রমজানের এই দিনে বিদায় নিয়েছিলেন মহীয়সী খাদিজা রা.
রাসুলের হাদিসে বর্ণিত বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চার নারীর একজন হজরত খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা.। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, জগতের সব নারী থেকে চারজন নারী অনুকরণের জন্য যথেষ্ট- মরিয়ম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৭৮)
শ্রেষ্ঠ নারী হওয়ার পাশাপাশি নারী-পুরুষের মাঝে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্যও পেয়েছিলেন হজরত খাদিজা রা.-এর।
বিজ্ঞাপন
হজরত খাদিজার বিয়ের পনের বছর পর বিশ্বনবি নবুয়ত লাভ করেন। হেরায় গুহায় হজরত জিবরিল আমিনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়িছিলেন খাদিজা রা. শান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছিলেন তাকে।
আশ্বাস দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, মুহাম্মদ! আপনি কখনো কারো মন্দ কিছু চাননি, বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন, অসহায়ের সহায় হয়েছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনার রব আপনাকে কখনো বিপদে ফেলবেন না।
এরপর খাদিজা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনু নাওফিল (অথবা নাওফাল) ইবনু আবদুল আসা’দ ইবনু আবদুল উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে খ্রিস্টান ধর্মের পণ্ডিত ছিলেন। খাদিজা (রা.) তাকে বললেন, হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন। ’ ওয়ারাকা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাতিজা! তুমি কী দেখেছো?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সবই খুলে বললেন।
তখন ওয়ারাকা নবীজিকে বললেন, ইনি সে দূত যাকে আল্লাহ মূসা (আ.)-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। আফসোস! আমি যদি সেদিন যুবক থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কাওম তোমাকে বের করে দেবে।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অতীতে যিনিই তোমার মত কিছু নিয়ে এসেছেন তার সঙ্গেই শত্রুতা করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করব।’ এর কিছুদিন পর ওয়ারাকা(রা.) ইন্তেকাল করেন।
এরপর প্রকাশ্য ইসলামের দাওয়াত শুরু হলে মক্কার কাফের-মুশরিকেরা নবীজির সঙ্গে কঠোর শত্রুতা আরম্ভ করে। এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় মুশরিকেরা।
এই সময়গুলোতে নবীজির পাশে থেকে সাহস দিয়েছেন খাদিজা রা.। ইসলামের জন্য তিনি নিজের সব সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছিলেন।
বিয়ের সময় নবীজি ও খাদিজা রা.-এর বয়সের ব্যবধান ছিলো ১৫ বছরের। তখন খাদিজা রা.-এর বয়স ৪০ বছর, নবীজির ছিলো ২৫ বছর। তাদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিলো ২৫ বছর। মহানবী (সা.)-এর সব সন্তানসন্ততি তারই গর্ভজাত।
হজরত খাদিজা রা. প্রথমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, তার নাম আল-কাশিম। এরপর তার চারটি কন্যা সন্তান হয়। তাদের নাম হলো, জয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম এবং ফাতিমা। খাদিজার সর্বশেষ সন্তানের নাম আবদুল্লাহ।
নবুয়তের দশম বছরে ১০ রমজানে ইন্তেকাল করেন ইসলামের ইতিহাসের এই মহীয়সী নারী।
এনটি