রমজানের আগমুহূর্তের প্রস্তুতি যেমন হবে
রহমত, বরকত মাগফেরাতের মাস রমজান। এ মাস কোরআন নাজিল ও আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের মাস। রমজানে বেশি বেশি ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের প্রতি, যাতে করে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।' (সুরা বাকারা:১৮৩)
রমজানকে ঘিরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যেতো। রজব ও শাবান মাস থেকেই তারা রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। এই সময় থেকেই বরকত লাভের দোয়া করতেন। শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যেক মুমিনের উচিত আগে থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং পবিত্র এই মাসে যেন বেশি বেশি ইবাদত পালন করা যায় তাই রমজানের আগমুহুর্তে বেশ কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত।
রমজানের দু-এক দিন আগে রোজা না রাখা
রমজানের প্রস্তুতিমূলক মাস বলা হয় শাবানকে। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে হাদিসে। তবে শুধু রমজানের দু-এক দিন আগে রোজা না রাখা উচিত। কিন্তু কেউ আগে থেকে রোজা রাখতে অভ্যস্ত হলে তার ব্যাপার আলাদা।
এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রমজানের এক দিন কিংবা দুই দিন আগে অবশ্যই রোজা না রাখে। তবে হ্যাঁ, কারও (আগে থেকেই) এদিনে রোজা রাখার অভ্যাস থাকলে সে ওই দিনেও রোজা রাখতে পারে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮১৫; মুসলিম, হাদিস : ২৫৭০)
ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
রমজান মাসের প্রধান ইবাদত হলো হলো রোজা। রোজার জন্য যেহেতু একজন মানুষকে সুবহে-সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়, তাই কোনও ধরনের অসুস্থতা থাকলে রমজানের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রমজানের রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেওয়া উচিত।
জরুরি মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে জেনে নেওয়া
শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। এর পাশাপাশি নামাজসহ অন্যান্য ফরজ, সুন্নত ও নফল ইবাদত পালন করাও আবশ্যক। অন্যথায় রোজার মূল উদ্দেশ্য অর্জন হবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘শুধু পানাহার পরিত্যাগের নাম রোজা নয়। বরং প্রকৃত রোজা হচ্ছে, রোজা রেখে অনর্থক কথা ও গুনাহ পরিহার করা। যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় কিংবা ঝগড়া করতে চায়, তখন বল, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’ (ইবনে খুজাইমা : ২৪২)
তাই প্রত্যেকের উচিত রোজা ভঙ্গকারী কোনও বিষয় যেন ঘটে না যায় আগে থেকে এসব জেনে নেওয়া এবং রমজানে পালনীয় ইবাদত-বন্দেগি সংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলো কোনও বইপত্র বা আলেমের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেওয়া।
রমজানের পারিবারিক প্রস্তুতি
রমজান বেশি বেশি ইবাদত পালন ও সওয়াব অর্জনের মাস। ব্যক্তি, পরিবার সবাই যেন এ মাসের বরকত লাভ করে সেজন্য চেষ্টা করা উচিত। পরিবারের কোনো সদস্য কোরআন তিলাওয়াত করতে না পারলে, তাকে শেখানোর ব্যবস্থা করা। রমজানে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করা।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। ’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
রমজানের অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
রমজানপূর্ব সময়ে অর্থনৈতিকভাবেও প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। যেমন— রমজানে সাহরি-ইফতার, অন্যকে সহযোগিতা করা, জাকাত আদায় ইত্যাদি খাত তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কেনা থেকে বিরত থেকে এসব জরুরি খাতে অর্থ ব্যয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিদসের দাম বাড়িয়ে বাড়তি ফায়দা লোটার চেষ্টা না করা। উমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকে রাখে (কৃত্রিম উপায়ে খাদ্য গুদামজাত করে সংকট তৈরি করে) আল্লাহ তার ওপর মহামারি ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৫)
এনটি