারী বলবেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া-পরহেজগারি দান করুন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করুন আর যেখানেই থাকো তোমাকে তিনি কল্যাণ দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৪) আর সফরকারী বলবেন, আল্লাহর নিরাপত্তায় তোমাকে অর্পণ করছি, তিনি অনন্য আস্থাভাজন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯২১৯)
৭. সফরের জিকির এবং দোয়াগুলো পড়ুন। গাড়িতে উঠে পড়বেন, ‘সুবহানাল্লাজি সাখখরা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন।’
অর্থাৎ ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি এটিকে আমাদের আয়ত্তাধীন করেছেন, অথচ আমরা একে নিজেরা আয়ত্তাধীন করতে পারতাম না।’ আর সফর শেষে পড়বেন, ‘আ-ইবুনা, তা-ইবুনা, আবিদুনা, লি রাব্বিনা হামিদুন।’
অর্থাৎ ‘আমরা ফিরে এসেছি, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, আনুগত্যের প্রত্যয় নিয়ে এবং আল্লাহর প্রশংসায় মুখর হয়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৪২)
৯. যাত্রা সুন্দরভাবে শেষ হওয়ার পর প্রথমে নিজ এলাকার মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। (বুখারি, হাদিস : ২৬)