প্রতীকী ছবি

রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ইবাদতগুলোর একটি। নিজেকে পরিশুদ্ধ এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র বানানোর মাধ্যম। রোজার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে শরীর সুস্থ রাখা আবশ্যক। শারীরিক দুর্বলতার কবলে পড়লে রোজা রাখাই সম্ভব হবে না। এর ফলে রমজান মাসের বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

ইসলাম কখনো মানুষকে ক্ষতির সম্মুখীন করে ইবাদত করতে বলে না, অথবা স্বভাববিরোধী কোনও কিছু মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয় না। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ..আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটাই চান, কঠিন করতে চান না...।’ -(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

যেকোনও বিধান পালনের আগে এ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে রাখা আবশ্যক। যেন আল্লাহর হুকুম পালনকে বোঝা মনে না হয়, বরং তা আত্মশুদ্ধি ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম হয়ে উঠে। তাই রোজা রেখে সুস্থ থাকতে এ সম্পর্কিত নবীজির নির্দেশনাগুলো জেনে রাখা আবশ্যক।

বিলম্বে সেহরি খাওয়া

রোজা রাখার নিয়তে সেহরি খাওয়া সুন্নত। সেহরি অত্যন্ত বরকতময় খাবার। সেহরি খাওয়ার অনেক ফজিলত হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত আছে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯২৩)

পেটে ক্ষুধা না থাকলে দু-একটি খেজুর খেয়ে নেওয়া উত্তম অথবা অন্য কোনো জিনিস খেয়ে নেবে। তবে বিলম্বে সেহরি খাওয়া উত্তম। আগে খাওয়া হয়ে গেলে শেষ সময়ে কিছু চা, পানি, পান ইত্যাদি খেলেও সেহরির ফজিলত অর্জিত হবে। (হেদায়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৮৬)

আমর ইবনে মাইমুন (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) ও সাহাবিরা সবার আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সবার চেয়ে দেরিতে সাহরি খেতেন। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৫৯১)

তাড়াতাড়ি ইফতার করা

ইফতারের সময় হলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা ভালো। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮২১; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৩৮)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও নাসারাদের অভ্যাস হলো দেরিতে ইফতার করা। ’ –(সুনানে আবু দাঊদ, হাদিস: ২৩৫৩)

আরেক হাদিসে এসেছে, ‘তিনটি বিষয় নবী চরিত্রের অংশ। সময় হওয়া মাত্র ইফতার করা, সাহরি শেষ ওয়াক্তে খাওয়া এবং নামাজে ডান হাত বাম হাতের ওপর রাখা। ’ -(তাবারানি, মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদিস: ২৬১১)

লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখা নিষিদ্ধ 

লাগাতার রোজা রাখলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই সারা বছর লাগাতার রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। 

আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সাওমে বিসাল তথা লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। সাহাবারা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো তা করে থাকেন? 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা আমার মতো হতে পারবে না, আমাকে আমার রব পানাহার করান। তার পরও কোনো কোনো সাহাবি অতি আগ্রহে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে লাগাতার না খেয়ে রোজা রাখতে শুরু করেন। একাধারে কয়েক দিন এভাবে যাওয়ার পর ঈদের চাঁদ উঠে যাওয়ায় সবাই রোজা সমাপ্ত করতে বাধ্য হন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সেসব সাহাবিকে ধমকিস্বরূপ বলেন, যদি চাঁদ না উঠত, তাহলে আমি আরো দীর্ঘ করতাম। (মুসলিম, হাদিস : ১১০৩)

এছাড়া সারা বছর রোজা রাখা সম্পর্কিত এক হাদিসে আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সবসময় রোজা রাখ এবং রাতভর নামাজ আদায় কর। আমি বললাম জী, হ্যাঁ।

তিনি বললেন : তুমি এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। যে ব্যক্তি সারা বছর রোজা রাখল সে যেন রোজাই রাখল না। (প্রতি মাসে) তিনদিন রোজা রাখা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য। 

আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশি রাখার সামর্থ্য রাখি। তিনি বললেন: তাহলে তুমি ‘সাওমে দাউদ’ পালন কর। তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন। (ফলে তিনি দুর্বল হতেন না) এবং যখন তিনি শত্রুর সম্মুখীন হতেন তখন পলায়ন করতেন না। ( বুখারি, ১৯৭৮)

রোজায় শিঙা লাগানো নিষেধ

রোজা রেখে শারীরিক দুর্বলতা ও কষ্ট থেকে রক্ষা পেতে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের রোজা অবস্থায় শিঙা লাগাতে নিষেধ করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রোজা অবস্থায় শিঙা লাগাতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যেন আমাদের কষ্ট না হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৭৫)

রোজা রেখে ভারি কাজ না করা

রোজা রেখে ভারী কাজ না করা উচিত। কারণ এমন ভারী কাজ করা মাকরুহ; যার কারণে রোজাদার অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে রোজা ভেঙে ফেলার অবস্থা সৃষ্টি হয়। সুতরাং কেউ যদি রক্তদানে অধিক ক্লান্ত হয়ে রোজা রাখতে পারবে কি-না; এ ব্যাপারে সন্দিহান হয়, তবে রক্ত দেয়া মাকরুহ।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ সময় কাজের চাপ কমানোর কথা বলেছেন।বর্ণিত হয়েছে, রমজানে যে ব্যক্তি তার অধিনস্তদের কাজ হালকা করে দিবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন (শুআবুল ইমান; বায়হাকি)

এনটি